প্রতিনিধি:
কক্সবাজার প্রত্যেকটা অঞ্চলে অবৈধ ইট, বালু, মাটি বহনকারী ট্রলি ও ট্রাক্টরের দৌরাত্ম্য দিন দিন বেড়েই চলেছে। এদের বেপরোয়া গতিতে চলাচলের কারণে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। ফলে অকালে ঝরে যাচ্ছে তরতাজা প্রাণ। কাউকে আবার সারা জীবনের মতো বরণ করতে হচ্ছে পঙ্গুত্ব। এছাড়া এগুলোর বিকট শব্দের কারণে ঘটছে শব্দ দূষণও।

ফলে পথচারীসহ জনসাধারণকে সার্বক্ষণিক আতংকের মধ্যে চলাচল করতে হচ্ছে। কিন্তু চোখের সামনে অবৈধ এই যানের অবাধ চলাচল দেখেও অদৃশ্য কারণে কার্যকর কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না সংশ্লিষ্ট প্রশাসন। ফলে তাদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

একাধিক প্রয়োজনীয়তা ও আধুনিক প্রযুক্তিতে কৃষিজমি চাষাবাদের জন্য কৃষকের কাছে ট্রাক্টর খুবই জনপ্রিয়। আর দেশের কৃষি উন্নয়ন তথা চাষবাসের কাজে ব্যবহার করার জন্যই সরকার বিদেশ থেকে ট্রাক্টর আমদানি করার অনুমতি দেয়। কিন্তু চাষাবাদের জন্য আমদানিকৃত এই ট্রাক্টর অবৈধ ট্রলি-ট্রাক বা নানা পরিবহনে রূপান্তিরত হয়ে মানুষের সর্বনাশ ঘটাতে শুরু করেছে। আবাদি জমি ছেড়ে দাবড়ে বেড়াচ্ছে গ্রামাঞ্চল, শহর ও বাজার কেন্দ্রিক সড়কগুলোতে। ড্রাইভিং লাইসেন্স সহ অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা না থাকায় শিশু-কিশোররাও অদক্ষভাবে এসব ট্রাক্টর অবাধে চালাবার সুযোগ পাচ্ছে। ফলে প্রতিনিয়ত ঘটছে সড়ক দুর্ঘটনা।

সরেজমিনে ঘুরে জানা যায়, কক্সবাজার জেলার সদর, রামু, উখিয়া, টেকনাফ, মহেশখালী, চকরিয়া উপজেলায় এই পর্যন্ত মহাসড়কে ছোট বড় প্রায় সাড়ে ১ শত দুর্ঘটনা ঘটেছে। এদিকে, বেপরোয়া গতি ও কানফাটা আওয়াজে চলাচলকারী এসব ট্রাক্টরের কারণে শহরের পাশাপাশি গ্রামগুলোতে ব্যাপকভাবে পরিবেশ দূষণ দেখা দিয়েছে। শব্দ ও বায়ুদুষণ এখন গ্রামের প্রতন্ত অঞ্চলেও পৌঁছে দিয়েছে এসব ট্রাক্টর ও ট্রলি। এছাড়া এই এদের বিশাল আকৃতির চাকার কারণে রাস্তার ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। পাকা রাস্তার পেভমেন্ট ভেঙে যাচ্ছে। চুর্নবিচুর্ন হচ্ছে ইটের রাস্তা। গ্রামের মেঠো পথগুলোর মাটি আলগা হয়ে জমিতে মিশে যাচ্ছে। বিলীন হতে শুরু করেছে মেঠো পথগুলো। সরকারের কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত রাস্তাঘাট বিনষ্ট হচ্ছে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের অর্থনৈতিক দিক।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সরকারি সুযোগকে কাজে লাগিয়ে এক শ্রেণীর আমদানিকারক অবাধে আমদানি করে ট্রাক্টর। আমদানিকারকরা এসব ট্রাক্টর বিক্রি করে ইটভাটার মালিক, মাটি ও বালু ব্যবসায়ী, কাঠ ব্যবসায়ী ও শিল্প মালিকসহ সাধারণ পরিবহন ব্যবসায়ীদের কাছে। ট্রাক্টর ও এর ড্রাইভারের জন্য কোনো লাইসেন্সের প্রয়োজন না হওয়ায় সহজেই এসব পরিবহন কিনে আনে ব্যবসায়ীরা। তারা এসব ট্রাক্টর কিনে কৃষি কাজের পরিবর্তে ব্যবহার করছে পরিবহন কাজে। ফলে গ্রামগঞ্জ ও শহরে ট্রাক্টরের সংখ্যা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও ইউনিয়নে তার ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেছে। জেলায় অবৈধ এই ট্রলি-ট্রাক্টরের সংখ্যা কত, সে বিষয়ে জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট কারও কাছে কোনো তথ্য নেই। তবে জেলাজুড়ে হাজার হাজার ট্রলি-ট্রাক্টর হাইওয়ে থেকে শুরু করে গ্রামের রাস্তাগুলোতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। সড়কগুলোতে এ ধরনের যানের কারণে এখন পা ফেলাই দায়। বিশাল চাকার এ যান রাস্তায় চলাচলের সময় কার উপর গিয়ে উঠে তা বলা মুশকিল। তাই ট্রলি-ট্রাক্টরের ভয়ে রাস্তা-ঘাটে চরম উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার মধ্যে চলাচল করছে মানুষ। সড়কে এই অবৈধ যান চলাচল বন্ধ করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জোর দাবি জানিয়েছেন সচেতন মহল।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে গর্জনিয়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মুঠোফোনে আলমগীর বলেছেন, এখানকার রাস্তাঘাট এমনিতে খারাপ, আপনি ফোন দিয়েছেন, এটা আমরা খতিয়ে দেখবো। জানতে চাইলে কচ্ছপিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নোমান বলেন, ট্রাক্টর ও পাওয়ার টিলার দু’টিই মাঠে কৃষিকাজের জন্য অনুমোদিত, সড়ক-মহাসড়কে চলাচল কিংবা পণ্য সামগ্রী বহনের অনুমতি নেই। সম্পূর্ণ বে-আইনিভাবে এ যানটি সড়কে চলাচল করছে। এটা খুবেই বিপদজনক। এদের বেশিরভাগেরই লাইসেন্স নেই। অথচ প্রতিটি ইঞ্জিনচালিত যানবাহনের লাইসেন্স প্রয়োজন। এছাড়া ট্রাক্টর চালকদেরও নেই কোন প্রশিক্ষণ। ফলে সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এ অবৈধ যান।