শাহীন মাহমুদ রাসেল:

গত এক সপ্তাহ ভারি বর্ষণে কক্সবাজার শহরের ৬নং ওয়ার্ডের রবিবার (১৪ অক্টোবর) সাহিত্যিকাপল্লীতে আকস্মিক পাহাড় ধসে পড়ার খবর পাওয়া গেছে। এতে ছপুরা নামের এক মহিলার দোকানে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে হতাহতের কোন ঘটনা ঘটেনি।

স্থানীয় মোস্তফা নামের এক ছাত্র জানিয়েছেন, এর আগে বিভিন্ন সময় পাহাড়টি কর্তন করায় ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে ছিলো। এরপরে গত এক সপ্তাহ টানা বর্ষণ হওয়ায় পাহাড়ের মাঠি নরম হয়ে যায়। যার ফলে হঠাৎ পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটতে দেখা গেছে। এই নিয়ে জনমনে আতঙ্ক বিরাজ করছে। তাছাড়া ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে কয়েকটি নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে কক্সবাজার সদর, মহেশখালী, রামু উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।

বিভিন্নভাবে বিশ্লেষণ করে, মানুষখেকো পাহাড়, নাকি পাহাড়খেকো মানুষ, এ নিয়ে বাহাসের প্রয়োজন হয় না। দুটোই বাস্তব এখন। মানুষ অবলীলায় পাহাড় কেটে বসতি স্থাপন করছে সব বাধাবিপত্তি, আইনগত নিষেধাজ্ঞা, প্রাকৃতিক বিপর্যয় উপেক্ষা করেই। পাহাড় বুঝি তাই নেয় প্রতিশোধ। তাই পাহাড় ধসে প্রাণহানির ঘটনা নৈমিত্তিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। দৃশ্যমান এই যে, পাহাড় ধসের নেপথ্যে একশ্রেণীর দুর্বৃত্তের অবৈধভাবে পাহাড় ও এর গাছপালা কাটা, দখল ও বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহারই দায়ী।

সচেতনতার অভাবে পাহাড়ের পাদদেশে বসতি স্থাপন করে দরিদ্র মানুষ এর খেসরাত দিয়ে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত। স্থানীয় প্রশাসন থেকে শুরু করে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় পাহাড় কাটা, পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করা এবং মানুষের প্রাণহানি রোধে সচেতনতা সৃষ্টিতে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিয়েছে, বলা যায় না। একের পর এক পাহাড় ধসের ট্র্যাজিক ঘটলেও থামছে না মৃত্যুর মিছিল। চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, কক্সবাজারে একযোগে পাহাড় ধসের ঘটনায় গত বছর প্রাণ হারান অনেক জন।

পাহাড় কাটা বন্ধ, ঝুঁকিপূর্ণ বাসিন্দাদের উচ্ছেদ ও পুনর্বাসনের সিদ্ধান্ত কাগজে কলমেই সীমিত আছে। বাস্তবায়নের মুখ দেখা তো দূরের কথা, এ সংক্রান্ত কার্যকর কোন উদ্যোগই দৃশ্যমান নয়। কেবল বড় ধরনের দুর্ঘটনার পর মাইকিং, ঢাকঢোল পিটিয়ে কিছু বৈঠক ও সিদ্ধান্তে সুপারিশ গঠনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে যে পাহাড় ধস ও প্রাণহানি রোধে তা কাজে আসবে না। সর্বশেষ বান্দরবানের ঘটনা তা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। অন্যসব ক্ষেত্রের মতোই পাহাড় ধসেও প্রাণহানির পর সাময়িক দৌড়ঝাঁপ ও তাৎক্ষণিক কিছু পদক্ষেপ লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলে ভুক্তভোগী ও সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলরা সবকিছু ভুলে যান। বলার অপেক্ষা রাখে না।

এভাবে চলতে থাকলে পাহাড় ধসে প্রাণহানি, পরিবেশ ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি স্থায়ীভাবে রোধ করা সম্ভব হবে না। পাহাড় ধস রোধ ও প্রাণহানি শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনতে হলে বছরব্যাপী নিয়মিত পর্যবেক্ষণ চালিয়ে যেতে হবে। মনুষ্যসৃষ্ট সঙ্কটে গত চার দশকে জীবন দিতে হয়েছে ছয় শতাধিক মানুষকে।