ইমাম খাইর, সিবিএন:
জীবন বাঁচাতে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে উখিয়া-টেকনাফে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মাঝে হঠাৎ ছড়িয়ে পড়েছে নানা ধরনের রোগ। এ পর্যন্ত ২৬৬ জন এইচআইভি ও ৮২০০ জন ডিপথেরিয়া রোগি শনাক্ত হয়েছে। আমাশয় ও ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়ে চলেছে।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে স্বাস্থ্যসেবা পরিচালনকারী সংস্থাগুলো জানিয়েছে, ক্যাম্পে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে বর্তমানে কাজ করছে ১২৪টি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও)। তবে ক্যাম্পে স্বাস্থ্য খাতে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ না থাকায় চিকিৎসাসেবায় বড় ঘাটতি রয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনের (আরআরআরসি) কার্যালয়ের তথ্যমতে, ক্যাম্পভিত্তিক সেবাকেন্দ্র, প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিচর্যা কেন্দ্র কিংবা ফিল্ড হাসপাতালের মাধ্যমে শুধু জটিল নয়, এমন রোগের চিকিৎসা দেয়া হয়। প্রধানত পানিবাহিত ও অপুষ্টিজনিত রোগের সেবা প্রদানই ইপিআই কর্মসূচির লক্ষ্য। ক্যাম্পে কোনো রোগীর চিকিৎসা সম্ভব না হলে, সে রোগীকে কক্সবাজার সদরে পাঠানো হয়। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় জটিল রোগ ধরা পড়লে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রোহিঙ্গা ওয়ার্ডে স্থানান্তর করা হয়।

কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডাক্তার মোহাম্মদ শাহীন আবদুর রহমান চৌধুরী বলেন, স্থানীয় রোগীদের পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের বিনামূল্যে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। গত এক বছরে ইনডোরে ৪ হাজার ৭২১ জনকে চিকিৎসাসেবা দেয়া হয়। সেখানে ১৭৪ জনকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। এছাড়া সার্জারির জন্য ৯২ জন এবং আঘাতপ্রাপ্ত ২৬ রোগীকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

সিভিল সার্জন ডা মোঃ আবদুস সালাম বলেন, ‘মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের জন্য ইপিআই কর্মসূচি ছিল না। পল্লী চিকিৎসকই ছিল তাদের ভরসা। তাই তাদের দীর্ঘমেয়াদি শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া, আমাশয়, জন্ডিস, টিভি, হাম, ডায়রিয়া, গর্ভকালীন জটিলতা, টিউমার ও পিত্তথলিতে পাথর, হেপাটাইটিস বি ও সি, এইচআইভি বা এইডসসহ নানা রোগ রয়েছে। বিতাড়নের সময় আবার অনেকের হাড় ভেঙে গেছে। এখানে এসে আক্রান্ত হয়েছে পানিবাহিত রোগে। তাদের চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, এ পর্যন্ত ২৬৬ জন এইচআইভি, ৮২০০ জন ডিপথেরিয়া রোগির চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।

চিকিৎসকদের আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘মেডিসিনস সানস ফ্রন্টিয়ারসের (এমএসএফ)’ তথ্যমতে, কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে তারা প্রতি মাসে গড়ে ৬৫ হাজার ৬৩৯ জনকে চিকিৎসা দিচ্ছে। এর মধ্যে গড়ে ৬ হাজার ১২৫ জনই ডায়রিয়ায় আক্রান্ত। আর ক্যাম্পে স্থাপিত স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা ফিল্ড হাসপাতালের মাধ্যমে প্রতি মাসে গড়ে ৮০৫ জনকে ডিপথেরিয়া এবং ৪৭৯ জনকে হামের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। সুইজারল্যান্ডভিত্তিক এ সংস্থাটির তথ্যমতে, বেশির ভাগ শরণার্থীর জন্য বিশুদ্ধ পানি, পয়োনিষ্কাশনের ব্যবস্থা নেই। ক্যাম্পে স্বাস্থ্য খাতের বাজেটের মাত্র ১৬ দশমিক ৯ শতাংশ বরাদ্দ হওয়ায় অতিপ্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবায় বড় ঘাটতি রয়েছে।

জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর প্লাটফর্ম ‘ইন্টার সেক্টর কো-অর্ডিনেশন গ্রুপে’র (আইএসসিজি) তথ্যমতে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে রোগের প্রাদুর্ভাবের পাশাপাশি মেডিকেল ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্টেও রয়েছে বড় ধরনের সমস্যা। পানিবাহিত রোগের পাশাপাশি জটিল রোগের চিকিৎসায়ও সংকট চলছে। তবে জাপানভিত্তিক এনজিও সংস্থা ‘ফিউচার কোড’ ক্যাম্পে জমাটবদ্ধ পানিকে পুনরায় ব্যবহারযোগ্য করে তুলতে কাজ করছে।