আবার আল্লাহর নৈকট্য লাভে ইবাদত-বন্দেগির মধ্যে নফল ইবাদতের গুরুত্ব অনেক বেশি। তবে এ নফল ইবাদত তখনই কার্যকরী টনিক হিসেবে কাজ করবে, যখন মানুষ ফরজ ওয়াজিব ও সুন্নাত ইবাদত ও আমলগুলো যথাযথভাবে পালন করে।

মানুষ আল্লাহর নৈকট্য লাভে ইবাদত-বন্দেগির ক্ষেত্রে সাধারণত যে ভুলগুলো করে থাকে তার কিছু সংক্ষিপ্ত চিত্র উদাহরণস্বরূপ উল্লেখ করা হলো-

> ফরজ পালনে অনিহা
– তাহাজ্জুদ নামাজ পড়তে গিয়ে ফজরের ফরজ নামাজ কাজা করা।
– ফরজ জাকাত আদায় না করে নফল দান-সাদকা করা।
– রমজানের রোজা না রেখে শবে বরাত, ইয়াওমে আরাফা ও মহররমের রোজা পালন করা।
– নিজের ফরজ হজ আদায় না করে অন্যের বদলি হজ কিংবা বারবার ওমরা আদায় করা।
– ফরজ দ্বীনি ইলম অর্জন না করে অন্য শিক্ষায় নিজেকে নিয়োজিত করা।
– সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ না করে নফল ইবাদতের প্রতি অন্যকে আহ্বান করা।
– স্ত্রী-সন্তানের প্রতি অর্পিত দায়িত্ব যথাযথ পালন না করে নফল কাজে বেরিয়ে পড়া ইত্যাদি।

যদিও উল্লেখিত নফল কাজগুলো অবশ্যই কল্যাণ ও সাওয়াবের কাজ। কিন্তু আগে ফরজ ইবাদত, আদেশ-নিষেধ ও দায়িত্ব পালন করা আবশ্যক। কেননা ফরজ কাজ আদায় না করলে গোনাহগার ও কঠিন শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে।

> হারাম বর্জন ও হালাল গ্রহণে অনিহা
হারাম বর্জন এবং হালাল গ্রহণ থেকে সুন্নাত ও নফল ইবাদতকে গুরুত্ব দেয়া যাবে না। কারণ সুন্নাত ও নফল ইবাদত নয় বরং ফরজ ইবাদত পালনের আগে হারাম বর্জন করা আরো বেশি জরুরি। হারাম কাজের সঙ্গে নিজেকে জড়িত রেখে হালাল গ্রহণ না করে যত ফরজ ইবাদতই করা হোক না কেন তা গ্রহণযোগ্য হবে না। যেমনি ভাবে হালাল খাদ্য গ্রহণ করা ছাড়া কোনো ইবাদতই কবুল হয় না।
অথচ মানুষ হারাম বর্জন না করে হালাল উপার্জন না করেই সুন্নাত কিংবা নফল ইবাদতের দিকে ছুটে বেড়ায়।

> সৃষ্টির খেদমত বা সেবায় অনিহা
নফল ইবাদতের ক্ষেত্রে সৃষ্টির সেবা থেকে নিজেকে বিরত রেখে ব্যক্তিগত নফল কাজে গুরুত্ব প্রদান করা। অথচ কুরআন ও হাদিসে মানুষের বা কোনো সৃষ্টির উপকার করা, সাহায্য করা, সেবা করা, চিকিৎসা করা, কারো সাহায্যের উদ্দেশ্যে সামান্য পথ চলার প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
এমনকি কোনো ব্যক্তি অন্যের ক্ষতি বা কষ্ট প্রদান থেকে নিজেকে বিরত রাখাও অধিক সাওয়াব ও কল্যাণের কাজ।
আল্লাহর রহমত বরকত ক্ষমা ও সন্তুষ্টি অর্জনে সৃষ্টি জগতের সেবায় নিজেদের আত্মনিয়োগ করা নফল ইবাদতের চেয়ে বেশি ফলদায়ক।

অপ্রিয় হলেও সত্য যে-
মানুষ ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নাত ও সর্বোত্তম নফল কাজ ছেড়ে দিয়ে সাধারণ নফল কাজে নিজেদের নিয়োজিত করে রাখে। যা কোনোভাবেই কাম্য নয়, সুতরাং আল্লাহর নৈকট্য লাভে ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নাত ও সৃষ্টির সেবার পাশাপাশি হারাম বর্জন এবং হালাল গ্রহণ করার পর নফল ইবাদত বন্দেগিতে নিজেদের নিয়োজিত করা উচিত।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে উল্লেখিত ভুলগুলো থেকে নিজেদের হেফাজত করার তাওফিক দান করুন। ফরজ ওয়াজিব, সুন্নাত, সৃষ্টির সেবা, হারাম বর্জন এবং হালাল গ্রহণের পাশাপাশি অন্যান্য নফল ইবাদত করার তাওফিক দান করুন। আমিন।