মোঃ নিজাম উদ্দিন, চকরিয়া:
মাস দুয়েক পর শুরু হচ্ছে নতুন করে লবণ উৎপাদন। এখনো পর্যন্ত দেশে চাহিদার অধিক পরিমাণ লবণ মজুদ রয়েছে। কোন প্রকার ঘাটতি না থাকার পরও মিল মালিকরা বাহির থেকে লবণ আমদানির প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এমনটাই দাবী করে ক্ষোভ প্রকাশ করেন লবণ চাষীরা। গত উৎপাদন মৌসুমে লবণের দাম নগন্য থাকায় বিক্রি না করে লবণ মজুদ রেখেছে সর্বাধিক সংখ্যক চাষী।

কক্সবাজার ও তৎসংলগ্ন এলাকায় ৬৪ হাজার ১৪৭ একর লবণ চাষের জমি রয়েছে। এখানে প্রায় এক লক্ষের বেশি চাষী মাথার ঘাম পায়ে ফেলে লবণ উৎপাদন করছে। সম্প্রতি চকরিয়া উপজেলাসহ কক্সবাজারের লবণ চাষীরা উৎপাদিত লবণ নিয়ে চরম আতংকে দিনপাত করছে।

বিসিক’এর মতে, দেশে ১ লাখ ৬০ হাজার মেট্রিকটন লবণ মজুদ আছে। লবণ চাষীদের দাবি, ৫ লাখ মেট্রিক টনের বেশি লবণ মাঠে অবিক্রিত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। তারপরও মিল মালিকরা বাহির থেকে লবণ আমদানির পায়তারা করছে। অপরদিকে, নিজেদের পেট মোটা করতে আমদানিকারকের একটি সিন্ডিকেট সক্রিয় হয়ে ওঠেছে। বেশ কয়েকজনের এ সিন্ডিকেট গত কিছু সময় ধরে কক্সবাজার জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে নানামুখী তদবির চালাচ্ছে। দেশীয় শিল্প ধ্বংস করে বিদেশ থেকে লবণ আমদানি করতে বিভ্রান্তিকর তথ্য দিচ্ছে তারা।

এদিকে লবণ মজুত করে সঙ্কট সৃষ্টি করলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু। দেশে লবণের ঘাটতি নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, অতি মুনাফালোভী কিছু মিল মালিক লবণ মজুত করে সঙ্কট সৃষ্টি করে থাকে। তখন সরকার অন্য দেশ থেকে লবণ আমদানিতে বাধ্য হয়। এতে ক্ষতির মুখে পড়ে দেশের সকল লবণ চাষিরা। তাই মজুতদারির প্রমাণ পেলেই ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও মন্ত্রী জানান। কক্সবাজার বিয়াম ফাউন্ডেশন সম্মেলন কক্ষে গত ২৫ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক) আয়োজিত মানসম্পন্ন আয়োডিনযুক্ত লবণ উৎপাদন কর্মশালায় এসব কথা বলেছিলেন তিনি।
এর আগে কয়েক মাস ধরে চাষী ও মিল মালিকদের মধ্যে তুমুল বিরোধ চলছিল। এতে চাষীদের দাবী ছিল, মাঠে তাদের পর্যাপ্ত লবণ মজুদ রয়েছে। বাইর থেকে লবণ আমদানির কোন প্রয়োজন নেই। এনিয়ে ইসলামপুর কয়েকজন মিল মালিকের সাথে কথা হলে তারা দৈনিক ইনানীকে বলেন, চাষীদের কাছে ও মিলে তেমন কোন লবণ মজুদ নেই। দালালরা মাঠ পর্যায়ে চাষীদের কাছ থেকে স্বল্পমূল্যে লবণ কিনে অধিক মুনাফা করতে কিছু লবণ জমা থাকতে পারে। তাও পর্যাপ্ত নয়। তাই আমদানির প্রয়োজন রয়েছে।
অপরদিকে চকরিয়ার লবণ চাষী কলিম উল্লাহ কলি জানায়, বর্তমান সময়ে যদি মিল মালিকরা বাইর থেকে লবণ আমদানি করে তাহলে জমে থাকা পাঁচ লাখ মেট্রিক টন লবণ বিক্রি করতে না পেরে চাষীদের পথে বসতে হবে। যদি ওরকম পরিস্থিতি হয় তাহলে আগামীতে লবণ চাষাবাদ বাদ দেওয়ার কথা জানান বদরখালী ইউনিয়নের অনেক লবণ চাষীরা।

খুটাখালীর লবণ চাষী ছৈয়দ হোসেন জানায়, মাঠে পর্যাপ্ত লবণ থাকার পরও যদি মিল মালিকরা বাহির থেকে লবণ আমদানি করে তাহলে দেশীয় চাষীদের চরম ক্ষয়ক্ষতি হবে, চাষীরা লবণ উৎপাদনে আগ্রহ হারাবে, বিনষ্ট হতে পারে দেশীয় শিল্প।

ইসলামপুর লবণ মিল মালিক সমিতির সভাপতি মোঃ শামসুল আলম আজাদ বলেন, গত ২৬ সেপ্টেম্বর কক্সবাজার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ মাহিদুর রহমান আহ্বায়ক ও বিসিক কক্সবাজারের লবণশিল্পের উন্নয়ন কর্মসূচির উপ-মহাব্যবস্থাপক দিলদার আহমদ চৌধুরীকে সদস্য সচিব করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটিতে তাকেসহ লবণ চাষী কল্যাণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কায়ছার ইদ্রিস, কক্সবাজার লবণ মিল মালিক সমিতির সভাপতি রইছ উদ্দিনকে এ কমিটিতে সদস্য করা হয়। পরে কমিটির সিদ্ধান্তে সবকিছু যাচাবাচাই করে প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে।

তিনি আরো বলেন ফড়িয়ারা ছাড়া সর্বাধিক মিল ও মাঠে প্রচুর লবণ মজুদ আছে। বিসিকের রিপোর্ট মতে ১ লাখ ৬০ হাজার মেট্রিক টন লবণ জমা থাকায় ঘাটতির কোন আশংকা নেই। এছাড়া লবণ শিল্পের ক্ষতি হয় এমন কোন সিদ্ধান্ত নেয়া কারো উচিত হবে না।