বিডি-প্রতিদিন: শীর্ষ নেতাদের অন্তঃকোন্দলে টালমাটাল হয়ে পড়েছে দেশের আলোচিত সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। এবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সংবর্ধনা দেওয়াকে কেন্দ্র করে এ সংগঠনের শীর্ষ নেতারা দ্বন্দ্বে জড়িয়ে প্রকাশ্যেই একে অপরের বিরুদ্ধে বিষোধগার করছেন। এমনকি সরকারের সঙ্গে শীর্ষ নেতাদের আঁতাতের অভিযোগ তুলে হেফাজতে ইসলাম থেকে পদত্যাগ করেছেন অন্যতম শীর্ষ কওমি আলেম ও সংগঠনের সিনিয়র নায়েবে আমির আল্লামা মহিবুল্লাহ বাবুনগরী। পদত্যাগ করার পর তাঁর সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে অনেক নেতাই পদত্যাগের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে মুহিবুল্লাহ বাবুনগরীর পদত্যাগকে বিএনপি-জামায়াতের গভীর ষড়যন্ত্র ও ভোট রাজনীতি হিসেবে দেখছেন আল্লামা আহমদ শফীর অনুসারীরা। আল্লামা আহমদ শফীর অনুসারী এক শীর্ষ নেতা বলেন, এ অন্তর্কোন্দলের পেছনে রয়েছে ভোট রাজনীতি। প্রধানমন্ত্রীকে সংবর্ধনা দেওয়া হলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কওমি ভোট ব্যাংকের বিরাট একটি অংশ চলে যাবে আওয়ামী লীগের অনুকূলে। তাই এ সংবর্ধনা বানচাল করতে বিএনপি-জামায়াত ষড়যন্ত্র করছে। পদত্যাগের বিষয়ে আল্লামা মহিবুল্লাহ বাবুনগরী বলেন, ‘যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে হেফাজতে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, সে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের মধ্যে নেই হেফাজতে ইসলাম। এ সংগঠন নিজের স্বকীয়তা হারিয়ে অনেকটা রাজনৈতিক সংগঠনের মতো আচরণ করছে। তাই হেফাজতে ইসলাম থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘দেওবন্দ উসুলে সরকারি স্বীকৃতি নেওয়ার কোনো নজির নেই। সরকারি স্বীকৃতি নেওয়া দেওবন্দ আদর্শের পরিপন্থী। স্বীকৃতি নেওয়ার পর হেফাজতে ইসলামের কেউ ১৩ দফা দাবি বিষয়ে কোনো কথা বলছে না। উল্টো প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ হয়ে বলা শুরু করেছে। সংবর্ধনা দেওয়া হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীকে। তাই হেফাজতে ইসলাম থেকে পদত্যাগ করেছি।’ হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব আল্লামা মাঈনুদ্দীন রুহী বলেন, ‘মহিবুল্লাহ বাবুনগরীর এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে আমাদের কাছে চিঠি দেননি। তবে শুনেছি তিনি হেফাজতে ইসলাম থেকে পদত্যাগ করেছেন। যদি তিনি হেফাজতে ইসলাম থেকে পদত্যাগ করেন তাহবে অপূরণীয় ক্ষতি।’ হেফাজতে ইসলামের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৩ দফা দাবি আদায়ের জন্য ২০১৩ সালে ৫ মে ঢাকা ঘেরাও কর্মসূচি পালন করে হেফাজতে ইসলাম। পরে পুলিশের অভিযানের মুখে হেফাজতে ইসলামের নেতা-কর্মীরা পিছু হটে। এরপর থেকে হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব বাড়তে থাকে। কিন্তু সম্প্রতি কওমি মাদ্রাসার সরকারি স্বীকৃতিসহ নানান ইস্যুতে সে দূরত্ব কমতে থাকে। কওমি মাদ্রাসার সরকারি স্বীকৃতি দেওয়ার আইন সংসদে পাস হওয়ার পর দেশের শীর্ষ কওমি আলেম ও হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা আহমদ শফীসহ কওমিদের একটি বিশাল অংশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং সংবর্ধনা দেওয়ার উদ্যোগ নেন। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজনের জন্য একটি কমিটিও গঠন করা হয়। এ সংবর্ধনার বিরোধিতা করে একটি অংশ। এরপর থেকে কওমি শীর্ষ আলেমদের মধ্যে দূরত্ব বাড়তে থাকে। বাড়তে থাকে অন্তর্কোন্দল। যার ফলে প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়ে পদত্যাগ করেন মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী।