আলমগীর মানিক, রাঙামাটি:
পার্বত্যাঞ্চলের মানুষের জীবন মানোন্নয়নের লক্ষ্যে নানা সমস্যায় জর্জরিত এশিয়ার এতিহ্যবাহি বৃহত্তম কাগজ কল কর্ণফুলী পেপার মিল কেপিএমকে আধূনিকায়ন করা অথবা তদস্থলে আধুনিক ও উন্নত প্রযুক্তির নতুন পেপার মিল স্থাপনের পূর্ব পর্যন্ত মিলটি সচল রাখার পরামর্শ প্রদান করেছে পার্বত্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। সম্প্রতি কেপিএম সরেজমিনে পরিদর্শন করে এবং সংশ্লিষ্ট্য সকলের সাথে মতবিনিময় করে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে কেপিএমকে আবারো সচল করতে এই জোরালো সুপারিশমালা পেশ করা হয়। ১০ই অক্টোবর মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশ হওয়া রেজুলেশনে এসব তথ্য জানা গেছে।

সুপারিশ মালায় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এমপি র.আ.ম ওবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি, কর্ণফূলী পেপার মিলের ক্ষতির পরিমাণ শূন্যের কৌটায় নামিয়ে আনার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ প্রদান করেন। তিনি দেশের কাগজের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে পুরাতন পেপার মিলগুলো পিপিপি/জয়েন্ট ভেঞ্চারের মাধ্যমে চালুর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি মিলে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারিদের বকেয়া বেতন-ভাতা, অবসরভোগীদের পেনশন অবসর-ভাতা এবং ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানগুলোর বকেয়া বিল পরিশোধের লক্ষ্যে ভর্তুকি হিসেবে অতিরিক্ত আরো ১০০কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার সুপারিশ করেছে স্থায়ী কমিটি।

এছাড়াও কেপিএম এর কাঁচামালের চাহিদা পূরণের উদ্দেশ্যে মিলের অনুকূলে লাইসেন্সকৃত জমিতে উচ্চ ফলনশীল বাঁশের চাষ সম্প্রসারনের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে জন্য পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় বরাবরে পরামর্শ প্রদান করা হয় স্থায়ী কমিটির রিপোর্টে।

গত ৩রা অক্টোবর রাঙামাটির চন্দ্রঘোনায় অবস্থিত কর্ণফুলী পেপার মিল কেপিএম সরেজমিন পরিদর্শন পরবর্তী ৪ অক্টোবর উন্নয়ন বোর্ডের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত ৩৪তম বৈঠক শেষে প্রকাশিত রেজুলেশনে উপরোক্ত মতামত তুলে ধরে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করলে রাঙামাটির নির্বাচিত সংসদ সদস্য ঊষাতন তালুকদার জানিয়েছেন, পাহাড়ের অর্থনীতির অন্যতম ধারক-বাহক এই কেপিএম এর দূরাবস্থা স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করে আমি বিগত বেশ কয়েকটা বছর কেপিএমকে সচল করতে আমাদের সংসদীয় কমিটিসহ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট্য উচ্চ পর্যায়ে বারংবার ধর্না দিয়ে আসছি। যার ফলশ্রুতিতে গত ৩রা অক্টোবর কেপিএম সরেজমিনে পরিদর্শন করাসহ সেখানকার সকল স্টেকহোল্ডারদের সাথে মতবিনিময় করে তাদের মতামত গ্রহণ করে স্থায়ী কমিটি। এরই ধারাবাহিকতায় বিষয়টি নিয়ে রাঙামাটিস্থ উন্নয়ন বোর্ডে স্থায়ী কমিটি কর্তৃক আয়োজিত ৩৪তম বৈঠকে বিষয়টি বেশ গুরুত্বের সাথে উঠে আসে। এরই ধারাবাহিকতায় স্থায়ী কমিটির পক্ষ থেকে রেজুলেশনের মাধ্যমে উপরোক্ত সুপারিশমালা পেশ করা হয়।

এদিকে এদিকে, কেপিএম সংকট সমাধানে সর্বশেষ ভিজিট পর্যালোচনা ও পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ন বিষয়ে গতকাল বুধবার জাতীয় সংসদে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীর সাথে সাক্ষাৎ করেছেন সংসদ সদস্য ঊষাতন তালুকদার। সাক্ষাৎ ও আলোচনা বিষয়ে সাংসদের একান্ত সহকারী জহির জানান, আগামী ২৩ শে অক্টোবর দশম জাতীয় সংসদের পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির ৩৫তম এবং সর্বশেষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। উক্ত বৈঠকে পার্বত্যাঞ্চলের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে করণীয় সম্পর্কে বিশদভাবে আলোচনা হয়েছে।

কেপিএম এর উন্নয়নে দীর্ঘ সময় প্রচেষ্টা চালিয়ে আসা পার্বত্য রাঙামাটির এমপি ঊষাতন তালুকদার এর একান্ত সহকারী এমআর হোসাইন জহির আরো জানান দশম জাতীয় সংসদের শুরু থেকে আমরা কেপিএম নিয়ে কাজ করে আসছি। ইতোমধ্যে ১৩৬ কোটি টাকা থেকে শ্রমিক কর্মচারীদের বকেয়া বেতন এবং গ্র‍্যাচুইটি বাবদ ম্যাক্সিমাম পরিশোধ হয়েছে। আশা করি কয়েক দিনের মধ্যে বকেয়া গ্র‍্যাচুইটি সম্পুর্ণ পরিশোধ করা হবে এবং পিএফ এরিয়ার সহ যাবতীয় পাওনা পরিশোধের পাশাপাশি বেতন নিয়মিতভাবে পরিশোধ করার বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে অনেক ঝড় ঝাপটা মোকাবেলা করে প্রায় কয়েকবার বন্ধ হওয়ার উপক্রম হওয়ার পরও মিল এখনো চালু আছে। কিছুদিন আগে গ্যাস লাইন বিস্ফোরণের পর ঊষাতন তালুকদার নিজে বারংবার কর্ণফুলী গ্যাস সিস্টেমসের এমডি এবং বিসিআইসির চেয়ারম্যান সহ সংশ্লিষ্ট বিভাগ গুলোর সাথে কথা বলে দ্রুত সমস্যার সমাধান করে কেপিএম কে আবারো উৎপাদনের ধারায় ফিরিয়ে এনেছেন। সংসদ সদস্যের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি মহোদয় কেপিএম সমস্যা কে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল নিয়ে নিজে স্বশরীরে কেপিএম পরিদর্শন করে সমস্যা সমাধানের বিষয়ে ব্যাপক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। কেপিএম এর জন্য আলাদাভাবে অতিরিক্ত ভর্তুকি হিসাবে একশো কোটি টাকা বরাদ্দের জন্য সুপারিশ করেছেন। আমি মনে করি কেপিএম তার সংকট কাটিয়ে আবারো গৌরবের পথে ফিরে আসছে। এই মুহূর্তে কেপিএম উন্নয়নে সংশ্লিষ্ট সকলের আন্তরিক সহযোগিতা একান্ত প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেন জহির।