তাজুল ইসলাম পলাশ, চট্টগ্রাম:

যানজট বাড়ছে চট্টগ্রামের শাহ আমানত সেতু এলাকায়। সড়ক সংস্কারের কাজ, যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং, অবৈধ স্ট্যান্ড ও সড়কের পাশে ভাসমান দোকানের কারনে বাড়ছে যানজট। এমন চিত্র দেখা গেছে শাহ আমানত সেতু এলাকায়। সকাল থেকে রাত অবধি লেগেই থাকে যানজট। অভিযোগ পাওয়া গেছে যানবাহন চলাচলে শৃঙ্খলা ফেরাতে দায়িত্বে থাকা ট্রাফিক পুলিশের নজর থাকে পণ্যবাহী গাড়ির দিকে। ফলে যানজট তীব্র থেকে তীব্রতর হয় ওই এলাকায়। এতে সীমাহিন দূর্ভোগে পড়ছেন পথচারি ও যাত্রীরা। যানজটের বিষয়ে জানতে নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) কুসুম দেওয়ান বলেন, রাস্তা সংস্কারের কাজ চলছে। তাছাড়া বৃষ্টির পানিতে কাঁদা ও সড়কে ছোট বড় অসংখ্য গর্ত রয়েছে মূলত এসব কারনে কিছুটা যানজট হয়। দায়িত্বে থাকা ট্রাফিক পুলিশের নজর থাকে পণ্যবাহী গাড়ির দিকে একারনে যানজট হচ্ছে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এ ধরনের অভিযোগের কথা আগে কখনো শুনিনি। তবে কেউ অভিযোগ নিয়ে এলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শাহ আমানত সেতু এলাকায় ট্রাফিক পুলিশ ঠিকমত দায়িত্ব পালন করে না বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। চালক ও যাত্রীরা জানান, যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করার পরিবর্তে ট্রাফিক পুলিশ চালকদের কাছ থেকে প্রকাশ্যে চাঁদাবাজিতে লিপ্ত থাকে। ফলে গোল চত্ত্বরে ঘন্টার পর ঘন্টা লেগে থাকে যানজট। মাঝে মধ্যে সিএমপি’র পক্ষ থেকে অভিযান পরিচালনা করা হলেও তা কিছু সময়ের জন্য সিমাবদ্ধ।

সরেজমিনে দেখা যায়, চট্টগ্রাম শহরে সবচেয়ে বেশি গাড়ি প্রবেশ করে শাহ আমানত সেতু দিয়ে। কক্সবাজার ও বান্দরবান জেলা এবং দক্ষিণ চট্টগ্রামের ছয়টি উপজেলার যাত্রীবাহী ও শিল্প প্রতিষ্ঠানের শত শত গাড়ি প্রবেশ করে ওই এলাকা দিয়ে। তাছাড়া কক্সবাজারমূখী কোচ কাউন্টার রয়েছে অনেক। পাশাপাশি জেলার আওতায় থানাগুলোরও কাউন্টার রয়েছে। এসব গাড়িগুলো সড়কের বিশাল একটি অংশ দখল করে থাকে। যে যার মতো করে যাত্রী তুলছে। যাত্রী তোলা ও নামানোর মধ্যে নেই কোন নিয়মনিতি। ওই গোলচত্ত্বরকে ঘিরে সড়ক রয়েছে চারটি। একটি বহদ্দারহাট মুখি, আরেকটি ফিরিঙ্গিবাজার নিউমার্কেট মূখি, আরেকটি চাক্তাই দিয়ে কোতোয়ালী এবং অন্যটি দক্ষিণ চট্টগ্রামের দিকে। ওই চারটি সড়কের মূখে সবসময় যানজট লক্ষ করা গেছে। কিন্তু যানজট দেখা গেলেও সেই হিসেবে দেখা মেলেনি ট্রাফিক পুলিশের। দুই একজনকে দেখা গেলো শাহ আমানত সেতু ব্রিজের মুখে দাড়িয়ে থাকতে। কিছুক্ষণ পর পর একজন এসে সিগনেল দিচ্ছে। কে শুনে কার কথা। গাড়ির চালকরা তাদের মতো যাত্রী তুলছে। লক্ষ্য করা গেছে ট্রাফিক পুলিশ বক্সের পশ্চিম পাশে একটি ঝুবড়ি। ওই ঝুবড়িতে দায়িত্ব পালন করছেন কর্তব্যেরত সার্জেন্টসহ কয়েকজন কনস্টেবল। তাদের দৃষ্টি পন্যবাহি গাড়ির দিকে। ব্রিজ থেকে গাড়ি নামা মাত্রই সিগনেল। কাগজ পরীক্ষা নিরিক্ষা শেষে যথারিতি বকশিস। তাও আবার ৫০০টাকার কম নয়। লোকজনের দৃষ্টি যেন তাদের চাদাঁবাজির দিকে নজড় না পড়ে সেজন্য পুলিশের বক্সের ভিতরে নিয়ে যেতে দেখা গেছে। সেখানে প্রায় ২০ থেকে ২৫ মিনিট পর্যন্ত চলে দরকষাকশি। এরকম ইকবাল নামে একজনের সাথে কথা হলে তিনি জানান, নতুন আর,টিআর গাড়ি নিয়েছি। এখনো নাম্বার করিনি। তবে সেইল রিসিট আছে। নাম্বারের ডকুমেন্ট করতে এসেছি। ১৩০০টাকা দিয়ে গাড়িটা ফেরত পেলাম। তবে আরেকটি গাড়ি টু করতেও দেখা গেছে। কিছুক্ষণ পর পর তারা ব্যস্থ থাকে গাড়ি আটকাতে। এই দৃশ্যে এখন নগরীর কর্ণফুলী সেতু এলাকার গোলচত্তরের।

শাহ আমানত সেতু এলাকায় দায়িত্বরত ট্রাফিক ইন্সফেক্টর (টি আই) অচ্যুত কুমার দাশ গুপ্ত’র সাথে কথা হলে তিনি বলেন, সড়ক সংস্কারের কারনে কিছুটা যানজট হচ্ছে। তবে আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করছি। আমাদের স্যাররা এসে অভিযান পরিচালনা করে এবং নিয়মিত খবরা খবর রাখেন। তিনি বলেন, এটি ১৯ টি রোডের প্রবেশমূখ। তাছাড়া সড়কের উভয়পাশে নির্মাণ সামগ্রী রাখা হয়েছে। এলাকা অনুযায়ী পুলেশের সংখ্যা অপ্রতুল উল্লেখ করে অচ্যুত বলেন, যেখানে ১০ জন পুলিশ লাগবে সেখানে ৫জন দিয়েতো আর সবকিছু ঠিক রাখা সম্ভব নয়। এই চত্ত্বরের ধারণক্ষমতার দ্বিগুণ গাড়ি চলে। তিনি বলেন, চালকরা ইচ্ছেমতো যাত্রী উঠানাম করেন। এটাও কিন্তু যানজটের একটি কারন। তাছাড়া নতুন কিছু গাড়ি নামার কারনে যানজট সমলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে বলেন অচ্যুত।

সার্জেন্টদের দেখলাম পন্যবাহি গাড়ি নিয়ে ব্যস্ত থাকতে এমন প্রশ্নে অচ্যুত বলেন, এটাতো কমন একটি প্রশ্ন। আমি তাদের তদারকি করছি। এটা আপনার ভূল ধারনা। এ বিষয়ে কুসুম দেওয়ান বলেন, আমাদের উপরের নির্দেশনা আছে। এরকম অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে তাতক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।