বিশেষ প্রতিবেদক:
কক্সবাজার সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে চিহ্নিত জলদস্যুরা। এদের ভয়ে সাগরে যেতে পারছেনা জেলেরা। অথচ আর একমাসেরও কম সময় পরে আগামী ৭ অক্টোবর শুরু হচ্ছে মা ইলিশ সংরক্ষন কার্যক্রম। জাতীয় মাছ ইলিশের প্রজনন মৌসূম উপলক্ষে পরবর্তী ২২ দিন সাগরে মাছ আহরণ বন্ধ থাকবে। তাই এর আহে এখন চলছে মাছ আহরণের ভরা মৌসূম। কিন্তু এখন কক্সসবাজার সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে জলদস্যুরা।
গভীর সাগর থেকে মাছ আহরণ করে ফিরার পথে সোনাদিয়া চ্যানেলে ডাকাত কবলিত হচ্ছে ফিশিং বোট ও মাঝি-মাল্লারা। অাক্রান্ত জেলেরা বলেন, এখানে সক্রিয় আছে জলদস্যুদের একাধিক সিন্ডিকেট।
মাছ আহরন মৌসূমের ভরা সময়ে জলদস্যুদের অপতৎপরতা দেখে ফিশিং বোট মালিক-শ্রমিকরা শংকিত পড়েছেন। গত এক মাসের মধ্যে বিভিন্ন ট্রলার ডাকাতি করে মাছ, জাল ও ইঞ্জিনসহ অন্যান্য সরঞ্জাম লুটে নিয়েছে সোনাদিয়া কেন্দ্রিক এসব জলদস্যুরা। সোনাদিয়া ও কুতুবদিয়ার জলদস্যুদের বিভিন্ন গ্রুপ এখন সাগরে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে বলে জানিয়েছেন ভূক্তভোগী বোট মালিকরা।
ভূক্তভোগী সূত্রে প্রকাশ, একমাস আগে বর্ষা মৌসূম ও ঝড়-তুফানের দিন শেষ হয়ে আবহাওয়া অনুকুলে আসে। তখন মাছ আহরন মৌসূম শুরু হলে ফিশিং বোটের বহর সাগরে মাছ ধরতে যায়। কিন্তু গভীর সাগর থেকে মাছ শিকার করে ফেরার পথে সোনাদিয়া চ্যানেলে উঁৎপেতে থাকা জলদস্যুদের দ্বারা আক্রান্ত হয় বিভিন্ন ট্রলার। বিভিন্ন অস্ত্রের মুখে মাঝি-মাল্লাদের জিম্নি করে জাল, মাছ ও বোটের ইঞ্জিন খুলে নেয় ডাকাতরা। এছাড়াও কয়েকটি ট্রলারকে মাঝিমাল্লাসহ জিম্মি করে অজ্ঞাতস্হানে নিয়ে মোটা অংকের মুক্তিপন আদায় করে ছেড়ে দেয়। সাগর থেকে মাছ ধরে ফিরে আসার পথে কয়েক সপ্তাহ আগে উপরোক্ত পয়েন্টে জলদস্যুদের কবলে পড়ে ফিশিং বোট এফ বি তাসফিয়া। এসময় মাঝি মাল্লাদের বেধড়ক মারধর করে মাছ, জাল, রশি ও ইঞ্জিনসহ প্রায় বিশ লাখ টাকার মালামাল লুটে নেয় ডাকাতরা। বোট মালিক শুক্কুর বহদ্দার জানান, ডাকাতি করেও ক্ষান্ত হয়নি জলদস্যুরা। মালামাল লুটে নেয়ার পর বোটটি জিম্মি করে অজ্ঞাত স্হানে নিয়ে মোটা অংকের মুক্তিপণ দাবী করে। পরে অনেক দরকষাকষির পর দুইলাখ টাকা মুক্তিপণ দিয়ে বোটটি ছাড়িয়ে আনতে হয়।
জেলা ফিশিং বোট মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ জানান, একই সময়ে এফ বি মনোয়ারা ফিশিং বোট ১৬ জন মাঝি-মাল্লাসহ জলদস্যুরা অপহরন করে। অপহৃত ১৬ জন মাঝি-মাল্লাসহ বোটটি জিম্মি করার পর মোটা অংকের মুক্তিপন দাবী করে জলদস্যুরা। মুক্তিপন দিতে না পারায় পহরনের পর বোটটি সোনাদিয়া ক্রস করে কুতুবদিয়া ধলঘাটের প্যারাবনের দিকে চালিয়ে নিয়ে যায়। এভাবেই সাগরে নৈরাজ্য কায়েম করেছে চিহ্নিত জলদস্যুরা।
বোট মালিকরা জানান, সোনাদিয়ার জলদস্যু সর্দার দুদু মিয়া কক্সবাজার শহরের সমিতিপাড়ায় অবস্হান করে জলদস্যুতা নিয়ন্ত্রন করছে। দুদু মিয়ার সিন্ডিকেটে রয়েছে সোনাদিয়ার চিহ্নিত জলদস্যু ফারুক, মোনাফ, মোবারেক, আনজু সিকদার, জসিম, আবুল কালাম, মোঃ হোছন, মোঃ করিম, ছৈয়দ নূর, মোজাফফর ও কুতুবদিয়ার মোঃ দিদার ও গুরা কালু প্রমূখ। এদের মধ্যে সেকেন্ড ইন কমান্ড ফারুক কয়েকদিন আগে অবৈধ অস্ত্র ও গুলিসহ পুলিশের হাতে আটক হলেও অপরাপর জলদস্যুরা সাগরে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। দুদুমিয়া সিন্ডিকেটের এই জলদস্যুদের কাছে জিম্মি হয়ে আছে বোট মালিক শ্রমিকরা। জলদস্যু সম্রাট দুদু মিয়া সোনাদিয়া পূর্ব পাড়ার মৃত ধলা মিয়ার ছেলে এবং হত্য-ডাকাতি ও অস্ত্র মামলাসহ বিভিন্ন মামলার পলাতক আসামী। তারা সিন্ডিকেটে রয়েছে চিহ্নিত সব জলদস্যু। এরা সবাই বিভিন্ন মামলার পলাতক আসামী বলে জানা গেছে।
ফিশিং বোটের মালিক ও মাঝি-মাল্লারা জানান, বিভিন্ন জলদস্যু গ্রুপকে নিয়মিত মাসোহারা দিতে হয়। অনেক সময় মাসোহারা নিয়েও বোট ডাকাতি করে জলদস্যুরা। এতে আতংক ছড়িয়ে পড়েছে জেলেপল্লীতে। উপরোক্ত ব্যাপারে কোস্ট গার্ড কক্সবাজার ষ্টেশনের কন্টিনজেন্ট কমান্ডার আলী আহমদ জানান, সাগরে কোন বোট ডাকাতি হলে নির্দিষ্ট তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে অভিযানে যাওয়ার আগেই জলদস্যুরা জেনে যায়। ফলে অপারেশন সবসময় সফল হয়না। সাগরে জলদস্যু দমনে শীঘ্রই ব্যাপক অভিযান পরিচালনা করা হবে বলেও জানান তিনি।