সংবাদদাতা:
আব্দুল্লাহ আল মামুন। বহুমুখী প্রতিভায় আলোকিত একজন মানুষ। আপন আলোয় দেশে-বিদেশে আলোকিত করে চলেছেন নিজের চার পাশ। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার ওয়েস্টার্ন সিডনী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি পিএইচডি ডিগ্রী সম্পন্ন করেছেন। তাঁর গবেষণার বিষয়বস্ত হচ্ছে বৃষ্টিপাত এবং ড্রেইনেজ অবকাঠামোর উপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব। সরকারি চাকুরিজীবী বাবা প্রয়াত নজির আহমদ এবং মা জয়নব বেগমের কনিষ্ঠ সন্তান ড. মামুনের বাড়ি সৈকত নগরী কক্সবাজার শহরের বাহারছড়ায়।

ড. মামুন চট্টগ্রাম শহরের পাথরঘাটার বান্ডেলপারা প্রাইমারী স্কুল থেকে পঞ্চম শ্রেনীর বৃত্তি পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে বৃত্তি পান এবং চট্টগ্রাম মুসলিম হাই স্কুল থেকে অষ্টম শ্রেনীর বৃত্তি পরীক্ষায় কুমিল্লা বোর্ডে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন। চট্টগ্রাম মুসলিম হাই স্কুল থেকে ১৯৭৫ সালে এসএসসি এবং ১৯৭৭ সালে চট্টগ্রাম কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এইচএস সি পাস করে চট্টগ্রাম ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের (বর্তমান চুয়েট) পুরকৌশল বিভাগে ভর্তি হন। সেখান থেকে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করে একই বিভাগে প্র্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৮৪ সালে তিনি উচ্চ শিক্ষার জন্য নেদারল্যান্ড সরকারের বৃত্তি নিয়ে বিদেশ পাড়ি দেন। থাইল্যান্ডে অবস্থিত এশিয়ার অন্যতম শীর্ষ স্নাতকোত্তর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এশিয়ান ইন্সটিটিউট অফ্ টেকনলজি (এআইটি) থেকে কৃতিত্বের সাথে মাস্টার অফ ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করে ওই প্রতিষ্ঠানেই দুই বছর গবেষণা সম্পন্ন করেন। অতঃপর১৯৮৮ সালে অস্ট্রেলিয়ার সিডনী শহরে অভিবাসী হয়ে যান।

১৯৮৮ সাল থেকে অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন শহরে, বিভিন্ন খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠানে পেশাদার প্রকৌশলী হিসেবে তিনি কাজ করেছেন। সেখানেও রেখেছেন প্রতিভার স্বাক্ষর। অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস স্টেটের শোল হেভেন এলাকায় পরিশোধিত পানি ব্যবহারের একটি প্রকল্পের রূপকার ছিলেন। তিনি এমন একটি উপায় বের করেন যাতে প্রকল্পটির জন্য যে বাজেট বরাদ্দ হয়েছিল তার প্রায় অর্ধেক অর্থ দিয়েই প্রকল্পের কাজ সারেন। সে কাজের স্বীকৃতি হিসেবে ২০০০ সালে পেয়েছেন দুটো মর্যাদা সম্পন্ন পুরস্কারÑনিউসাউথ ওয়েলস প্রিমিয়ারস “পাবলিক সেক্টর অ্যাওয়াডর্” ইন দ্য ইকনমি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট সেক্টর এবং ইঞ্জিনিয়ার্স অস্ট্রেলিয়ার ‘ইঞ্জিনিয়ার্স এক্সেলেন্স অ্যাওয়ার্ড’। অস্ট্রেলিয়ায় প্রকৌশল পেশার পাশা পাশি তিনি সিডনি ইনস্টিটিউট অব টেকনলজির পুরকৌশল বিভাগে নিয়মিত শিক্ষকতাও করেছেন।

বর্ণিল ও বৈচিত্রময় জীবনের অধিকারী আব্দুল্লাহ আল মামুন একের ভিতর অনেক। তিনি একাধারে একজন প্রকৌশলী, লেখক, রেডিও উপস্থাপক, গীতিকার, সুরকার এবং কন্ঠ শিল্পী। কুমার বিশ^জিতের গাওয়া তাঁর লেখা গান ‘তোরে পুতুলের মতো করে সাজিয়ে’ এখনও বাংলাদেশের তরুণ ও নানা বয়সী শ্রেতাদের মুখে মুখে। এছাড়া সোলস ব্যান্ডের জন্য তাঁর রচিত ‘এই মুখরিত জীবনের চলারপথে’, ‘ভুলে গেছ তুমি’, ‘ওরে ছোট্ট বেলার সাথী’ সহ আরও বেশ কিছু গান বাংলাগানের জগতকে সমৃদ্ধ করেছে।

কর্মজীবনের শত ব্যস্ততার মধ্যে ও মামুন তাঁর শিল্পীসত্তা থেকে কখনো বেরিয়ে আসতে পারেননি। ২০১৬ সালে বের হয়েছে তাঁর নিজের গাওয়া মৌলিক বাংলাগানের এলবাম “তোমার জন্য”। কক্সবাজারে তাঁর গুরু গৃহ ওস্তাদ আবু বক্কর সিদ্দিকীর “সঙ্গীতায়নে” এই এলবামের প্রকাশনা ও মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

ড. মামুন লিখেছেন জীবনধর্মী কলাম এবং বই। কিছু দিন আগে প্রকাশিত হয়েছে তাঁর কবিতার বই ‘খুঁজে ফিরছি প্রিয়তমা’ এবং কাতারে প্রবাস জীবনের সুখ-দুঃখের নানা অভিজ্ঞতা নিয়ে লেখা বই ‘কাতারে বহতা সময়’। তিনি চলমান নানা বিষয়ে নিয়মিত কলাম লেখেন প্রথম আলো, দৈনিক ইত্তেফাকসহ দেশ-বিদেশের বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকা, বৈজ্ঞানিক জার্নাল, সাপ্তাহিক ও অনলাইন পোর্টালে। মরুদ্যানের রূপকার আখ্যা দিয়ে তাঁকে নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় দৈনিক প্রথম আলোর সাপ্তাহিক আয়োজন ‘অন্য আলো’য়।

বর্তমানে তিনি কাতারের পরিবেশ ও নগর মন্ত্রণালয়ে অবকাঠামো-বিষয়ক পরামর্শক হিসাবে কর্মরত রয়েছেন। পেশা জীবনের বাইরে তিনি কাতারের প্রবাসী কমিউনিটির বিভিন্ন কর্মকান্ডে জাড়িয়ে আছেন। তিনি আইইবি (দ্যা ইনস্টটিটিশন অফ ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ) কাতার শাখার চেয়ারম্যান, এবং কাতার চট্টগ্রাম সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। তাঁর জীবনলব্ধ সমৃদ্ধ অভিজ্ঞতায় উপকৃত হচ্ছেন সমাজের নানা শ্রেণী ও পেশার মানুষ।

ড. মামুন একজন আর্ন্তজাতিক খ্যাতি সম্পন্ন প্রকৌশলী ও ড্রেইনেজ বিশেষজ্ঞ। কর্ম ক্ষেত্রে অবদানের স্বীকৃতি সরূপ যুক্তরাজ্য (ইউকে) থেকে প্রকাশিত দ্বি-বার্ষিক ম্যাগাজিন “মিলেনিয়াম” কর্তৃক নির্বাচিত ২০১৩ সালের সেরা অনাবাসী বাংলাদেশিদের তালিকায় তিনি ৭ম স্থান পাওয়ার সন্মান অর্জন করেন। সুদূর প্রবাসে থাকলেও স্বদেশের ভাবনায় তাঁন মন থাকে নিরন্তর ব্যকুল। নগর পরিকল্পনার আর্ন্তজাতিক অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে শৈশবের বেলা ভূমি কক্সবাজার শহরকে কিভাবে একটি বিশ^মানের পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে হিসাবে গড়ে তোলা যায় সে নিয়ে তিনি এখন গবেষণা করছেন।