জে,জাহেদ.চট্টগ্রাম :

অনলাইনে চমকপ্রদ ও লোভনীয় বিজ্ঞাপন প্রচার করে সহজ সরল মানুষের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে কয়েকটি প্রতারক চক্র।

মাস্টার কপি, সুপার কপির নাম বলে বিক্রয়োত্তর সেবা ও ওয়ারেন্টি-গ্যারান্টির কথা বলে নষ্ট কোরিয়ারে পাঠাচ্ছে মোবাইল। ব্যবহার অযোগ্য মোবাইল ধরিয়ে দিয়ে বিকাশে বা কন্ডিশনে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। নজরকাড়া বিজ্ঞাপনে কেবল তাদের ফেসবুক পেইজ ও মোবাইল নাম্বার দেয়া থাকে। কোন ঠিকানা থাকেনা বিধায় প্রতারণার পরও দিব্যি বহাল তবিয়তে তারা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।

মোবাইল বিজ্ঞাপনে বিশ্বের নাম করা মোবাইল ফোন ব্রান্ডগুলোর মধ্যে আইফোন, স্যামসাং, অপ্পো, এমআই, সাউমিসহ বাংলাদেশে জনপ্রিয় সব মোবাইল অত্যন্ত সুলভ মুল্যে বিক্রির বিজ্ঞাপন প্রচার করে এসব চক্র। তারা এগুলোকে কপি কিংবা সুপারকপি দাবী করেন। এসব প্রোডাক্টের বিপরীতে গ্যারান্টি-ওয়ারেন্টি ও মূল্য ফেরত দেয়ার কথাও বলা হয়ে থাকে।

কিন্তু প্রকৃত ঘটনা অন্যরকম, যা কেবল ভুক্তভোগীরাই জানেন। কুরিয়ার সার্ভিসে আসা প্রোডাক্ট হাতে পেয়েই প্যাকেট না খুলে মূল্য পরিশোধ করতে হয়। মূল্য পরিশোধের পর ঐ প্রতারক চক্র ক্রেতাকে চেনাতো দূরের কথা মোবাইল ফোনও রিসিভ করেন না। ফলে ক্রেতাকে ভুলের মাশুল দিয়ে চুপ করে যেতে হয়।

সম্প্রতি চট্টগ্রামের এক ক্রেতা এরকম প্রতারণার শিকার হওয়ার পর এ প্রতিবেদকের সাথে কথা বলেন। আজম খান নামে ঐ ক্রেতার বক্তব্য থেকে জানা যায়, তিনি অনলাইনে আইফোন.কম নামে একটি পেইজে বিজ্ঞাপন দেখে মোবাইলে ০১৭১৪-৩৪৩৩৩৮ নাম্বারে কথা বলে ৫হাজার টাকায় একটি আইফোন ৮এস প্লাস সেট এর অর্ডার দেন।

বিজ্ঞাপনে সেটটি কোরিয়ার তৈরী এবং ১ বছরের গ্যারান্টি ও ২ বছরের ওয়ারেন্টির কথা বলা হয়েছিল। তাছাড়া সেটটিতে অরজিনাল ফিঙ্গার প্রিন্ট, ওয়াটার প্রুফ, ফোল এইচ ডি ডিসপ্লে, ১৩ মেগা ফিক্সেল ক্যামেরা, ১২৮ জিবি মেমোরী এবং ৩জিবি র‌্যাম থাকার কথা প্রচার করা হয়েছে। ভুক্তভোগী আজম খান তখন এসব ফিচার এবং কম দামের কথা চিন্তা করে একটি ফোনের অর্ডার করেন।

অর্ডার মোতাবেক ২৪জুন এস.এ পরিবহন কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে প্রতারক চক্র মোবাইল সেটটি আজম খানের নিকট প্রেরণ করেন। বিজ্ঞাপনে আইফোন.কম থাকলেও তারা এএস.কম নামে একটি মানি রিসিপ্ট পাঠান যেখানে ঠিকানার জায়গায় শুধু এলিফ্যন্ট রোড লিখা কোন হোল্ডিং কিংবা ভবনের নাম নেই। তিনি ৫হাজার টাকা দিয়ে এস.এ.পরিবহন থেকে সেটটি এনে খুলে দেখেন তাদের বিজ্ঞাপনের সাথে প্রেরিত সেট এর কোন মিল নেই। এটি একটি নষ্ট ও পুরোনো মোবাইল যা পুরোপুরিই ব্যবহার অযোগ্য। মেমোরী, র‌্যাম কিছুই নেই, ছবি তোলা যায়না, হ্যাঙ্গ হয়ে যায়, ডিসপ্লে ঘোলাটেসহ আরো নানাবিধ প্রবলেম। তিনি তাদেরকে মোবাইলে সমস্যার কথা জানালে, তারা কয়েকদিন ব্যবহার করে দেখে ফেরত পাঠাতে বলেন। তারা আরেকটি সেট চেঞ্জ করে দেয়ার কথা বলে গ্রাহককে আশ্বস্থও করেন। তিনি মোবাইলটি ব্যবহার অযোগ্য হওয়ায় তাদের সাথে কথা বলে এক সপ্তাহ পর ৩জুলাই এস.এ.পরিবহনে সেটটি ফেরত দেন।

ফেরত দেয়ার পর থেকেই তাদের প্রকৃত চেহারা তিনি বুঝতে পারেন। ঐ প্রতারক চক্র তার ফোন ধরেন না কিংবা ধরলেও তাকে চিনেন না। একেক সময় একেকজন কথা বলেন। দিচ্ছি, দিবেন বলে অনেকদিন আশ্বস্থ করার পর শেষতক বলছেন তাদের কাছে আর এ মডেলের সেট নেই। অন্য মডেল আছে সেটির দাম ১৫হাজার টাকা লাগবে। তখন আগের সেটটি পাঠাতে বললে তারা সেটিও পাঠাচ্ছেনা।

আজম খান বলেন, রাহাত নামে একজন তাকে সম্প্রতি গালমন্দও করেছেন ফোন করে জ্বালাতন করায়। তিনি এ ফোন দিবেন না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দেন। তাদের ঠিকানা কোথায় জানতে চাইলে একেক সময় একেক জায়গায় বলেন। এভাবেই তারা সহজ সরল মানুষকে বোকা বানিয়ে রাতারাতি কামিয়ে নিচ্ছেন প্রচুর অর্থ।

এদিকে এ প্রতিবেদক ০১৭১৪-৩৪৩৩৩৮ নাম্বারে ফোন করলে তাকেও খারাপ ভাষায় গালমন্দ করেন রাহাত নামের ঐ ব্যক্তি। তিনি বলেন, তাঁর বিরুদ্ধে যা করার করতে, তিনি এগুলো ভয় পান না। নিউজ, মামলা কোন কিছুইকে নাকি তিনি পরোয়া করেন না।

সারাদেশে এভাবে কত লোককে তারা নিঃস্ব করছেন তার কোন হিসেব নেই। সরকারের আইন শৃঙ্খলা ও নানা গোয়েন্দা বাহিনী দ্রুত এদের বিষয়ে ব্যবস্থা না নিলে তা মহামারি আকার ধারণ করবে বলে সংশ্লিষ্টদের ধারণা। প্রশাসনের কঠোর নজরদারীতে এ প্রতারক চক্রগুলোকে আইনের আওতায় আনা সম্ভব বলে অভিজ্ঞজনদের অভিমত। নাহয় একের পর এক সাধারন মানুষকে ফকির করবে এসব নামস্বর্বস্ব ভূয়া কোম্পানী ও ব্যবসায়ীরা।