সিবিএন:
পাঁচদিনের উৎসবমুখর নানা আরতির মাধ্যমে পূজা শেষে প্রতিমা বিসর্জন দিয়েছেন হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন। শুক্রবার বিশ্বের দীর্ঘতম কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের বালিয়াড়িতে সকল ধর্মের মানুষের উপস্থিতিতে সম্প্রীতির সেতু বন্ধনে এ বিসর্জন অনুষ্ঠিত হয়। শেষ আরতী, ঢোলক বাদ্যির তালে তালে ‘মা দুর্গা কি জয়’ এই শ্লোগানে মুখরিত হয় সমুদ্র পাড়। শ্রদ্ধা ভালবাসায় মাতৃবিদায়ের বিষাদপূর্ণ অশ্রু অঞ্জলির মাধ্যমে সাগরের জলে দেবী দুর্গাকে বিদায় জানায় পূজার্থীরা।

বিসর্জন উপলক্ষ্যে সৈকতের লাবনী পয়েন্টের খোলা মঞ্চে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট রনজিত দাশের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক বাবুল শর্মার সঞ্চালনায় বিসর্জন অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে আসেন কক্সবাজার সদর আসনের সাংসদ সাইমুম সরোয়ার কমল, জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন, পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন, কক্সবাজার পৌর মেয়র ও জেলা আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান, জেলা মহিলা আওয়ামীলীগ সভাপতি কানিজ ফাতেমা আহমদ প্রমূখ।

বক্তারা বলেন, বিগত একদশক ধরে প্রতিমা বিসর্জনও কক্সবাজারের পর্যটনের একটি অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিসর্জনকে লক্ষ্য করে সকল ধর্মের মানুষ অসাম্প্রদায়িক চেতনায় একিভূত হয়ে সৈকতের বালিয়াড়িতে জড়ো হয়। আজ তেমনটি হয়েছে, যা অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি।

বিসর্জনের লক্ষ্যে শহর ও বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিমাগুলো বেলা দুটা থেকে সৈকতের বালিয়াড়িতে আনা হয়। বাদ্যের তালে তালে পূজার্থী আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা প্রতিমা ও নিজেদের মাঝে রং ছিটিয়ে মা দূর্গাকে বিদায়ী আনন্দ দেয়ার কসরত করে। বিসর্জন নিয়ে বক্তব্যের পর মঞ্চে শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। সেখানে গান পরিবেশন করেন স্থানীয় ও খ্যাতনামা শিল্পীরা। বিসর্জনে সনাতন ধর্মালম্বীদের সাথে বিভিন্ন ধর্মালম্বী মিলেমিশে লাখো জনতার উপস্থিতি সৈকতকে সরগরম করে তুলে।

জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বাবুল শর্মা জানান, ১৪ অক্টোবর মহাপঞ্চমী তিথিতে দেবীর বোধনের মধ্যমে শুরু হয় শারদীয় দুর্গোৎসব মহাষষ্টীর পর সপ্তমী, অষ্ঠমী ও নবমীর শেষে ১৯ অক্টোবর মহাদশমীতে সৈকতে বসে বিসর্জন মেলা। মনোমুগ্ধকর বিসর্জন অনুষ্ঠানে দেশী-বিদেশী পর্যটকসহ লাখো মানুষ উপস্থিত হয়। উখিয়া, চকরিয়া, সদরসহ বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে প্রায় দেড়শতাধিক প্রতিমা সৈকতে বিসর্জন দেয়া হয়।

কক্সবাজার জেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ কর্মকর্তা মো. রইস উদ্দিন মুকুল জানান, হিন্দু সম্প্রদায়ের বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব এবং বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের প্রবারণা পূর্ণিমায় প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা উপহার হিসেবে পাঁচ কোটি ১০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। দূর্গাপূজায় ৩০১ মন্ডপের বিপরীতে ১৫০ মেট্রিকটন চাউল বরাদ্ধ দিয়েছে সরকার। হিন্দু সম্প্রদায়ের ১২ হাজার ২০ পরিবারে পাঁচ কোটি ১০ হাজার টাকা উপহার দেয়া হয়েছে।

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন জানান, নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তায় সবার সহযোগিতায় দূর্গাপূজা সম্পন্ন করতে পেরেছি আমরা। পুলিশের পাশাপাশি শৃংখলা বাহিনীর অন্য বিভাগের সদস্য এবং রাজনৈতিক ও সামাজিক নেতৃবৃন্দরা উৎসবমুখর পরিবেশে পূজা সম্পন্নে অবদান রাখেন। সকল ধর্মের মানুষ অসাম্প্রদায়িক চেতনায় একিভূত হয়ে সৈকতের বালিয়াড়িতে বিসর্জন অনুষ্ঠান উপভোগ করেন।