ডেস্ক নিউজ:

গত শুক্রবার ইন্দোনেশিয়ার সুলায়েসি দ্বীপে পরপর দু’টি বড় আকারের ভূমিকম্প আঘাত হানে। এর পরে আঘাত হানে সুনামি। এতে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত আট শতাধিক লোকের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। উদ্ধারকর্মীরা আশঙ্কা করছেন, সংখ্যাটি আরো অনেক বাড়তে পারে, এমনকি হাজার হাজার হতে পারে। কারণ এখন পর্যন্ত উদ্ধারকারী লোকজন ডোঙ্গালা ও মামুজু শহরের সাথে যোগাযোগই করতে পারেননি।

বিপর্যস্ত সুলায়েসি দ্বীপের লোকজন দুঃখের সাথে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়াও ব্যক্ত করেছেন, কিভাবে ১৯২৭ ও ১৯৬৮ সালের মতো কোনো পূর্বসতর্কতা ছাড়াই সুনামিটি আঘাত হানলো

সেন্সর ও সাইরেন

এবারের দুর্যোগের ফলে ইন্দোনেশিয়ার সতর্কীকরণ সিস্টেমটিও প্রশ্নের মুখে পড়েছে। কারণ ইন্দোনেশিয়ার ভূতাত্ত্বিক সংস্থা (বিএমকেজি) ওই দুই ভূমিকম্পের ফলে সুনামি সৃষ্টির আশঙ্কায় প্রথমত সতর্কতা জারি করেছিল; কিন্তু ৩৪ মিনিট পরে তা তুলে নেয়। শুক্রবারে পালুর সমুদ্রসৈকতে একটি অনুষ্ঠানে জড়ো হয়েছিল কয়েক শ’ মানুষ। ১৮ ফুট উচ্চতার ঢেউ তাদেরকে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। তাদের অধিকাংশেরই মৃত্যু হয়।

রোববার সুলায়েসির দুর্যোগ বিভাগের মুখপাত্র প্রকাশিত এক ভিডিওতে সুনামির প্রথম ঢেউয়ে পানির বিশাল প্রাচীর দেখা যায়, কিন্তু তখনো কোনো সাইরেন বাজেনি। পরে সেই ঢেউ রাস্তায় থাকা লোকজনসহ সব কিছু ভাসিয়ে নিয়ে যায়। পরবর্তী আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায়, ঢেউয়ের তোড়ে অনেক কিছু ভেসে যাচ্ছে।

সুনামি সতর্কতা জারি করার পরও এত দ্রুত তা উঠিয়ে নেয়ায় সামাজিক গণমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনার শিকার হয়েছে বিএমকেজি। তারা জানায়, তারা আধুনিক অপারেটিং সিস্টেমই অনুসরণ করেছিল এবং পালু থেকে ১২৫ মাইল দূরের জোয়ারের সেন্সর থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সতর্কতাটি তুলে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। বিএমকেজির ভূমিকম্প ও সুনামি সেন্টারের প্রধান রহমত ত্রিইয়োনো বলেন, আমাদের কাছে পালুর কোনো তথ্য ছিল না। পালুর কাছাকাছি জোয়ার পরিমাপক যন্ত্র না থাকায় যথাযথভাবে ঢেউয়ের উচ্চতা নির্ণয় করা যায়নি। তাই আমাদের কাছে যে তথ্য ছিল, তার ভিত্তিতেই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবং সুনামি সতর্কতা উঠিয়ে নিয়েছি।

তিনি বলেন, সবচেয়ে কাছের যে জোয়ার সেন্সর ছিল, সেটি কেবল সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা মাপতে পারত। এর দ্বারা ছয় সেন্টিমিটার ঢেউ মাপা যেত, এর চেয়ে বড় ঢেউ সেটি মাপতে পারত না। যদি আমাদের কাছে যথাযথ যন্ত্রপাতি থাকত অথবা পালু সম্পর্কে সঠিক তথ্য থাকত তাহলে সেটা হতো উত্তম।

ভবিষ্যতে আমরা এসবের ব্যবস্থা করব। তবে এখনো এটি পরিষ্কার হয়নি যে, পালুকে বিধ্বস্ত করা ওই সুনামিটি কি সতর্কতা তুলে ফেলার আগেই আঘাত হেনেছিল, নাকি পরে। ত্রিইয়োনো বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও পরীক্ষা করে আমরা হিসাব করেছি, সতর্কতা তুলে ফেলার আগেই সুনামিটি আঘাত হেনেছিল।

ইন্দোনেশীয় সরকারের সাথে কাজ করা সুনামি গবেষণাদলের প্রধান আবদুল মুহারি বলেন, এ ক্ষেত্রে যোগাযোগের সমস্যাটির বড় ধরনের ভূমিকা রয়েছে। কারণ বিএমকেজি যখন স্থানীয়পর্যায়ের লোকজনের সাথে যোগাযোগ করতে চাচ্ছিল, তখন কোনো লাইনই সচল ছিল না। ফলে তারা সতর্কতা তুলে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের লোকজন যখন স্থানীয়দের সহজভাবে সুনামি সতর্কতার বিষয়টি বুঝানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিল, তখনই হঠাৎ করে সতর্কতাটি তুলে নেয়া হয়। যোগাযোগ মন্ত্রণালয় পরবর্তী সময়ে আবারো টেক্সট মেসেজের মাধ্যমে সুনামি সতর্কতা জারির বিষয়টি জানানোর চেষ্টা চালাচ্ছিল, কিন্তু ভূমিকম্পের ফলে ওই এলাকার বিদ্যুৎ ও যোগাযোগব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে, ফলে কোনো সাইরেনও শোনা যায়নি।

ফানেল প্রভাব

আবদুল মুহারি বলেন, তিন লাখ আশি হাজার মানুষের বসতি পালুতে সুনামি মেকানিজমটাই তাদেরকে বিভ্রান্ত করে ফেলেছে। এলাকাটির ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে সুনামি আঘাত হেনেছে ফানেলে ঢোকার মতো করেই। ফলে সমুদ্রে জায়গাটিতে সুনামিটি স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক শক্তিশালী ও ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে। এ কারণেই খুব দ্রুত এটি এলাকাটিকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করে।