মো. নুরুল করিম আরমান, লামা প্রতিনিধি :

বান্দরবানের লামা উপজেলায় গাছের সাথে বেঁধে নির্যাতনের মত ঘটনা সাজিয়ে এক কৃষককে ঘায়েল করার অপ-চেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলার ফাইতং ইউনিয়নের ফাদুরছড়া এলাকার ফারুকের স্ত্রী কোহিনুর বেগম বৃহস্পতিবার দুপুরে লামা প্রেসক্লাবের সাংবাদিকদের কাছে আবদুল করিমগংদের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ করেন। এ সময় তিনি অভিযোগ করে আরও বলেন, আমার স্বামী ও শশুরের জমি দখলে নিতেই সাজানো ঘটনার ছবি তুলে ও ভিডিও ধারণ করে বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচার করে বিভ্রান্তির চেষ্টা করছে আবদুল করিমগং। সুষ্ঠ তদন্ত পূর্বক এ ঘটনার প্রতিকার চেয়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনাও করেন কোহিনুর বেগম। এদিকে কোহিনুরের অভিযোগ সত্য নয় দাবী করে অভিযুক্ত আবদুল করিমের বরাত দিয়ে শ্যালক নুরুল আমিন বলেন, জমি দখলের জন্য আবদুল করিম ও তার মেয়েসহ চারজনকে গাছের সাথে বেঁধে মারধর করেছেন ফারুকগং। এ ঘটনায় থানায় মামলাও করা হয়েছে।

অভিযোগে জানা যায়, ফাইতং ইউনিয়নের ফাদুর ছড়া এলাকার বাসিন্দা নুরুল ইসলাম ও তার ছেলে মো. ফারুকের নামে ফাইতং মৌজায় ৫ একর দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণীর জমি রয়েছে। দীর্ঘ বছর ধরে এ জমিতে বহু কায়িক শ্রম ও অর্থ ব্যয়ে ফলজ বনজ বাগান সৃজন এবং বসতঘর নির্মাণ করে পরিবার পরিজন নিয়ে ভোগ করছেন তারা। গত কয়েক বছর আগে পাশের জহুর আলীর ছেলে আবদুল করিম ওই জমি তার স্ত্রী ছফুরা খাতুনের দাবী করে বিভিন্ন সময় জবর দখলের পায়তারা শুরু করে। এক পর্যায়ে ২০১৭ সালের ৩১ জুলাই আবদুল করিম গংদের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি ফৌজদারী মামলা করেন মো. ফারুক। মামলার প্রেক্ষিতে গত ৫ আগস্ট উচ্চ আদালতের আশ্রয় নেওয়ার জন্য পরামর্শ প্রদান করে আদালত। পরে ১০ সেপ্টেম্বর মো. ফারুক বাদী হয়ে তার জমিতে বিবাদীদের বিরুদ্ধে চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা চেয়ে বান্দরবান জেলা বিজ্ঞ য্গ্নু জজ আদালতে মামলা করেন। বাদীর জমিতে বিবাদীর বিরুদ্ধে কেন চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবেনা, এ বিষয়ে আদালতের বিচারক বিবাদীদেরকে জবাব দাখিলের নির্দেশ দেন। জবাব দাখিল না করে উল্টো গত মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে আবদুল করিম, আলী হোসেন, নুরুল আমিন, সিরাজ মিয়া, সুলতান আহমদ, মো. হোসেন, জহুরা খাতুন ও জসিম উদ্দিনের নেতৃত্বে ২০-২৫ জন সংঘবদ্ধ হয়ে জমি দখলের উদ্দেশ্যে ফারুকের বসতঘর ভাংচুর ও ঘরের মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। এ ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য আবদুল করিম ও তার লোকজন নিজেরাই নিজেদের হাত পা বেঁধে নির্যাতনের মত ঘটনা সাজিয়ে আবার স্বজনদের দিয়ে ভিডিও ধারণসহ ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুক এবং বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের মাধ্যমে বিভ্রান্তির চেষ্টা করেন। শুধু তাই নয়, ঘটনার পর এসব ছবি ও ভিডিও উপস্থাপন করে মো. ফারুকসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলাও করেন আবদুল করিমগং। ফারুক কর্তৃক আবদুল করিমগংদের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে দাখিলকৃত মামার প্রেক্ষিতে উপজেলা ভুমি অফিসের কানুনগো বিজয় শংকর চাকমা ২০১৭ সালের ৫ নভেম্বর বিরোধীয় জমিতে বিবাদীগন যেন জবর দখল করতে না পারে সে বিষয়ে পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্তে এক প্রতিবেদন পেশ করেন বলে জানা যায়।

ফারুকের স্ত্রী কোহিনুর বেগম বলেন, আবদুল করিমগং মিথ্যা নির্যাতনের মত ঘটনা সাজিয়ে আমাদেরকে ঘায়েলের চেষ্টা করছে মাত্র। এছাড়া এ ঘটনায় যে ১০জনকে বিবাদী করে থানায় মামলা করা হয়েছে; তার মধ্যে আমি, আমার স্বামীসহ পরিবারের ৫জন রয়েছি। অন্য বিবাদীদের আমরা চিনিনা। তাদেরকে কেন বিবাদীকরা হয়েছে তা বোধগম্য নয়। ঘটনার সময় আমার স্বামী মো. ফারুককে চকরিয়া উপজেলার বানিয়ারছড়া এলাকা থেকে আটক করে পুলিশে দেয় আবদুল করিমের স্বজনেরা। ফাইতং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. জালাল উদ্দিন বলেন, জমি নিয়ে ফারুক ও আবদুল করিমের মধ্যে বিরোধ চলে আসছিল। মঙ্গলবার দুই পক্ষের মধ্যে মারামারির ঘটনা শুনে তাৎক্ষনিকভাবে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিায়েছিলাম। এ বিষয়ে লামা থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক মো. জয়নাল আবেদীন বলেন, জমি নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে মারামারি হয়েছে শুনেছি। তবে গাছের সাথে বেঁধে নির্যাতনের ঘটনাটি সত্য কিনা বলা যাচ্ছেনা। এ বিষয়ে তদন্ত চলছে।