অসীম চন্দ্র বনিক


উন্নয়নের মূল ভিত্তিকে টেকসই করে , শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রাথমিক শিক্ষাই মূল অংশ। গবেষকদের বিভিন্ন গবেষণায় এ ধারণা প্রমাণিত হয়েছে যে, প্রাথমিক শিক্ষায় বিনিয়োগ মূল উন্নয়নের ভিত্তিকে শক্তিশালীকরণ। নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন তাঁর বিভিন্ন গবেষণা ও তাঁর লিখিত বিভিন্ন গ্রন্থে বার বার উল্লেখ করেছেন যে, চীনের প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থায় চীন সরকারের সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদানকে উন্নয়নের মূল ভিত্তি ও অগ্রযাত্রায় ত্বরান্বিত করেছে। ভারতের প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থাকে সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদানের বিষয়টির ক্ষেত্রে তিনি সবসময় চীনের উদাহরণ টেনেছেন। তিনি বলেন ভারত থেকে চীন এগিয়ে যাচ্ছে শুধুমাত্র প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থায় সর্বাধিক বিনিয়োগকে গুরুত্ব দেয়ার জন্য।

২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট বাজেট ৪,৬৪,৫৭৩ কোটি টাকা। মোট বাজটের মধ্যে শিক্ষা প্রযুক্তি খাতে বাজেট ৬৭,৯৪৪ কোটি টাকা। শিক্ষা প্রযুক্তি খাতে বাজেট আরো বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। শিক্ষা প্রযুক্তি খাতের উক্ত বাজেটের মধ্যে সিংহভাগ প্রাথমিক শিক্ষায় বিনিয়োগ করা হলে দেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে।

বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থায় বিভিন্ন ধারা আছে। বাংলা, ইংরেজি ও আরবী। এ মাধ্যমগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো প্রাথমিক শিক্ষা বাংলা মাধ্যম। এ মাধ্যমে সরকারের সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ করা উচিত।

ইসলামের পথ প্রদর্শক হযরত মুহাম্মদ(সা:) বলেছেন “ দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত জ্ঞান অর্জন কর”। অর্থাৎ শিক্ষাই মুক্তির পথ। প্রাথমিক শিক্ষার অবকাঠামোর পাশাপাশি শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করার প্রতি সরকারের বেশি মনোযোগ দেয়া উচিত । পাশাপাশি প্রাথমিক শিক্ষায় শিক্ষার্থীদের কি কি পড়াতে হবে, কতটুকু পড়াতে হবে তা নিয়ে গবেষণা করে সিলেবাস প্রণয়ন করা উচিত। সরকারের একজন মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তা হিসেবে আমি মনে করি প্রাথমিক শিক্ষায় বর্তমানে চালুকৃত বইয়ের সংখ্যা কমানো উচিত। প্রাথমিক স্তরের শিশুরা আনন্দঘন পরিবেশে শিক্ষা গ্রহণ করবে। তাদের উপর শিক্ষার জন্য অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ করা অনুচিত বলে আমি মনে করি।

প্রাথমিক শিক্ষায় শিশুরা শিখবে বর্ণমালা। শিক্ষার্থীরা জানতে হবে শিক্ষার উদ্দেশ্য কি, কেন শিখতে হবে, কি শিখতে হবে, কিভাবে শিখতে হবে। বিভিন্ন খেলাধূলায় শিশুরা মনোযোগ দিবে। পাশাপাশি আনন্দঘন পরিবেশের সাথে শিক্ষকরা অবশ্যই তাদের শৃংখলাবোধ শিখাতে হবে। এজন্য প্রয়োজনে শিক্ষকদের দৃঢ় হতে হবে। প্রাথমিক শিক্ষকরা হবেন শিক্ষিত। তাদেরকে পড়ানোর কৌশল সম্মন্ধে জানা বাধ্যতামূলক।

বিষয়টি মনিটিরিং করার জন্য সার্বিক বিষয় নির্ভর করবে প্রশাসনের নিবিড় পর্যবেক্ষণ এবং সহকারি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এবং জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কঠোর তদারকির উপর।

মৌলভীবাজার জেলার জুড়ী উপজেলায় মোট ৮৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। উক্ত ৮৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মিড ডে মিল কার্যক্রম অব্যাহত আছে। প্রতিটি বিদ্যালয়ে সরকারি অর্থায়নে খেলাধূলার জন্য ক্রীড়া সামগ্রীসহ বিনোদনের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা হয়েছে। এতে শিক্ষার্থীদের পড়াশুনার পাশাপাশি চিত্ত বিনোদনের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। প্রতি মাসে প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মা সমাবেশ, উঠান বৈঠক, ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পর্যায়ে মতবিনিময় সভা আয়োজনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে উপস্থিতির সংখ্যা বৃদ্ধি করা হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্দীপ্ত করার মাধ্যমে শিশুর মনে দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবোধের উন্মেষ ঘটানো, ত্যাগের মনোভাব সৃষ্টি করা এবং দেশ গঠনমূলক কাজে উদ্বুদ্ধ করার জন্য প্রতিটি বিদ্যালয়ে একটি করে শহীদ মিনার নির্মাণের কার্যক্রম অব্যাহত আছে। শিক্ষার পরিবেশ নান্দনিক করে গড়ে তোলার জন্য প্রতিটি স্কুলে ফুলের বাগান ও দেয়াল লিখন অব্যাহত রয়েছে। শিক্ষার্থীরা মনোরোম পরিবেশে বসে শিক্ষা লাভের জন্য দৃষ্টি নন্দন আসবাবপত্র সরবরাহও অব্যাহত রয়েছে। ২০৪১ সালে বাংলাদেশের লক্ষ্য হচ্ছে উন্নত দেশে পদার্পণ। Sustainable Development Goal( SDG) এর চতুর্থ লক্ষ্য হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষাকে কেন্দ্র করে। প্রাথমিক শিক্ষায় বিনিয়োগ বৃদ্ধি বাংলাদেশকে উন্নত দেশে রূপান্তর করতে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।

সর্বোপুরি গুরুচাঁদ ঠাকুরের মহান মন্তব্য সকলের স্মরণে ও পালনের জন্য উল্লেখ করা হলো-

“বিদ্যা ধর্ম বিদ্যা কর্ম বিদ্যা সর্বসার

বিদ্যা-বিনা এ জাতির নাহিক উদ্ধার


লেখক: অসীম চন্দ্র বনিক ,উপজেলা নির্বাহী অফিসার ,জুড়ী, মৌলভীবাজার।