ডেস্ক নিউজ:
গণফোরাম সভাপতি ও জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন বলেছেন, আমি বঙ্গবন্ধুর সান্নিধ্য পেয়েছি। বঙ্গবন্ধু আমাকে সদ্যস্বাধীন দেশের সংবিধান রচনার দায়িত্ব দিয়েছিলেন। এটা আমার সবচেয়ে বড় পাওয়া। ব্যক্তিগতভাবে আমার চাওয়া-পাওয়ার আর কিছুই নেই। সংবিধান অনুযায়ী জনগণের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করাই রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে আমার পবিত্র কর্তব্য।

শনিবার রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া আয়োজিত নাগরিক সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

কামাল হোসেন বলেন, আমরা শুধু ক্ষমতার রাজনীতি করি না, আমরা জনগণের ক্ষমতায়নে বিশ্বাস করি। জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে ফিরিয়ে দেয়াই আমাদের রাজনৈতিক লক্ষ্য। আমরা আমাদের সাধ্য অনুযায়ী কাজ করে যাচ্ছি। আমরা জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে চাই। আপনারা জানেন- বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের ইতিহাস যেমন আছে, গণতন্ত্রকে হত্যা করে জনগণের ভোটাধিকার হরণ করার ইতিহাসও আছে।

তিনি বলেন, আজ বাংলাদেশে উন্নয়নের নামে অবাধে লুটপাট চলছে। ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করা হচ্ছে। মেগা প্রকল্পের নামে জনগণের টাকা অপচয় করা হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকে টাকা ও স্বর্ণ গচ্ছিত রাখাও নিরাপদ নয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ধনীর সংখ্যা বাড়ার যে প্রবণতা তাতে বাংলাদেশের নাম সবার আগে- এটা আমাদের জন্য লজ্জার বিষয়। এ থেকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক বৈষম্যের একটা ভয়াবহ চিত্র ফুটে উঠেছে।

প্রবীণ এই আইনজীবী বলেন, এখানে ধনী আরও ধনী হচ্ছে, গরিব আরও গরিব হচ্ছে, মধ্যবিত্তরা টিকে থাকতে হিমশিম খাচ্ছে। বহির্বিশ্বের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক প্রতিনিয়ত খারাপ হচ্ছে। তাই জনশক্তি রফতানিতে ধস নেমেছে। প্রবাসীরা দেশে বিনিয়োগে ভরসা পাচ্ছেন না। কতিপয় ধনিক শ্রেণি দেশের সম্পদ লুট করে বিভিন্ন দেশে সেকেন্ড হোম গড়ে তুলছে।

জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার আহ্বায়ক বলেন, কেউ কেউ আমাদের এ জাতীয় ঐক্যের প্রচেষ্টাকে ক্ষমতায় যাওয়ার ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছে। আমরা প্রকাশ্য সভা করছি। কোনো গোপন বৈঠক করছি না। যারা জনগণের শক্তিকে ভয় পায়, তারা জনগণের সংগঠিত হওয়ার প্রচেষ্টাকে ষড়যন্ত্র বলে জনগণকেই অপমান করছে।

তিনি বলেন, আমরা জনগণের ভোটাধিকারসহ মৌলিক অধিকার, মানবাধিকার ও সাংবিধানিক অধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে কার্যকর গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও আইনের নিরপেক্ষ প্রয়োগ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে- বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার জন্য প্রচেষ্টা চালাচ্ছি। জনগণ তাতে ব্যাপক সাড়া দিয়েছে। মৌলিক বিষয়ে মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে আছে। এখন সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করার সময় এসেছে। আমি বিশ্বাস করি, আমাদের প্রচেষ্টা সফল হবে, ইনশাআল্লাহ।

কামাল হোসেন বলেন, আপনারা নিজ নিজ এলাকায় ফিরে গিয়ে সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলুন, মুক্তির বার্তা নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়ান। মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করুন। অতীতের জনগণের বিজয়কে কেউ ঠেকাতে পারে নাই; ভবিষ্যতেও পারবে না, ইনশাআল্লাহ।

গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান সঞ্চালন করেন ঐক্য প্রক্রিয়ার সদস্য সচিব আ ব ম মোস্তফা আমীন।

সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ, ড. আব্দুল মঈন খান, খন্দকার মোশাররফ হোসেন, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসীন মন্টু, আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের চেয়ারম্যান নূর হোসেন কাশেমী, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি) চেয়ারম্যান আন্দালিভ রহমান পার্থ প্রমুখ।