শাহিদ মোস্তফা শাহিদ, কক্সবাজার সদর:

স্বামী হত্যার ন্যায় ও সুষ্ঠ বিচার চেয়ে অসহায় এক বিধবা স্ত্রী এবং পুত্র সন্তানদের আহাজারিতে আকাশ বাতাস ভারি হয়ে উঠেছে। খুনিদের অব্যাহত হুমকি, তদন্ত রিপোর্ট দিতে প্রশাসনের অসহযোগীতায় ন্যায় বিচার পাওয়া নিয়ে শংকিত ভিকটিমের পরিবার। ঘটনার পরপরই খুনি চক্রের যোগসাজশে জনপ্রতিনিধি-পুলিশের চাপের মূখে পড়ে আপোষের নামে খালি স্ট্যাম্পে দস্তখত নেওয়া আরো উদ্বিগ্ন বাদী। গতকাল ৭ অক্টোবর বিকালে স্থানীয় কয়েকজন সাংবাদিকদের সামনে অশ্রুসিক্ত নয়নে কথা গুলো বলেন কক্সবাজার সদরের জালালাবাদ ইউনিয়নের ফরাজী পাড়া এলাকার মৃত গোরা মিয়ার কন্যা, ঈদগাঁও দক্ষিণ মাইজ পাড়া গ্রামের মৃত জসিম উদ্দীনের স্ত্রী রিনা আক্তার।

এসময় তিনি জেলা পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপ কামনা করে বলেন, তার স্বামী জসিমকে সীমান্ত উপজেলা টেকনাফে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় তিনি বাদী হয়ে আদালতে মামলা দায়ের করেন। মামলটি আমলে নিয়ে তদন্তের জন্য টেকনাফ থানার ওসিকে নির্দেশ দেন। এরপর থেকে সংশ্লিষ্ট তদন্ত কর্মকর্তা তদন্ত রিপোর্ট দিতে গড়িমসি শুরু করেছে। ফলে যথা সময়ে রিপোর্ট প্রেরণ না করে কালক্ষেপন করতে থাকায় ন্যায় বিচার না পাওয়ার দুঃচিন্তায় রয়েছে। একদিকে খুনি চক্রের হুমকি অন্যদিকে ৩ পুত্র সন্তানদের ভরনপোষণ নিয়ে চরম বেকায়দায় পড়ছে রিনা আক্তার।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ৯ এপ্রিল দুপুর বারটার দিকে টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা কানজর পাড়া এলাকায় আবদুল গফ্ফারের সমিলে বাদী রিনা আক্তারের স্বামী জসিম উদ্দীনকে পুর্বশত্রুতার জের ধরে খুন করে কানজর পাড়া এলাকার ইছা আহমদের ছেলে আবদু ছালাম,মধ্য হ্নীলার কানজর পাড়ার মৃত মোঃ তৈয়বের ছেলে খাইরুল বশর ও সদরের চৌফলদন্ডী ইউনিয়নের নতুন মহাল এলাকার মৃত আমির হামজার ছেলে জিয়াউর রহমান। নিহত জসিম উদ্দীন ঈদগাঁও দক্ষিণ মাইজ পাড়া এলাকার মোস্তাক আহমেদের ছেলে। পেশায় একজন করাতকল(সমিলের) মিস্ত্রী ছিল। সে সুবাদে ১নং আসামীর মালিকানাধীন হোয়াইক্যং ইউপিস্থ কানজর পাড়া স্থানে বিগত ১ বছর ধরে স’মিলে মিস্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিল।

এরই মধ্যে মালিকের সাথে মনোমালিন্য না হওয়ায় জসিম উদ্দীন বাড়িতে চলে আসে। ঘটনার কিছুদিন পূর্বে করাতকলের মালিক আবদু ছালামসহ অপর দুই আসামী ঈদগাঁওস্থ জসিমের বাড়িতে আসে। এদিন কোন ধরনের অসুবিধা হবে না মর্মে অভয় দিয়ে কাজে যাওয়ার অনুরোধ করলে এতে অনীহা ভ্রকাশ করে জসিম। বার বার অভয় দিলে জসিম করাত কলে ফিরে যায়। যাওয়ার পর মালিকের সাথে জসিমের কথাকাটি হয়। এক পর্যায়ে তর্কাতর্কিতে জড়িয়ে পড়লে মালিক আবদু ছালাম লোহার রড দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে জসিমকে বারি মারে। এসময় তার মাথার মারাত্মক জখম প্রাপ্ত হয়। বাঁধা দেওয়ার চেষ্টা করলে ২ ও ৩ নং আসামীরা রড দিয়ে উপর্যপুরী আঘাত করে। তার চিৎকারে স্থানীয়রা এগিয়ে আসলে পালিয়ে যায় খুনি চক্রের প্রধান আবদু ছালাম। স্থানীয়দের তোপের মুখে জসিমকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য উখিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায় অপর আসামী খাইরুল বশর ও জিয়াউর রহমান। কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। একইদিন রাত আনুমানিক ১০ টার দিকে আসামীরা ঘটনা আড়াল করতে সুকৌশলে নিহত জসিমের মৃতদেহ দাফনের জন্য পরিবারের কাছে নিয়ে আসে। দাফনের পূর্বে মৃত জসিমকে গোসল দেওয়ার সময় শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখমের চিহ্ন দেখতে পেলে সন্দেহ হয়।

এরই মধ্যে নিহত জসিমের স্ত্রী রিনা আক্তারের মুঠোফোনে টেকনাফ থেকে কল আসে। কলকারীও জানান, জসিমকে মেরে ফেলা হয়েছে। বিষয়টি লোমহর্ষক হওয়ায় তাৎক্ষনিক জসিমের স্বজনরা স্থানীয় পুলিশকে অবগত করেন। পরে ঈদগাঁও পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের এস.আই শাহাজ উদ্দীন নিহত জসিমের বাড়িতে গিয়ে সুরহতাল রিপোর্ট তৈরী করেন। সুরহতাল ও ময়না তদন্ত রিপোর্টে আঘাতে জখমের ফলে মৃত্যু হয় বলে সত্যতা পাওয়া যায়। বাদী রিনা আক্তার বলেন, আসামীগন একই উদ্দেশ্যে পরিকল্পিত ভাবে নারকীয় ঘটনার মাধ্যমে তার স্বামীকে হত্যা করা হয়েছে। ঘটনার পর থেকে বিভিন্ন মহল থেকে নানানভাবে চাঁপ প্রয়োগ করে আপোষ দেওয়ার হুমকিও প্রদান করেন বলে জানায়। ঘটনা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আসামীদের সঠিক নাম ঠিকানা সংগ্রহ করতে বিলম্ব হওয়ায় মাস খানেক আইনের কাছে যেতে পারেননি জসিমের স্বজনরা। অপরদিকে বিগত ২৬জুন রিনা আক্তার বাদী হয়ে তিন জনকে অভিযুক্ত করে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রট আদালত ৩ এ একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন যার নং সিআর ২৪০/১৮। মামলাটি আমলে নিয়ে বিজ্ঞ আদালত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন।

মামলটি তৎকালীন ওসি তদন্ত রাজু আহমদের নিকট হাওলা করেন। তিনি অন্যত্রে বদলী হয়ে গেলে দায়িত্ব পান অপারেশন অফিসার শরিফুল ইসলাম। ইতিমধ্যে তিনি তদন্ত কাজের দায়িত্ব পেয়ে আদালতে রির্পোট প্রেরণে গড়িমসি করছে বলে অভিযোগ করেন বাদী। এ ব্যাপারে অভিযুক্তদের সাথে বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগের চেষ্টা করেও না পাওয়ায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

জানতে চাইলে টেকনাফ মডেল থানার অফিসার্স ইনচার্জ রনজিত কুমার বড়ুয়ার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন- মামলার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পাওয়া গেছে। আদালতের নির্দেশে সংশ্লিষ্ট তদন্ত কর্মকর্তা মামলা তদন্ত চালাচ্ছে। স্পর্ষকাতর মামলা হওয়ায় একটু সময়ের প্রয়োজন। তবে খুব শ্রীঘ্রই আদালতে তদন্ত রিপোর্ট পাঠানো হবে। অপর একটি সূত্রে জানা গেছে, ঘটনাটি উভয়পক্ষের মধ্যে সমঝোতা হয়েছে।