বিদেশ ডেস্ক:
প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার অচলাবস্থার মধ্যেই পাঁচ সদস্যের একটি রোহিঙ্গা পরিবার বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার খবর প্রকাশ করেছে ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি। মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় মুখপত্র গ্লোবার নিউ লাইট অব মিয়ানমারকে উদ্ধৃত করে এ খবর জানানো হয়েছে। কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ আবুল কালাম এএফপিকে বলেছেন, একটি রোহিঙ্গা পরিবার ফিরে যাওয়ার খবর তারা শুনেছেন। তবে, তা আনুষ্ঠানিক রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার অংশ নয় বলে জানিয়েছেন তিনি।

গত বছরের ২৫ আগস্ট রাখাইনের কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার পর পূর্ব-পরিকল্পিত ও কাঠামোবদ্ধ সহিংসতা জোরালো করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। হত্যা-ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধারার সহিংসতা ও নিপীড়ন থেকে বাঁচতে নতুন করে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রায় ৭ লাখ মানুষ। পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে নিতে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে জানুয়ারিতে বাংলাদেশ-মিয়ানমার প্রত্যাবাসন চুক্তি সম্পন্ন হয়। গত ৬ জুন নেপিদোতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে মিয়ানমার ও জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর মধ্যেও সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। তবে এখন পর্যন্ত প্রত্যাবাসন চুক্তির আওতায় একজন রোহিঙ্গাকেও ফিরিয়ে নেয়নি মিয়ানমার।

বৃহস্পতিবার (১১ অক্টোবর) মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় মুখপত্র হিসেবে পরিচিত দ্য গ্লোবাল নিউ লাইট অব মিয়ানমারের এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, বুধবার একটি পরিবার রাখাইনে ফিরেছে। রোহিঙ্গা শব্দটি উল্লেখ না করে পাঁচ সদস্যের ওই পরিবারকে ‘বাস্তুচ্যুত’ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ আবুল কালাম বলেছেন, একটি রোহিঙ্গা পরিবার ফেরত গেছে বলে শোনা গেছে, তবে তাদের পৌঁছানোর ব্যাপারে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানা যায়নি। তিনি আরও বলেন, ‘কেউ চাইলে ফিরে যেতে পারে। তবে আনুষ্ঠানিক প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু হয়নি।’

রোহিঙ্গা ক্যাম্প নেতা আব্দুর রহিম বলেন, রোহিঙ্গা পরিবারটি কক্সবাজারের বালুখালি শিবিরে থাকতো। গতকাল (১০ অক্টোবর) তারা মংডুর কাছে তাদের বাড়িতে ফিরেছে।’

মিয়ানমারের সঙ্গে জাতিসংঘের যে সংস্থাগুলো চুক্তি করেছে, তারা গত সেপ্টেম্বরে প্রায় ১২টি গ্রামে জরিপ চালিয়েছে। পরে এক বিবৃতিতে সেখানকার পরিস্থিতির কথা বর্ণনা করেছে জাতিসংঘের সংস্থাগুলো। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘অনেক এলাকায় অনাস্থা, প্রতিবেশী কমিউনিটির মধ্যে আতঙ্ক ও অনিরাপত্তাজনিত ভয় বিরাজ করছে।’

উল্লেখ্য, রোহিঙ্গাদের নিজ দেশের জনগোষ্ঠী হিসেবে স্বীকার করে না মিয়ানমার। তাদের ‘বাঙালি মুসলমান’ আখ্যা দিয়ে বাংলাদেশের বাসিন্দা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চায় নেপিদো। ১৯৪৮ সালে মিয়ানমার স্বাধীন হওয়ার পর দেশটির বাসিন্দা হিসেবে রোহিঙ্গাদের যে সবুজ ও গোলাপি পরিচয়পত্র দেওয়া হয়েছিল, তা গুরুত্বহীন হয়ে যায় ৮২ সালের নতুন নাগরিকত্ব আইনে। মিয়ানমারের ইতিহাসে চোখ ফেরালে দেখা যায়, ১৯৮২ সালে তৎকালীন সামরিক জান্তা সরকার নৃগোষ্ঠীভিত্তিক নতুন নাগরিকত্ব আইন কার্যকর করে। বিতর্কিত ওই বর্ণবাদী নাগরিকত্ব আইনে মিয়ানমারের প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গার নাগরিকত্ব অস্বীকার করা হয়। আইনের ৪ নম্বর ধারায় শর্ত দেওয়া হয়, কোনও জাতিগোষ্ঠী রাষ্ট্রের নাগরিক কিনা, তা আইন-আদালত নয়; নির্ধারণ করবে সরকারের নীতিনির্ধারণী সংস্থা ‘কাউন্সিল অব স্টেট’। বস্তুত এই আইনটিই জান্তাশাসিত মিয়ানমারে সর্বোচ্চ সেনাবিদ্বেষের শিকার রোহিঙ্গাদের ভাসমান জনগোষ্ঠীতে রূপান্তর করে।