ডেস্ক নিউজ:
একাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা দিতে বিএনপিতে তোড়জোড় চলছে। দেশের বিশিষ্ট নাগরিকদের সমন্বয়ে নির্বাচনকালীন সরকারের প্রস্তাব দিতে পারে দলটি। এর বাইরে বর্তমান সংবিধানের মধ্যে থেকেও কীভাবে নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার গঠন করা যায়, তা নিয়েও আলোচনা চলছে দলটির মধ্যে। আগামী অক্টোবরের যেকোনও সময়ে সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচনকালীন সরকারের এ রূপরেখা দেওয়া হবে। দলটির একাধিক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
বিএনপির একটি সূত্র জানায়, নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের রূপরেখার সঙ্গে বিএনপিপন্থী কয়েকজন বুদ্ধিজীবীও জড়িত আছেন। তাদের পক্ষ থেকে নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের একটি খসড়া রূপরেখাও দেওয়া হয়েছে। আর সেই খসড়া রূপরেখার বিষয়ে মতামত দিতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সব সদস্যকে বলা হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও জোট থেকে নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে যেসব প্রস্তাব এসেছে, সেগুলো নিয়েও আলোচনা চলছে। অক্টোবরের মাঝামাঝি দলটির স্থায়ী কমিটির নেতারা বৈঠক করে বুদ্ধিজীবীদের দেওয়া খসড়া ও বিভিন্ন দলের দাবিগুলো থেকেই নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা চূড়ান্ত করবেন। এরপর ঘোষণা দেওয়া হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘অক্টোবর মাসের ১৯ তারিখে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। ওই বৈঠকে বুদ্ধিজীবীদের দেওয়া নির্বাচনকালীন সরকারের খসড়া রূপরেখা এবং বিভিন্ন দলের নির্বাচনকালীন সরকারের দাবিগুলো নিয়ে আলোচনা হবে। এরপরেই নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা চূড়ান্ত করা হবে।’
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের প্রস্তাব নিয়ে কাজ চলছে। তবে সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ বলা সম্ভব না।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার  বলেন, ‘বর্তমান সংবিধানের মধ্যে থেকে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা যেতে পারে। কারণ, এই সরকার তো শুধু নির্বাচন পরিচালনা এবং রুটিন ওয়ার্ক করবে। আর কিছু তো না।’
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘সহায়ক সরকারের রূপরেখা প্রায় চূড়ান্ত। শিগগিরই তা পেশ করা হবে। বিএনপির সহায়ক সরকারের প্রস্তাবে কোনও রাজনৈতিক ব্যক্তিকে প্রধান না করার প্রস্তাব থাকবে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির একটি সূত্র জানায়, বিএনপির নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের মূল ‘কনসেপ্ট’ হচ্ছে নির্দলীয় নির্বাচনকালীন সরকার। সুতারাং কোনও রাজনৈতিক দলের সভাপতি, সভানেত্রী বা চেয়ারপারসনকে প্রধান করে নির্বাচনকালীন সরকার হবে না। এটা নিশ্চিত।
সূত্র জানায়, নির্বাচনে প্রার্থী হতে চান— এমন ব্যক্তি বা দলের নেতাদের এই সরকারের বাইরে রাখার প্রস্তাব থাকবে। এছাড়াও সংবিধানের মধ্যে থেকে কীভাবে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা যায়— এমন বিকল্পও থাকবে বিএনপির প্রস্তাবে।
সূত্রটি জানায়, নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখার খসড়াটি লন্ডনে থাকা দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকেও দেখানো হয়েছে। তারেক রহমানও এ নিয়ে বেশকিছু পরামর্শ দিয়েছেন।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য জানান, সব রাজনৈতিক দল থেকে লোক নিয়ে নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হবে। অর্থাৎ সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচনকালীন একটি ‘সর্বজনীন সরকার’ গঠন করার প্রস্তাব থাকবে বিএনপির পক্ষ থেকে। এরপর তা বাস্তবায়নে গণসংযোগেও নামবে বিএনপি।
এদিকে দলটির অসমর্থিত একটি সূত্র জানায়, আগামী শনিবারের (২৯ সেপ্টেম্বর) সমাবেশেও নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের রূপরেখা পেশ করা হতে পারে। আর এই সমাবেশে বিকল্পধারার চেয়ারম্যান অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী ও গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেনকে আমন্ত্রণ জানানো হবে। তাদের উপস্থিতিতে এই রূপরেখা পেশ করা হবে।
এদিকে বুধবার (২৬ সেপ্টেম্বর) সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে কেন বিএনপি এই জনসভা করতে চাইছে— সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, ‘দলের নীতিনির্ধারণ নিয়ে কথা বলা ও দলের ভবিষ্যৎ কর্মসূচি দেওয়ার জন্য এই সমাবেশের আয়োজন করা হচ্ছে।’
সহায়ক সরকারের প্রস্তাবের বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে কাজ চলছে। যেকোনও সময় তা পেশ করা হবে। সহায়ক সরকারের প্রস্তাবে একাধিক অপশন থাকতে পারে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘সহায়ক সরকার বা তত্ত্বাবধায়ক যে নামেই হোক না কেন, এর মূল ভিত্তি হচ্ছে একটা সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার। যারা শুধু নির্বাচনই পরিচালনা করবে।’