আব্দুস সালাম, টেকনাফ:

দুর্যোগ মোকাবিলায় বাংলাদেশের সক্ষমতা পৃথিবীর উন্নত বিশ্বে বিশেষভাবে সমাদৃত হলেও সাম্প্রতিক সময়ের রোহিঙ্গা সংকট তাতে ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে। সম্ভাব্য বড় ধরণের প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় বিশেষ সমন্বয়ের প্রয়োজন বলে মনে করছেন উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার সদস্যবৃন্দ। ১৯ সেপ্টেম্বর (বুধবার) টেকনাফ উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে উপজেলা পরিষদের ইমার্জেন্সি কন্ট্রোল রুমের উদ্যোগে ঘুর্ণিঝড় বিষয়ক প্রস্তুতিমূলক কর্মশালা অনুষ্টিত হয়।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রবিউল হাসানের সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আহমদ। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন টেকনাফ উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট প্রনয় চাকমা, ক্যা¤প-ইনচার্জ মোঃ আবদুর রহমান, ক্যা¤প কমান্ডার ক্যাপ্টেন মুক্তাদির, আইএসসিজির ইমার্জেন্সি ইউনেটর প্রধান মার্কো বুনো। টেকনাফ পৌর মেয়র (ভারপ্রাপ্ত) আব্দুল্লাহ মনির ও উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান তাহেরা আক্তার মিলি,হোয়াক্যং ইউপি চেয়ারম্যান মাঃ নুর আহমদ আনোয়ারী, বাহারছড়া ইউপি চেয়ারম্যান মাঃ আজিজ উদ্দিনসহ উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার কমিটির সদস্যবৃন্দ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থাসমূহের প্রতিনিধিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীরা ৯১-এর ঘুর্ণিঝড়ের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক সময়ে সফলভাবে কিভাবে মোরা-র মোকাবিলা করেছেন তা তুলে ধরেন। দুর্যোগ মোকাবিলায় সরকার সাধারণত স্থানীয় জনগণের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েই পরিকল্পনা করে থাকে। কিন্তু স্থানীয় জনগানের দ্বিগুণ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর আগমন সংকটকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। এক্ষেেত্র উভয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে পার¯পরিক সহযোগিতার ধারাবহিকতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন অংশগ্রহণকারীরা। কেননা রাখাইন রাজ্যের গণহত্যা ও বর্বরোচিতা নির্যাতনের কারনে যে মানুষেরা জীবন বাজি রেখে বাংলাদেশে এসেছিলেন তাদের প্রাথমিকভাবে আশ্রয় দিয়েছেন এই স্থানীয় জনগণই। কিন্তু সময়ের সঙ্গে পরিস্থিতির যেন নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে সেই দিকে খেয়াল রাখার জন্য অনুরোধ করেছেন আলোচকবৃন্দ। একই সঙ্গে বাস্তবায়নকারী সংস্থা সমূহের সঙ্গে কার্যকর সমন্বয় উদ্যোগের জোর দাবি জানিয়েছেন তারা।

স্বগত বক্তব্যে টেকনাফের সহকারী কমিশনার প্রণয় চাকমা প্রকৃতির ভার্সাম্য রক্ষার প্রতি যতœশীল হয়ে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর পাশিপাশি স্থানীয় মানুষের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানান।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আইএসসিজি-র ইমার্জেন্সি ইউনিটের প্রধান মার্কো বলেন-ইতোমধ্যে টেকনাফে ইমার্জেন্সি কন্ট্রোল রুমের কার্যক্রম শুরু হয়েছে যা উপজেলা নির্বাহী অফিস, শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশন, বাংলাদেশ আর্মি এবং আইএসসিজির সমন্বয়ে গঠিত।

দুর্যোগকালীন সময়ে উপজেলার জরুরী সাড়া প্রদানে যা কার্যকর সমন্বয়ে ভূমিকা রাখবে ।ক্যাপ্টেন মুক্তাদির তুলে ধরেন দুর্যোগে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবদান ঐতিহসিক এবং টেকনাফ উপজেলার যে কোনও প্রয়োজনী পরিস্থিতিতে সাড়া দিতে সর্বদা প্রস্তুত।

ক্যা¤প-ইনচার্জদের পক্ষ থেকে আবদুর রহমান বলেন- প্রাকৃতিক কিংবা মানবসৃষ্ট যে কোনও ধরনের দুর্যোগ মোকাবেলায় বাংলাদেশ সরকারের সক্ষমতা সর্বত্র প্রশংসিত।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপজেলা চেয়ারম্যান বলেন-ঘুর্ণিঝড় মোকাবেলায় সরকারের উদ্যোগের পাশাপাশি অন্যান্য সংস্থাগুলোকে আরও কার্যকর পদক্ষপে নেওয়ার দরকার এবং বিশেষত দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রস্তুতিমূলক সকল ধরনের উদ্যোগকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনায় নিতে অনুরোধ করেন।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কমকর্র্তা ঘোষনার মধ্য দিয়ে কর্মশালার সমপ্তি ঘোষনা করেন। ঘুর্নিঝর মোকাবেলায় সক্ষমতা এবং সীমাবদ্ধতাগুলো বিবেচনায় নিয়ে সম্ভাব্য করনীয়গুলো এ ঘোষনাপত্রে উঠে আসে। আয়োজনের সামগ্রিক সঞ্চলনায় ছিলেন- আইএসসিজি-র ইমার্জেন্সি কোর্ডিনেটর অফিসার, তাহের খান।