ডেস্ক নিউজ:
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশে আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে জঙ্গিগোষ্ঠী। বিশেষ করে রংপুর, লালমনিরহাটের তিস্তা নদীর দুর্গম চর থেকে শুরু করে চট্টগ্রাম মিরসরাইয়ের উত্তর সোনাপাহাড় গ্রাম পর্যন্ত জঙ্গি ঘাঁটির সন্ধান মিলেছে। সরকারের দাবি অনুযায়ী, দেশে জঙ্গিদের অপতৎপরতা কমে এলেও, হঠাৎ এইসব ঘটনা ভাবিয়ে তুলেছে গোয়েন্দাদের। অবশ্য নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, একটি বা একাধিক রাজনৈতিক দলের সাথে জঙ্গিদের মতাদর্শ মিলে গেলে, নির্বাচনের আগে জঙ্গিদের তৎপরতা বাড়ে।

র‍্যাব সদরদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, রাজধানীর হলি আর্টিজানে হামলার পর শুধু র‍্যাব ৫৩৪ জন জঙ্গি সদস্যকে গ্রেফতার করেছে। বিভিন্ন অভিযানে নিহত হয়েছে ২১ জন, আত্মসমর্পণ করেছে ৭ জন। তাছাড়া গত ৬ মাসেই ১২৫ জন জঙ্গিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যাদের মধ্যে শুধু জেএমবি’র সদস্য ৯৪ জন। এছাড়া সম্প্রতি উত্তরবঙ্গে জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে গঠিত র‌্যাব-পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিটগুলো অন্তত ১০টি আস্তানায় হানা দিয়ে বিভিন্ন স্তরের ১৬ জঙ্গিকে গ্রেফতার করেছে।

তবে হঠাৎ নির্বাচনের আগে জঙ্গিদের এই অপতৎপরতা নিয়ে নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা কী ভাবছেন? জানতে চাইলে নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুর রশিদ বার্তা২৪.কম’কে বলেন, ‘শুধু জঙ্গি সংগঠনগুলো না, নির্বাচনের আগে যেকোনো অপশক্তি তৎপর হয়ে উঠে। তবে যদি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জঙ্গিদের মতাদর্শ মিলে যায় তখন দলটি জঙ্গি গোষ্ঠীকে পৃষ্ঠপ্রোষকতা করে। ফলে জঙ্গি তৎপরতা বেড়ে যায়।’

তিনি আরো বলেন, ‘জঙ্গিরা সাধারণত গণতন্ত্রে বিশ্বাসী হয় না। দেশের কোনো রাজনৈতিক দলও যদি গণতন্ত্রে বিশ্বাস না করে তাহলে তাদের মধ্যে সখ্যতা গড়ে উঠবে। এতে ওই রাজনৈতিক দল জঙ্গিদের ব্যবহার করে তাদের মতবাদ বা মতাদর্শ প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করবে। মূলত নির্বাচনের পরিবেশ প্রবাহিত করায় তাদের উদ্দেশ্য।’

এদিকে গত সপ্তাহে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের উত্তর সোনাপাহাড় গ্রামের ‘চৌধুরী ম্যানশন’ নামক একটি বাড়িতে জঙ্গি আস্থানা সন্দেহে অভিযান চালায় র‍্যাব৷ অভিযান শেষে ওই বাড়ি থেকে একটি একে-২২ রাইফেল, ৫টি অবিস্ফোরিত বোমা এবং তিনটি ছুরিসহ বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়৷ র‌্যাবের দাবি, চট্টগ্রামের আদালত ভবন উড়িয়ে দেয়ার উদ্দেশ্য ছিল ওই জঙ্গিদের৷

এবিষয়ে চট্টগ্রাম র‌্যাব-৭ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মিফতাহ উদ্দিন আহমেদ বার্তা২৪.কম’কে বলেন, ‘কিছু টার্গেটে হামলার পরিকল্পনা করেছিল জঙ্গিরা৷ আমরা কাজ করছি তবে এখনও নিশ্চিত হতে পারিনি, কী কারণে এই হামলার পরিকল্পনা করেছিল তারা৷’

নির্বাচনের আগে হঠাৎ জঙ্গি আস্থানা পাওয়া ও তাদের হামলার পরিকল্পনার বিষয়ে বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) নূর মোহাম্মদ বার্তা২৪.কম’কে বলেন, ‘নির্বাচনের আগে বা নির্বাচনের সময় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নির্বাচনমুখী থাকে। নির্বাচন নিয়ে তাদের অনেক প্রস্তুতি থাকে, তাই কিছুটা হলেও মনোযোগ ঐ দিকে থাকে। হঠাৎ নজরদারি কমে যাওয়ার ফলে জঙ্গি সংগঠনগুলো সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী হতে চেষ্টা করে এবং তাদের অস্তিত্ব জানান দেয়।’

মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুর রশিদের সাথে একটি জায়গায় একমত হয়ে সাবেক এই আইজিপি আরো বলেন, ‘নির্বাচনের আগে কোনো রাজনৈতিক দল যদি জঙ্গিদের জন্য দলের দরজা খুলে রাখে এবং অর্থ ও অস্ত্রের যোগান দেয় তাহলে জঙ্গিদের তৎপরতা বেড়ে যায়। জঙ্গি সংগঠনের উত্থান বা পতন অনেকটাই রাজনৈতিক। তাই নির্বাচনকে ঘিরে তাদের অপতৎপরতা বিষয়টিও আমার কাছে রাজনৈতিক বলে মনে হয়।’