এম মনছুর আলম, চকরিয়া:

কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কে থামছে না লাশের মিছিল। দীর্ঘ হচ্ছে প্রতিদিন লাশের সারি। মহাসড়ক ও আঞ্চলিক সড়কে দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ঘটনা বেড়েই চলছে। ফিটনেসবিহীন যানবাহন, অদক্ষ চালক ও ট্রাফিক আইন না মানার কারণে একের পর এক দুর্ঘটনায় নিভে যাচ্ছে তরতাজা প্রাণ। একদিনের ব্যবধানে কক্সবাজারের চকরিয়ার হারবাং ইনানী রিসোর্ট এলাকায় কাভার্ড ভ্যান ও ইজিবাইকের মুখোমুখি সংঘর্ষে আরও ৪জন নিহত হয়েছে। এসময় মা-মেয়েসহ আরও ১০ যাত্রী গুরুতর আহত হয়। ১২ সেপ্টেম্বর বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

এদিকে গত ১১ সেপ্টেম্বর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আধা কিলোমিটার অদুরে বাস ও লেগুনা গাড়ির মুখোমুখি সংঘর্ষে ৭জন নিহত হয়েছে।

বুধবার দুর্ঘটনায় নিহতরা হলেন, চকরিয়া উপজেলার হারবাং আবদুস সাত্তারের ছেলে মো: তাজউদ্দিন (২২), হারবাং জমিদার পাড়ার ছৈয়দ আহমদের ছেলে ৪নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবু তাহের (৫০) পেকুয়া উপজেলার রাজাখালী ইউনিয়নের আবদুল খালেকের ছেলে ইউনিছ মিয়া (৩৫), বাশখালী উপজেলার প্রেমবাজার এলাকার মো: সেলিম উদ্দিনের স্ত্রী হাসিনা বেগম (৪৩)।

আহতরা হলেন, চকরিয়ার হারবাং গয়ালমারা এলাকার দলিলুর রহমানের ছেলে জালাল উদ্দিন (৪৮), আবুল হোছাইনের ছেলে নূর হোছাইন (৪২), চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার প্রেমবাজার এলাকার মো. সেলিমের স্ত্রী সেলিনা আক্তার (৩২) তার শিশু কন্যা তাছফি (৮) ও অজ্ঞাত এক নারী।

প্রত্যক্ষদর্শী ও হাইওয়ে পুলিশ সুত্রে জানা যায়, বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মহাসড়কের হারবাং ইনানী রিসোর্ট এলাকায় কক্সবাজারগামী আরএফএলের মালবাহী একটি পিকআপ কাভার্ড ভ্যান (ঢাকা মেট্টো ন-১১-৪৪১৪) পৌছলে বিপরীতদিক থেকে আসা একটি ইজিবাইককে চাপা দিলে দুই যাত্রী ঘটনাস্থলে মারা যায়। এতে ইজিবাইকটি ধুমড়ে মুচড়ে যায়। এসময় সাত যাত্রী গুরুতর আহত হয়। স্থানীয় লোকজন ও পুলিশ আহতদের উদ্ধার করে চকরিয়া উপজেলা সরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে আরও দুইজনের মৃত্যু হয়। গুরুতর আহত ৫জনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।

অপরদিকে চট্টগ্রাম থেকে প্রাইভেট কারযোগে চকরিয়ায় আসার পথে একই সময় দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন কালের কণ্ঠ চট্টগ্রাম ব্যুরো অফিসের স্টাফ রিপোর্টার আসিফ সিদ্দিকী (৪০), তাঁর মা জওশন আরা বেগম (৬০) ও চালক মো. ইকবাল (৩২)। অলৌকিকভাবে বেঁচে গেলেও দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন তাঁরা। তাঁদেরকে চকরিয়া পৌরশহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

আহত সাংবাদিক আসিফ সিদ্দিকী জানান, সকালে তাঁদের বহনকারী প্রাইভেট কারটি মহাসড়কের লোহাগাড়ার চুনতি মিডওয়ে-ইন রেস্টুরেন্টের কাছে পৌঁছালে সামনে থাকা স্টার লাইন পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাস সেখানে যাত্রা বিরতির জন্য কোনও সংকেত না দিয়ে সড়কের ডান পাশ দিয়ে ঢুকে পড়ে। এই অবস্থায় তাদের বহনকারী গাড়িটির চালক নিয়ন্ত্রণ হারালে মহাসড়ক থেকে ছিটকে পড়ে গাড়িটি গড়াগড়ি দিয়ে ধানক্ষেতে গিয়ে পড়ে। এতে আহত হন তাঁরা।

চকরিয়া থানার ওসি মো. বখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, দুর্ঘটনার সংবাদ পেয়ে তাৎক্ষনিকভাবে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। এক নারীসহ চারজন মারা যাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন তিনি। ঘটনাস্থল পরিদশন করেন উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) খোন্দকার মো: ইখতিয়ার উদ্দিন আরফাত।

চকরিয়া থানার এসআই সুকান্ত চৌধুরী বলেন, দুর্ঘটনার খবর পেয়ে চকরিয়া থানা পুলিশ, ফায়ার সার্ভিসের লোকজন ঘটনাস্থলে পৌছে নিহত ও আহতদের উদ্ধার করে চকরিয়া উপজেলা সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করেন। পরে গুরুতর আহতের চমেক হাসপাতালে প্রেরণ করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক।

চিরিঙ্গা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সার্জেন্ট নুরে আলম ও এসআই মিজানুর রহমান বলেন, দুর্ঘটনা কবলিত কাভার্ড ভ্যান ও ইজিবাইক জব্দ করা হয়েছে। তবে কার্ভাড ভ্যান চালক পালিয়ে যায়। মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।