শাহেদ মিজান, সিবিএন:
মহেশখালীর তালিকাভুক্ত অর্ধশতাধিক সশস্ত্র সন্ত্রাসী ও জলদস্যু র‌্যাবের কাছে আত্মসমর্পণ ও তাদের অবৈধ অস্ত্র জমা দেবে। ইতিমধ্যে তারা আইনশৃঙখলা বাহিনীর সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। আগামীকাল শনিবার (২০অক্টোবর) আনুষ্ঠানিকভাবে তারা অস্ত্র জমা দিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের কাছে আত্মসর্মপণ করবেন তারা। মহেশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

ওসি জানান, অপরাধজগত ত্যাগ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার জন্য দীর্ঘদিন যাবত কৌশলে অপরাধীদের উৎসাহ প্রদান করা হচ্ছিল। পুলিশ ও র‌্যাব যৌথভাবে এই প্রচেষ্ট চালিয়ে আসছিলো। তবে এর মধ্যে মধ্যস্থতা করছেন দু’টি বেসরকারি টেলিভিশনের দু’সাংবাদিক। এর দ্বীপের সশস্ত্র সন্ত্রাসী ও জলদস্যুরা আত্মসমর্পণে আগ্রহ প্রকাশ করে। আত্মসমর্পনে আগ্রহী হয়েছেন অর্ধশতাধিক সন্ত্রাসী ও জলদস্যু। ইতিমধ্যে তাদের তালিকা তৈরী করা হয়েছে।

তিনি আরো জানান, এসব সন্ত্রাসী ও জলদস্যুদের আত্মসমর্পণ উপলক্ষ্যে মহেশখালী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এক অনুষ্ঠান করা হবে। আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছাড়াও পুলিশের আইজি, র‌্যাবের ডিজি বেনজির আহমদ, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক, জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন, পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন, জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা, র‌্যাব-৭ এর কমান্ডার, কোস্টগার্ডের কমান্ডারসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।

র‌্যাব সূত্রে জানা গেছে, সুন্দরবনের প্রায় আড়াই শতাধিক জলদস্যু আত্মসমর্পণ করে। র‌্যাব ও যমুনা টিভির সাংবাদিক মোহসিনুল হাকিমের প্রচেষ্টায় এসব জলদস্যুরা আত্মসমর্পণ করেছিল। ওই সব জলদস্যুরা আত্মসমর্পণ করায় সুন্দরবনে শান্তি ফিরে এসেছে। সে সফলতার সূত্র মহেশখালী, কুতুবদিয়া, পেকুয়া, বাঁশখালী ও আনোয়ারার সন্ত্রাসী ও জলদস্যুদের আত্মসমর্পণ করানোর উৎসাহ বোধ করে র‌্যাব। আর তাতে সহযোগী এগিয়ে আসেন মহসিনুল হাকিম ও চ্যানেল ২৪’র সাংবাদিক আকরাম হোসাইন। তারা দীর্ঘ দিন ধরে এসব এলকার সন্ত্রাসী ও জলদস্যুদের বুঝিয়ে আসছিলেন। এতে অধিকাংশ সন্ত্রাসী আত্মসমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে আগ্রহী। এর মধ্যে মহেশখালীর অর্ধশতাধিক দাগী সন্ত্রাসী ও জলদস্যু আত্মসমর্পণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। তারা আনুষ্ঠানিকভাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আত্মসমর্পণ করবেন এবং একই সাথে অস্ত্রও জমা দেবেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শনিবার অর্ধশতাধিক সন্ত্রাসী ও জলদস্যু আত্মসমর্পণ করার প্রক্রিয়া সম্পন হলেও আরো অনেক সন্ত্রাসী আত্মসমর্পণে প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই তালিকায় পুরো উপজেলার সন্ত্রাসী রয়েছে। এর মধ্যে কালারমারছড়া, নোনাছড়ি, ঝাপুয়া, আঁধারঘোনা, হোয়ানকের কালাগাজিরপাড়া, কেরুনতলী, বড়মহেশখালীর দেবেঙ্গাপাড়া, ছোটমহেশখালী ও কুতুবজোম ও সোনাদিয়ার বেশ কিছু সন্ত্রাসী। এসব সন্ত্রাসীরা আত্মসমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনের ফিরে আসলে পুরো মহেশখালীতে শান্তি ফিরে আসবে প্রশাসন ও সাধারণ লোকজন আশা করছেন। তবে আশঙ্কাও থেকে যাচ্ছে, কারণ, কিছু সন্ত্রাসী আত্মসমর্পণ না করলে তাদের কারণে পুরো প্রক্রিয়ার সফলতা ভেস্তে যেতে  পারে।

কক্সবাজারের পুলিশ এবিএম মাসুদ হোসেন বলেন, উপকূলী অঞ্চলে সন্ত্রাসীদের দৌরাত্ম্য বেশি থাকে। সে কারণে স্বাভাবিকভাবে মহেশখালীতে বেশ কিছু ভয়ংকর সন্ত্রাসী ও জলদস্যু রয়েছে। তারা দীর্ঘদিন সাগরে দস্যুতা ও জনপদে নানা সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল। এতে পুরো এলাকায় সব সময় অশান্তি লেগেই ছিলো। সন্ত্রাসী ও জলদস্যুরা আত্মসমর্পণ ও স্বাভাবিক জীবনের ফিরে আসলে সেখানে শান্তি ফিরে আসবে। সাগরে দস্যুরা রোধ হবে।

তিনি আরো বলেন, কাজটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ ও স্পর্শকাতর। তবুও অপরাধজগত ছেড়ে আসা এসব পেশাদার জলদস্যু ও সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আগে দায়েরকৃত মামলাগুলো প্রত্যাহারের উদ্যোগ নেয়া হবে। আত্মসমর্পণকারীদের জীবিকা ও সরকারী অর্থয়ানে স্বপরিবারে পূর্ণবাসনের ব্যাবস্থা নেয়া হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের পুলিশ বিভাগের কয়েকজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা সশস্ত্র অপরাধী ও জলদস্যুদের আত্মসমর্পণের বিষয়টি নিয়মিত দেখভাল করছেন।

রাতে র‌্যাব-৭ এর কক্সবাজার ক্যাম্পের কোম্পানি কামান্ডার মেজর মেহেদী হাসান জানান, দাগী সন্ত্রাসী ও জলদস্যুরা আত্মসমর্পণ করলে কক্সবাজার সমুদ্র উপকূলকে অপরাধ ও জলদস্যু মুক্ত হবে। এখানকার মানুষ ও মৎস্যজীবীদের সার্বিক নিরাপত্তার নিশ্চিত হবে। ফল পর্যটকদের জন্যও নিরাপদ অভয়ারণ্য হবে মহেশখালী দ্বীপ ও এর সাগর উপকূল। পাশপাশি আইনশৃংখলা পরিস্থিতির ব্যাপক উন্নতি হবে বলে।