জে.জাহেদ, চট্টগ্রাম :

বিখ্যাত দার্শনিক হেলেন কিলার বলেছেন, “পৃথিবীর সুন্দরতম জিনিসগুলো হাতে ছোঁয়া যায় না, চোখে দেখা যায় না, সেগুলো একমাত্র হৃদয় দিয়ে অনুভব করতে হয়- ভালবাসা, জীবে দয়া আর আন্তরিকতা”।

সে রকম একটি সুন্দরতম কাজ কিংবা সংগঠন এর নাম “মানব কল্যাণে এসো কিছু করি ”। যা হৃদয় দিয়ে অনুভব করতে হয়।

২০১৬ইং সালের ১৮ জুলাই দারিদ্র পিড়িত মানুষের কষ্ট দেখে চট্টগ্রাম জেলার ফটিকছড়ির এলাকার মোহাম্মদ ফারুক হোসাইন (প্রকাশ দুঃখী ফারুক) নামে এক মহৎ মানুষ সংগঠনটি চালু করেন।

একটি ফেসবুক নির্ভর অনলাইন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন “মানব কল্যাণে এসো কিছু করি” নাম হলেও মূলত এটি পরিণত হয়েছে সামাজিক বন্ধনে। যারা দুঃখী মানুষের পাশে নিজেরাই হাজির হন সহায়তার দাবিতে।

একটি সুন্দর সামাজিক সংগঠন দুর্বলকে শক্তি যোগায়, দিশেহারাকে পথ দেখায়, অন্ধকারে জ্বালায় আলোর মশাল। হতাশা, ব্যর্থতা, গ্লানির তিক্ত অনুভূতিগুলো যখন ঘিরে ধরে তখন ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য সম্বল হয় সামাজিক সংগঠনের একটু আশা, একটুখানি সম্ভাবনার হাতছানি।

জীবনের কঠিন সময় গুলোতে অসহায় মানুষের মনোবল ধরে রাখতে হৃদয়ে অনুপ্রেরণা যুগিয়ে যাচ্ছে দুঃখী ফারুকের এই সংগঠন। এমনটি প্রত্যাশা এখন হাটহাজারী, ফটিকছড়ি,রাউজান উপজেলার হাজার হাজার অসহায় নারী পুরুষ গণমানুষের।

কেননা পৃথিবী’র ২০ ভাগ অর্থ ও সম্পদ যদি মুষ্টিময় কিছু ব্যক্তির কাছে না থেকে দরিদ্র লোকের কাছে থাকতো, তবে পৃথিবীর কেউই কষ্টে থাকতো না।

উন্নয়নশীল দেশ আমাদের বাংলাদেশ। এগিয়ে যাচ্ছে তারপরেও বাংলাদেশে এখনো অনেক মানুষ দারিদ্রতার কষাঘাতে ধুঁকে ধুঁকে মরছে। বেসরকারী জরিপে এখনো ৩০লাখ শিশু ফুটপাতে ঘুমায়। তাদের পাশে দুঃখী ফারুকের হাত বাড়ানো।

হতে পারে সীমিত সম্পদ দিয়ে সরকার একার পক্ষে সম্ভব নয়। দেশের সকল মানুষের অভাব পূরণ করা। প্রতিটি মানুষের বিবেক যদি দুঃখী ফারুক ও তার সংগঠনের কর্মীদের মতো কেঁদে ওঠে, তবে সৃষ্টি হবে আরো সেবামূলক নানা সমাজকল্যাণ সংগঠন।

তাদের এ কার্যক্রমটি চট্টগ্রাম হাটহাজারী, ফটিকছড়ি রাউজান হতে মূলত শুরু হলেও বর্তমানে অনলাইনের মাধ্যমে দ্রুত দেশ বিদেশে ছড়িয়ে পড়েছে।

দুঃখী ফারুকের কর্মপ্রেরণায় আজ চট্টগ্রাম জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলেও সেবার হাত বাড়িয়ে দিতে দৃঢ় প্রত্যয়ী তার দল ও সংগঠন।

যাদের এ কার্যক্রমে ইতিমধ্যে বেশ প্রশংসনীয় ভুমিকা রেখেছে চট্টগ্রামে। যেমন তিন উপজিলার হতদরিদ্রদের চিকিৎসা খরচ ফটিকছড়িতে জন্ম নেওয়া যমজ শিশুর চিকিৎসার জন্য ফান্ডের ব্যবস্থা, মেধাবী ছাত্রছাত্রীর শিক্ষা সামগ্রী বিবিধ খরচ বহন, পানির সমস্যা সমাধানে গরিবদের মাঝে টিউবওয়েল বিতরণ,ছিন্নমুল শিশুদের বস্ত্র বিতরণ, রমজানে মাসে ইফতার সামগ্রি বিতরণ, অসহায় নির্যাতিত মা বোনদের বিনামূল্যে আইনি সহায়তা, শীর্তাতদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ, আগুনে পোড়া শিশুর পাশে দাড়িয়ে আর্থিক সহায়তা, কিডনি রোগীর চিকিৎসা প্রদানে সহায়তা।

এছাড়াও স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি, ((বাল্য বিবাহ বন্ধকরণ, জঙ্গিবাদ বিরোধী সেমিনার))পাহাড়ি এলাকার শিক্ষার্থীর উচ্চ শিক্ষার ব্যবস্থা উপজিলার বিভিন্ন স্থানে ফ্রি চিকিৎসা ক্যাম্প করা সহ জাতীয় দুর্যোগ উত্তর বঙ্গে বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ রোহিঙ্গাদের মাঝে ৩১ টন ত্রাণ বিতরণ, নানা সামাজিক কর্মকান্ড করে যাচ্ছেন প্রবাসীদের সহযোগিতায়র মাধ্যমে একঝাঁক মেধাবী তরুণ ও মধ্যবয়সী স্বেচ্ছাসেবক।

যারা সমাজের নানা শ্রেণীর মানুষের বিবেক জাগ্রত করতে অসামান্য এই কাজ করে চলেছেন। তাদের এই উদ্যোগে উৎসাহিত হয়ে পর পর সৃষ্টি হয় আরো অগনিত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। তবে তাদের এ সেবা প্রদানে রয়েছে নানা সমস্যা ও প্রতিকুলতা। তারপরেও তারা এগিয়ে যেতে বন্ধ পরিকর। যদিও অর্থের অভাবে অনেক সময় ভাল কাজ করতে বেগ পেতে হচ্ছে এই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটির।

তাদের ভরসা সমাজের ভালো মানুষ গুলো হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে। বিশেষ করে বিদেশে অবস্থানরত প্রবাসী ভাইয়েরা অনুপ্রেরণা যোগাচ্ছে। এটাই তাদের এগিয়ে নিচ্ছে দুঃখী মানুষের দরজায় গিয়ে সাহায্যের বাণী পৌঁছাতে।

দেশ বিদেশ হতে যারা সহযোগিতা করছেন তারা হলেন-জয়নাল আবেদিন বাপ্পু, সেলিম তালুকদার মানিক, সেলিম উদ্দিন সুন্দরপুরী, তানভীর হোসেন, সাইফুদ্দিন, মোঃ রুবেল। প্রবাসে শামিম উদ্দীন, বাবুল হোসেন, মোহাম্মদ মঞ্জুর হোসাইন, রফিক উদ্দীন, সাইফুল্লাহ চৌধুরী, সেলিম উদ্দিন, মোজাম্মেল মুহুরী, নাইমুল ইসলাম, রোকন উদ্দীন, ইকবাল হোসেন, আবছার উদ্দীন, মোঃ লোকমান হাকিম, মোজাফফর হোসেন লাভলু প্রমুখ।

এমনকি তাদের প্রত্যাশা প্রশাসনের সহযোগিতা পেলে আরো এগিয়ে যেতে পারবে সামনে। হাসি ফোঁটাতে পারবে অগনিত অসহায় মানুষের মুখে। বিত্তবান শ্রেণীর লোকদেরও এগিয়ে আসা উচিত চারপাশে থাকা অসহায় মানুষের চোখের পানি মুছতে।

জগতে এটাই ধর্ম। যে ধর্ম মানুষের সেবার কথা বলেনি সে ধর্ম কখনো টিকেনা।

মনীষীরা বলেছেন, “তুমি যখন সবাইকে ভালবাসতে শিখবে, সবার কল্যাণে কাজ করে যাবে- জীবনের প্রান্তিলগ্নে গিয়ে দেখবে মানুষের ভালবাসায় তুমি একদম আকণ্ঠ ডুবে আছো! বিশ্বাস করো এর চেয়ে পরিতৃপ্তি জীবনে আর কিছুতে হতে পারে না!”।

রাষ্ট্র যদিও বৃহত্তম মানব সংগঠন। একান্ত মানবিক প্রয়োজনে, সামাজিক সংকটে মানুষ সাহায্য প্রত্যাশা করে। দুর্দশাগ্রস্থ মানুষের পাশে দাঁড়ায় সমাজহিতৌষী, সমাজ, সংগঠন ও রাষ্ট্র।

তেমনি এক সমাজ সংগঠন “মানব কল্যাণে এসো কিছু করি ”। যাদের সমাজহিতকর কাজের জন্য বাংলাদেশ টেলিভিশন বিটিভির “চেনা জানা” অনুষ্ঠানে তাদের কর্মকান্ড নিয়ে প্রতিবেদন প্রচারিত হয়।

পরিবর্তন ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ ,উত্তর গুজরা ডাঃ রাজা মিয়া স্মৃতি ফাউন্ডেশন,রাউজান স্বেচ্ছাসেবী ফাউন্ডেশন, পুর্ব নানুপুর ভাই ভাই সংঘ নামক সংগঠন থেকে মানবিক কাজের অবদানের জন্য সম্মাননা স্মারক পদকে ভূষিত হন।

এমনকি দেশের শীর্ষ স্থানীয় সংবাদপত্র দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকা যাকে নিয়ে সংবাদ প্রচার করে। এছাড়াও নানা স্থানীয় পত্রিকায় তাদের সংগঠনের সমাজকর্ম নিয়ে আলোচনা করেন।

সংগঠনটির প্রধান নির্বাহী (প্রতিষ্ঠাতা) মোঃ ফারুক হোসাইন (দুঃখী ফারুক) প্রতিবেদককে বলেন, “দারিদ্রের কষাঘাতে স্বীকার হয়ে সেদিন স্কুলের একজন ভাল ছাত্র হয়েও ষষ্ঠ শ্রেণীর বেশী পড়া লেখা করা সম্ভব হয়নি আমার। তারপরেও অসহায় মানুষদের পাশে সেবার হাত বাড়িয়ে দিতে আমার এ চেষ্টা”।

দিন-রাত অবিরাম পরিশ্রম করে যাচ্ছেন তার সহােগীরা। তাদের মূল লক্ষ্য অসহায় গরিবদের পাশে দাড়ানো। দরিদ্র মানুষ গুলোর কষ্টে দেখে স্বল্প পরিসরে হলেও তাদের কষ্ট কিছুটা লাঘবে সহায়তা করে চলেছে তাদের এই সংগঠন।