আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
২ অক্টোবর তুরস্কে অবস্থিত সৌদি কনস্যুলেটে ঢোকার পর থেকেই নিখোঁজ হন সৌদি সমালোচক হিসেবে পরিচিত সাংবাদিক জামাল খাশোগি। তুরস্ক বলছে, কনস্যুলেট ভবনেই খাশোগিকে হত্যা করা হয়েছে।

একটি সূত্র দাবি করেছে, সৌদি সাংবাদিককে জীবিত অবস্থায় টুকরো টুকরো করা হয়। এরপরও তিনি সাত মিনিট বেঁচেছিলেন। অবশেষে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তিনি।

সূত্রটি বলছে, গত ২ অক্টোবর ইস্তাম্বুলের সৌদি কনস্যুলেটে প্রবেশের পর হত্যা করা হয় খাশোগিকে। এ সময় খাশোগির হাতে অ্যাপল ওয়াচের রেকর্ডিং চালু ছিল। মৃত্যুকালীন অ্যাপল ওয়াচের রেকর্ডকৃত কথোপকথন তাদের হাতে এসেছে।

বুধবার অজ্ঞাত ওই সূত্রের বরাত দিয়ে এ চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইল। সূত্রটি মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম মিডলইস্টআইকে কথোপকথন হাতে আসার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

সূত্রটি বলছে, খাশোগিকে টেনেহিঁচড়ে কনসাল জেনারেলের অফিস থেকে পাশের রুমের একটি টেবিলের কাছে নেয়া হয় এবং সেখানেই তাকে টুকরো টুকরো করা হয়। অডিও রেকর্ডে খাশোগির চিৎকার শোনা গেছে। তার চিৎকার বন্ধ করতে শরীরে চেতনানাশক ওষুধের ইনজেকশন দেয়া হয় এবং এর কিছুক্ষণ পর তিনি নীরব হয়ে যান।

সূত্রটির দাবি, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নয়, বরং খাশোগিকে হত্যা করার জন্যই ঘাতকরা এখানে এসেছিল। যখন তাকে টুকরো টুকরো করে কাটা হচ্ছিল তখন তার চিৎকার কনস্যুলেটের নিচে থাকা ব্যক্তিরা শুনতে পেরেছেন। যারা ওই সময় ওই ভবনের আশপাশে ছিলেন তারাই বিষয়টি স্বীকার করেছেন।

মঙ্গলবার তুর্কি পুলিশ বলেছিল, ইস্তাম্বুলের সৌদি কনস্যুলেটে খাশোগিকে হত্যা করা হয় এবং কেটে টুকরো টুকরো করা হয়। এ বিষয়ে তাদের যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ আছে। তুর্কি পুলিশের এ বিবৃতির পরিপ্রেক্ষিতে অজ্ঞাত এ সূত্রটি এ দাবি করল।

একইদিন তুরস্তের একজন সরকারি কর্মকর্তা সিএনএনকে জানিয়েছেন, পুলিশ বিশ্বাস করে খাশোগিকে নির্মমভাবে টুকরো টুকরো করা হয়েছে। এর আগে নিউইয়র্ক টাইমসও তাদের প্রতিবেদনে একই তথ্য দেয়।

তুরস্কে থাকা সৌদি কনস্যুলেট থেকে জামাল খোশেগির নিখোঁজ হওয়ার পর সবার সন্দেহের তির সৌদি আরবের দিকেই। তুরস্ক বলছে, খাশোগিকে কনস্যলুটের ভেতরেই হত্যা করার যথেষ্ট প্রমাণ তাদের হাতে আছে।

কনসল্যুটের ভেতরে খাশোগিকে হত্যার অভিযোগ জোড়ালোভাবে প্রত্যাখান করে আসছে সৌদি সরকার। যদিও আন্তর্জাতিক কিছু সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, খাশোগিকে হত্যার বিষয়ে স্বীকারোক্তি দিতে প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা। স্বীকারোক্তিমূলক ওই প্রতিবেদনে সৌদি আরব বলছে, জিজ্ঞাসাবাদের সময় মৃত্যু হয়েছে খাশোগির।

জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, খাশোগির সঙ্গে কী ঘটেছে, তা একবার স্পষ্ট হলে বিশ্বকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে তারা কীভাবে যথাযথ উপায়ে প্রতিক্রিয়া জানাবে।

এদিকে খাসোগি নিখোঁজ ইস্যুতে সৌদি আরবে অনুষ্ঠিতব্য আন্তর্জাতিক সম্মেলন বর্জন করার কথা ভাবছে ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্র। ইতোমধ্যে ওই সম্মেলন থেকে কয়েকজন শীর্ষ ব্যবসায়ী ও মিডিয়া গ্রুপ তাদের নাম প্রত্যাহার করে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

অবশ্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প খাশোগির নিখোঁজের নেপথ্যে একদল দুর্বত্ত হত্যাকারীর কথা বলেন। তবে তার এ মন্তব্যের পেছনে কোনও প্রমাণ দেখাতে পারেন নি তিনি। এ ঘটনায় সৌদি বাদশাহ সালমানের সঙ্গে ট্রাম্পের এক টেলিফোন আলাপ হয়। ওই ফোনালাপে খাশোগির নিখোঁজের ব্যাপারে কিছু জানেন না বলে জানিয়েছেন সালমান।

সৌদি রাজপুত্রের সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকা ট্রাম্প এর আগে বলেছেন, খাসোগির মৃত্যুর জন্য সৌদি আরব দোষী প্রমাণিত হলে যুক্তরাষ্ট্র কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা নেবে। তিনি জানান, এমন কিছু হলে তিনি খুবই মর্মাহত ও ক্ষুব্ধ হবেন।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে, জামাল খাশোগির হত্যাকাণ্ড প্রমাণ করছে, সৌদি রাজতন্ত্রের সমালোচনাকারীরা দেশের বাইরেও নিরাপদ নন।

এর আগে তুর্কি পুলিশের তদন্ত কর্মকর্তারা ইস্তাম্বুলের সৌদি কনস্যুলেট ভবনে তদন্ত করতে যান। যেখান থেকেই নিখোঁজ হন রাজ পরিবারের সমালোচক হিসেবে পরিচিত সৌদি সাংবাদিক জামাল খোশেগি।

এদিকে গত শুক্রবার পরিবারের বরাত দিয়ে তুরস্ক কর্তৃপক্ষ বলে, সৌদি কনস্যুলেট ভবনের ভেতরে খাসোগিকে হত্যার অডিও এবং ভিডিও প্রমাণ তারা পেয়েছে। তবে খাসোগির নিখোঁজের ঘটনায় নিজেদের কোনো সম্পৃক্ততা অস্বীকার করলেও বহির্বিশ্বের জোরালো অবস্থানের কারণে বেশ চাপে রয়েছে কঠিন রক্ষণশীল সৌদি আরব।

উল্লেখ্য, ব্যক্তিগত কাগজপত্র আনার জন্য গত ২ অক্টোবর তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেট ভবনে ঢোকেন সাংবাদিক জামাল খাসোগি। কিন্তু তিনি সেখান থেকে আর বেরিয়ে আসেননি। সৌদি রাজতন্ত্রের বিরোধিতাকারী খাশোগি ২০১৭ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রে স্বেচ্ছা-নির্বাসিত জীবন কাটাচ্ছিলেন। বিবাহ বিচ্ছেদের দলিল সংক্রান্ত কাজে তিনি তার হবু বউকে কনস্যুলেটের বাইরে রেখে ভেতরে প্রবেশ করেন।