শাহীন মাহমুদ রাসেলঃ
সদরের পিএমখালী পাতলী এলাকায় খোলা জায়গায় পোল্ট্রি ফার্মের বর্জ্যে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ, পোল্ট্রি ফার্মের বর্জ্যে খোলা জায়গায় ফেলায় শত বিঘা কৃষি জমিতে চাষাবাদ বন্ধ হয়ে গেছে। মারাত্মক হুমকিতে রয়েছে এলাকার পরিবেশ। এমন অবস্থা খুব কমই চোখে পড়ে অন্যান্য এলকায়। কক্সবাজার জেলায় বিভিন্ন উপজেলার বেশ কয়েকটি পোল্ট্রি ফার্মের বর্জ্যে খোলা জায়গায় ফেলায় এমন বিপাকে পড়েছে কৃষকেরা।

সরেজমিনে দেখা যায়,সদর উপজেলার পিএমখালী ইউনিয়নের পাতলী গ্রামের রাস্তার পাশে জামালের পোল্ট্রি ফার্মের বর্জ্যে অবাধে ছেড়ে দিচ্ছে পাশের কৃষি জমিতে। ফার্মের পশ্চিম দিকে একটি পাকা রাস্তা, তার পাশেই তৈরি করে রেখেছে বিশাল বড় একটি বর্জ্যের খোলা গর্ত। এখানে পড়ছে পোল্ট্রির বর্জ্য, মরা মুরগি, পচা ডিম। এগুলো গর্তের পানিতে পচে আশপাশের ব্যাপক দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে। ওই রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন কয়েক হাজার গ্রামবাসী চলাচল করে এবং কক্সবাজারসহ খরুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ওই এলাকার শিক্ষার্থীদের চলাচলের একমাত্র রাস্তা এটি। রাস্তার পাশ দিয়ে হেঁটে গেলে দুর্গন্ধে নাক চেপে ধরলেও গন্ধে পেট ফুলে যাবে এতে কোন সন্দেহ নেই। পঁচা বর্জ্যে পানির সাথে মিশে প্রায় অর্ধশত বিঘা কৃষি জমিতে ছড়িয়ে পড়ে। দূষিত পানি কৃষকের পায়ে লাগলে ঘা ও চর্মরোগসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়। কৃষি জমিতে ফসল রোপন করলে তা নষ্ট হয়ে যায়। এই ভয়ে কৃষি জমিতে ফসল আবাদ বন্ধ করে দিয়েছে কৃষকরা।

একই চিত্র রামু উপজেলার অন্যান্য পোল্ট্রি ফার্মের। ফার্মগুলো হল ফতেখাঁরকূল ইউনিয়নের তেচ্ছিপুল এলাকায় চট্রগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পাশে রুহুল আমিন, জাফরের পোল্ট্রি ফার্ম, এই ফার্মটা এখন রেললাইনের অধিগ্রহণে পড়ে যায়। একই ইউনিয়নের লম্বরী পাড়া সড়কের পাশে সাইফুলের পোলট্রি ফার্ম, ঝিলংজা ইউনিয়নের দরগাহ পাড়া গ্রামের কালামের পোল্ট্রি ফার্ম, একই ইউনিয়নের লিংকরোড় মুহুরী পাড়ার পোল্ট্রি ফার্ম।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক কৃষক জানান, তেচ্ছিপুল রোড়ের সাইফুল পোল্ট্রি ফার্মের মালিক অনেক ক্ষমতাধর। তাদের বিরুদ্ধে মুখ খুললে অনেক সমস্যা হয়। এই পোল্ট্রির বর্জ্যের কারণে আমি পাঁচ বিঘা ধানের জমিতে চাষ করতে পারছি না। এমন আরও অনেকে তাদের জমিতে চাষ করতে পারছে না।

সচেতনত ব্যক্তিদের মতে, পোল্ট্রি ফার্মের বর্জ্যে খোলা জায়গায় ফেললে যেমন পরিবেশ দূষিত হয়, তেমনি বর্জ্যে পানিতে মিশে আবাদি জমিও নষ্ট করে। এ পোল্ট্রি শিল্পে দেশ যতটা লাভবান হওয়ার কথা ছিল, তার চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তার পাশাপাশি আমাদের মানবদেহে কঠিন রোগ বাসা বাঁধছে। বলছেন, বর্জ্যের গন্ধ বাতাসের সাথে মিশে মানবদেহে প্রবেশ করে। এতে শ্বাসকষ্ট ও ডায়রিয়াজনিত রোগ দেখা দিচ্ছে। দূষিত পানিতে নামলে শরীরে ঘা ও চর্মরোগসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হতে পারে কৃষকরা।

বিভিন্ন পোল্ট্রি ফার্মের মালিকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, তাদের নির্দিষ্ট কোন জায়গা নেই, যেখানে তারা পোল্ট্রির বর্জ্যে ফেলতে পারে। সবাই খোলা জায়গায় বর্জ্য ফেলছেন। অধিক অর্থ ব্যয় হয় বলে পাকা দালান করে বর্জ্যের গর্ত তৈরি করেন না তারা।

জামাল বলেন, আমার পোলট্রির বর্জ্য নির্দিষ্ট গর্তে ফেলা হয়। আমার জমিতে আমি বর্জ্য ফেলব, এতে কারও সমস্যা হওয়ার কথা না।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) হাবিব হাসান মুঠোফোনে বলেন, এই পোল্ট্রি ফার্মগুলোর বর্জ্য খোলা জায়গায় ফেলে কি না, তা তদন্ত করে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, পরিবেশের ক্ষতি হয় এমন কোন জায়গায় পোল্ট্রির বর্জ্য ফেলা যাবে না। আমরা খামারিদের নির্দিষ্ট গর্ত ব্যবহারে পরামর্শ দিয়ে থাকি।