রিয়াজুল হাসান খোকন ,বাহারছড়া, টেকনাফ :

টেকনাফ বাহারছড়ায় বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সংকট মোকাবেলায় স্থানীয় জনগণের সমস্যা, উদ্বেগ, উত্তরণের সমস্যা নিয়ে বাংলাদেশ বেতার সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ৭ অক্টোবর বিকাল ৪ টা সময় বাহারছড়া শামলাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে হলরুমে ঘন্টা ব্যাপি এই বেতার সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।

সাংবাদিক মোহাম্মদ আলীর জিন্নাহর সঞ্চালনায় ইউনিসেফ বাংলাদেশ এর অার্থিক সহযোগিতা এবং বিবিসি মিডিয়া এ্যাকশন এর কারিগরি দক্ষতায় উক্ত বেতার সংলাপে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রবিউল হাসান, বিশেষ অতিথি হিসেবে কক্সবাজার দক্ষিণ বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) আলী কবির, টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ সুমন বড়ুয়া, বাংলাদেশ বেতার কক্সবাজারের আঞ্চলিক পরিচালক মাহফুজুল হক, আন্তজার্তিক অভিবাসন সংস্থা (আইএমও) এর ট্রাণসিশন রিকভারি ডিভিশনের প্রধান সনজুস্তা সাহেনী, বাহারছড়া ইউপি চেয়ারম্যান মৌলভী আজিজ উদ্দীন, শামলাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাষ্টার এম,এ, মনজুর সহ স্থানীয় গন্যমান্যব্যক্তি বর্গ।

উক্ত অনুষ্ঠানে প্রশ্ন উত্তর পর্বে স্থানীয় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায়, স্থানীয় জেলে, কৃষক, সহ বিভিন্ন শ্রেণীর পেশার মানুষ অংশ নেন এবং রোহিঙ্গাদের জন্য তাদের বিভিন্ন সমস্যার কথা অতিথিদের কাছে তুলে ধরেন এবং তা সামাধানের জন্য অতিথিদের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। প্রশ্নকারীর মধ্যে মীর কাসেম নামে এক স্থানীয় ব্যক্তি বলেন আমাদের পশ্চিমে যে নদীনালা, খালবিল রয়েছে সেখানে আমরা স্থানীয়রা মাছ ধরতে গেলে প্রতিদিন আমাদের চাহিদা মত মাছ পেতাম, কিন্তু বাহারছড়ায় রোহিঙ্গা আসার কারণে তারা তাদের মাছের চাহিদা মিটাতে প্রতিদিন শতশত লোক আমাদের নদীনালা, খালবিলে মাছ ধরতে যায়, আর অতিমাত্রায় জাল মারার কারণে এখন কোনো মাছ নাই বললেই চলে, তার জন্য আমাদের মত নিম্ন আয়ের মানুষরা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি, তাই আমরা এর প্রতিকার চাই। তার উত্তরে নির্বাহী কর্মকর্তা রবিউল হাসান বলেন রোহিঙ্গারা নির্দিষ্ট  ক্যাম্পের বাইরে কোনো কাজ বা কোনো স্থানীয় কর্মকান্ডে জড়াতে পারবেনা। কারণ বাংলাদেশ সরকার চাইনা রোহিঙ্গাদের জন্য স্থানীয় জনগোষ্ঠীর বিভিন্ন পর্যায়ে প্রভাব পড়ুক, তাই এই অভিযোগটি খুব শ্রীঘ্রই সামাধান করা হবে, ইতি মধ্যে স্থানীয় জেলেদের মাঝে জেলে আইডি কার্ড বিতরণ করা হয়েছে। অন্যদিকে আবু ছৈয়দ নামে এক ব্যক্তি কক্সবাজার দক্ষিণ বিভাগীয় বনকর্মকর্তা আলী কবির কে প্রশ্ন করেন রোহিঙ্গাদের জন্য দিনে দিনে আমাদের বনভূমি উজাড় হচ্ছে, তারা লাকড়ির গাছ না পেয়ে বর্তমানে গাছের শিকড় পর্যন্ত জ্বালানীর জন্য তুলে ফেলতেছে, আর স্থানীয়রাও এর জন্য জ্বালানী চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে, আর বর্তমানে বাহারছড়াতে বনভূমির একেবারে নাজুক অবস্থা, তাই তার প্রতিকার ও বনভূমি রক্ষার জন্য বনবিভাগের কোনো বিশেষ উদ্যোগ আছে কিনা?। উত্তরে বনকর্মকর্তা আলী কবির বলেন রোহিঙ্গারা উখিয়া টেকনাফে আসাতে দেশের সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বনভূমির। কারণ রোহিঙ্গারা হাজার হাজার একর বনভূমি নষ্ট করে বসতি স্থাপন করেছে।এই ক্ষতি পূরণ করার মত নই। তার মধ্যে প্রায় দেড় হাজার দরিদ্র পরিবার সামাজিক বনায়নের উপকারভোগী হয়েও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কারণ রোহিঙ্গারা স্থানীয় সামাজিক বনায়নের প্রায় দুই হাজার একর বনভূমি ধ্বংস করেছে, তাই দরিদ্র পরিবার গুলো সামাজিক বনায়ন থেকে এক থেকে দেড় লক্ষ টাকা আয় থেকে বঞ্চিত হয়েছে। অন্যদিকে তার প্রতিকার হিসেবে এই বনায়ন রক্ষার জন্য কিছু এনজি সংস্থা নতুন ভাবে বনায়ন ও বৃক্ষরোপন করার জন্য আমাদের সাথে কাজ করতেছে। আর রোহিঙ্গাদের জ্বালানীর চাহিদা মেটাতে তারা আগামী বছরের মার্চ মাসে সবার মাঝে গ্যাসের চুলা বা তুষের বিশেষ লাগড়ি সরবরাহ করার পরিকল্পনা করেছে। তাহলে কিছুটা হলেও আমাদের বনায়ন রক্ষা করতে পারব। এছাড়া উক্ত বেতার সংলাপে আরো উঠে এসেছে রোহিঙ্গাদের জন্য বাহারছড়ার স্থানীয় মানুষের স্বাস্থ্য ঝুঁকি, বিশেষ করে এইডস রোগ নিয়ে সংশয়, প্রয়ঃনিষ্কাশ ব্যবস্থা, কমিনিউটি রাস্তাঘাটের ক্ষয়ক্ষতি, পাহাড়ি খালের সুস্বাদু পানি ধরে রাখার জন্য বিশেষ র্যাবার ড্রেম স্থাপন, স্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রোহিঙ্গা শিশু ভর্তি হওয়ার ঝুঁকি সহ স্থানীয় অনেক সমস্যাবলী। আর উক্ত অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচার করেন বাংলাদেশ বেতার কক্সবাজার আঞ্চলিক কেন্দ্র।