ডেস্ক নিউজ:
প্রেমপত্র লেখার চর্চা ধরে রাখতে তরুণদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ।
শনিবার (৬ অক্টোবর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫১তম সমাবর্তনে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য আবদুল হামিদ এ কথা বলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে এ সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়।

রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘কলেজে পড়ার সময় আমরা মোটামুটি প্রেমপত্র লিখেছি। প্রেমপত্র লেখার সময় অনেক বন্ধুবান্ধবের সহযোগিতাও নিছি। আমি নিছি, অনেকেই নিছে- ভালো কোটেশন, কীভাবে চিঠিটা লিখলে সুন্দর হবে।’

তিনি বলেন, ‘এখন তো দেখি চিঠি লেখা একেবারে বন্ধ। এখন ম্যাসেজ, নাকি কী বলে না বলে। লেখা হয় ইংরেজিরে বাংলা দিয়া, বাংলারে ইংরেজি দিয়া। ম্যাসেজ দিচ্ছে, ফেসবুক এসব হচ্ছে। আমি এগুলা বুঝি না, আমি তো ব্যাকডেটেড। আমি মোবাইল ব্যবহার করি, টিপে টিপে নাম্বার দিয়ে একটা টিপ দেই, মোবাইল যাকে করি সে ধরে। আর টেলিফোনে একটা টিপ দিয়ে রিসিভ করতাম পারি। এর বাইরে আর কিছু পারি না।’

‘সুতরাং আপনারা যে প্রেমপত্ররে একেবারে বিসর্জন দিছেন, তাইলে তো প্রেমের সাহিত্য মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হয়ে যাচ্ছে। আমি বলতে চাই, প্রেমপত্র লেখার চর্চাটা অন্তত রাখেন। তাহলে মোটামুটি প্রেম বেঁচে থাকবে, প্রেমপত্রের সাহিত্যটাও বেঁচে থাকবে বলে আমার বিশ্বাস।’

আবদুল হামিদ বলেন, ‘আরেকটা বিষয় আমার দুই-আড়াই বছরের নাতিটারে যখন একটু চিল্লাচিল্লি করে, খাওয়াইতে চাইলে খায় না তখন করি কী মোবাইলের মধ্যে গেম ও কার্টুন ছেড়ে দেই। ওইগুলোই দেখতাছে তারে যা দিছে তাই গিলতাছে। এই যে একটা অবস্থা।’

তিনি বলেন, ‘আমরাও তো ছোট বেলায় কান্নাকাটি করছি। আধাঘণ্টা একঘণ্টা চিল্লাইছি। যে চিল্লাইছি আমার মনে হয় এতে হার্টের বিকাশ হয়েছে। এখন এগুলা চিল্লাইতেও পারে না, মোবাইল দিয়ে বসাইয়া রাখে। এটাও চিন্তা-ভাবনার বিষয়।’

‘আজকাল পত্রপত্রিকায় অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহারের সমস্যার বিষয়ে লেখা হচ্ছে। আসলে সব ধরনের মোবাইলের অতিরিক্ত ব্যবহারটা কমানো প্রয়োজন।’

রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, ‘আগে আমরা ট্রেনে গেলে উঠাইয়া পাশের লোককে বলতাম, ভাই আপনার বাড়ি কই? বাসে উঠে বলতাম, ভাই আপনি কই যাইবেন? এখন কোনো কথা নেই, গিয়েই মোবাইলডা টিপতে থাকে। কেডা ওই বেডা জাহান্নামে যা, গোল্লায় যা, আমার কোনো খবর নেই। আমি আর আমার মোবাইল আছে আর কিচ্ছু নাই।’

তিনি বলেন, ‘এই যে অবস্থা এতে করে সামাজিক বন্ধন মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে, কেউ কাউকে চেনে না। খালি ফেসবুকের মাধ্যমে চেনা। সাক্ষাৎ দেখা আর মোবাইলের ফেসবুকের মাধ্যমে দেখা তো এক জিনিস না। এতে করে হৃদ্যতা, বন্ধুত্ব, বন্ধন- এগুলো সৃষ্টি হচ্ছে না।’

এগুলোর বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছেলেমেয়েদের অগ্রণী ভূমিকা রাখার অনুরোধ জানান রাষ্ট্রপতি।