ইউছুফ আরমান

ইতিহাসের ধর্ম পরিবর্তন হওয়া। ইতিহাসের এ নিয়মের ধারাবাহিকতায় ৬৬১ খ্রিস্টাব্দে খোলাফায়ে রাশেদীনের অবসান ঘটিয়ে উমাইয়া রাজতন্ত্রের সূচনা করেন। এ উমাইয়া শাসনামলে ইয়াজিদের চক্রান্তে বিষাদময় কারবালার ইতিহাসের সূত্রপাত হয়। এ কারবালার নৃশংসতা সমগ্র মুসলিম জাহানে শিহরণ জাগিয়ে তোলে। এ মর্মান্তিক ঘটনার মাধ্যমে ইমাম হুসাইনের আত্মাহুতি সর্বকালে-সর্বদেশে একটি গৌরব উজ্জ্বল আদর্শরূপে পরিগণিত হয়।
কারবালা হত্যাকান্ডের কারণ সমূহঃ- কারবালা প্রান্তরের বিষাদময় ঘটনা সংঘঠিত হওয়ার কারণ প্রধানত দু’টি। যথা- প্রথমত- ইয়াযিদের খিলাফতের বিরোধিতা, দ্বিতীয়ত- মুয়াবিয়ার সন্ধিভঙ্গ। এ হত্যাকান্ডের পিছনে আরো বহু কারণ রয়েছে।
বিষাদময় কারবালার ইতিহাসঃ- ইমাম হুসাইন ইয়াযিদের মনোনয়ন মেনে নিয়ে কুফাবাসীর সাহায্য লাভের আশায় কুফা যাত্রা করেন। বিভিন্ন ঘটনার মধ্য দিয়ে কারবালার মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে।
ইমাম হুসাইনের কুফা যাত্রাঃ- আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইরের উৎসাহ ও প্রেরণা এবং কুফাবাসীর সকল প্রকার আশ্বাস ও সাহায্যের উপর নির্ভর করে হুসাইন কুফা যাওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। তিনি সুহৃদবর্গের বাধা নিষেধ অমান্য করে ২০০ অনুচর সহ স্বপরিবারে যাত্রা করেন।
হুসাইন কারবালার অবরুদ্ধঃ- ইমাম হুসাইনের কুফা যাত্রা সংবাদ পেয়ে ইয়াযিদ তার গতিরোধ করার জন্য কুফার শাসনকর্তা উবায়দুল্লাহ কে নির্দেশ দেন। ইমাম হুসাইন কুফার নিকটবর্তী হলে আমীর উবায়দুল্লাহর নির্দেশে উমর বিন সাদের নেতৃত্ব একদল অশ্বারোহী বাহিনী তাকে কুফায় প্রবেশে বাধা দান করে। বিচলিত হুসাইন কুফার ২৫ মাইল উত্তরে ফোরাত নদীর তীরবর্তী ঐতিহাসিক কারবালার প্রান্তরে শিবির স্থাপন করতে বাধ্য হন।
হুসাইনের শান্তি প্রস্তাবঃ- কুফা বাহিনীর সেনাপতি উমর বিন সাদ হুসাইন কে বিনা শর্তে আত্মসমর্পণ করাতে ব্যর্থ হলে তাকে বাধ্য করান উপায় হিসেবে জনকষ্ট সৃষ্টি করার জন্য ফোরাত নদীর পথ বন্ধ করে দেন। অবস্থার গুরুত্ব অনুধাবন করে হুসাইন মক্কায় প্রত্যাবর্তন করতে তুর্কী সীমান্তের দুর্গে অবস্থান করতে কিংবা পরিস্থিতি আলোচনার্থে ইয়াযিদের নিকট উপস্থিত হওয়ার প্রস্তাব দেন। ঐতিহাসিক William Muir এর মতে, “Well had it been for the Omayyad house, if the prayer had been agreed to.” কিন্তু তাও ব্যর্থ হলে তিনি শেষ পর্যন্ত যুদ্ধ করতে মনস্থ করেন।
৯ই মহরমঃ- শত্রুপক্ষ নদীর পথ বন্ধ করলে পানির অভাবে হুসাইন শিবির হাহাকার পড়ে যায়, হুসাইন অসহায় ও নিষ্পাপ শিশু ও মহিলাদের প্রতি সদয় জন্য অসুরোধ জানিয়ে ব্যর্থ হন এবং হুসাইন তার আত্মীয় স্বজনদের মদিনায় পাঠিয়ে দিতে চেয়েও ব্যর্থ হন।
১০ই মহরমের মর্মান্তিক ঘটনাঃ- ১০ই মহরম ভোরে নারী ও শিশুদের আর্তহাহাকারের মধ্যে দুই অসম সেনা দলের যুদ্ধ শুরু হল ৬৮০ খ্রিস্টাব্দ ১০ অক্টোবর কারবালার প্রান্তরে। সর্ব প্রথম ভ্রাতুষ্পুত্র কাসিম দুশমনের আঘাতে শাহাদাত বরণ করলেন। হুসাইনের পরিবারের সকলই একে একে শাহাদাত বরণ করলেন। অবশেষে তৃষ্ণার্ত হুসাইন শিশুপুত্র কে কোলে নিয়ে ফোরাত নদীর দিকে অগ্রসর হলেন। তিনি দুশমনের তীরের আঘাতে ফিরতে বাধ্য হলেন। তীরের আঘাতে পুত্র পিতার বাহু বন্ধনে শহীদ হলেন। হুসাইন তাবুর সামনে এসে বসে পড়লেন। এ সময় এক মহিলা তার সম্মুখে এক পেয়ালা পানি উপস্থিত করলেন। তিনি যখন পানির পেয়ালা মুখের কাছে তুলেছিলেন তখন দুশমনের বর্শা তার বুকে বিদ্ধ হল। রক্তপাতে দুর্বল হয়ে তিনি মাটিতে পড়ে গেলেন এ সময় পাষন্ড সীমার ইমাম হুসাইনের মস্তক দেহ থেকে ছিন্ন করে কুফার দরবারে নিয়ে যায় এবং নৃশংস উবায়দুল্লাহ ইমাম হুসাইনের মুখমন্ডলে বেত্রাঘাত করে। এ করুণ দৃশ্য কঠিন হৃদয়বিদারক ও বিগলিত করে। ঐতিহাতিসক গীবন এর মতে, In a distance age the climate the tragic scene of the death of Husain will awaken the sympathy of the coldestreader.
শিয়া মতবাদের জন্মঃ- কারবালার ঘটনা মুসলিম সমাজ কে দ্বিধাবিভক্তি করে এবং শিয়া সম্প্রদায়ের জন্ম দেয়। শিয়ারা শুধু দল নয় একটি সম্প্রদায়ও বটে। মহানবী (স) এর ইন্তিকালের পর কিছু সংখ্যক লোক হযরত আলী (রাঃ) কে মহানবী (স) এর নিকটাত্মীয় হিসেবে খিলাফতের প্রথম দাবিদার বলে মনে করেন। ইসলামের ইতিহাসে এরাই শিয়াত-ই-আলী বা আলীর দল নামে পরিচিত। পরবর্তীকালে হযরত আলীর মৃত্যু (৬৬১সালে), ইমাম হাসানের মৃত্যু (৬৬৯সালে), ও সর্বশেষ কারবালার প্রান্তরে ইমাম হুসাইনের মৃত্যু কে (৬৮০সালে) কেন্দ্র করে শিয়ারা আরো বেশি সুসংগঠিত হয়ে শক্তিশালী দলে পরিণত হয়। Historian P.K Hitti এর মতে, The blood of Husain even more than that of his father proved to by the seed of Shiite churech shiaism was born on the teenth of Muharram.” ১০ই মহরমই শিয়া মতবাদ জন্ম লাভ করে এবং তারা উমাইয়া খিলাফতের জন্য Challenge হয়ে দেখা দেয়।
পরিশেষে কারবালার হৃদয়বিদারক হত্যাকান্ড ইয়াযিদের শাসনকাল কে চির কলংকিত করে রেখেছে। যার ফলশ্রুতিতে কারবালার বিয়োগান্তক এ ঘটনা কে মুসলিম জাহান শোক দিবস হিসেবে আজও পালন করে।

তথ্যসূত্রঃ ইসলামী সভ্যতা, ইসলামের ইতিহাস

লেখক পরিচিতি: ইউছুফ আরমান, কলামিষ্ট, সাহিত্যিক, শিক্ষানবিশ আইনজীবি্ 
ফাজিল, কামিল , বি.এ অনার্স, এম.এ, এলএল.বি, দক্ষিণ সাহিত্যিকাপল্লী, বিজিবি স্কুল সংলগ্ন রোড়, ৬নং ওয়ার্ড, পৌরসভা, কক্সবাজার
০১৮১৫-৮০৪৩৮৮/ ০১৬১৫-৮০৪৩৮৮
yousufarmancox@gmail.com