সিবিএন ডেস্ক:
ছোট হয়ে আসছে সৌদি আরবে বাংলাদেশের শ্রমবাজার। সৌদি আরবে বেকারত্বের হার ১২ দশমিক ৮ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনতে সরকারি-বেসরকারি খাতে বিদেশি শ্রমিক ছাঁটাইয়ের উদ্যোগ নিয়েছে দেশটির সরকার। এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে সরকার সৌদি নাগরিকদের মধ্যে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের সংখ্যা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নিজ দেশের নাগরিকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য উচ্চমূল্যে বিদেশি শ্রমিক নিয়োগ বন্ধের উদ্দেশ্যেই সৌদি সরকার এই উদ্যোগ নিয়েছে। দেশটির সৌদির শ্রম ও সামাজিক উন্নয়ন মন্ত্রণালয় এক ঘোষণায় এই সিদ্ধান্ত জানিয়েছে। সৌদিতে নিযুক্ত বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূত গোলাম মসি বাংলা ট্রিবিউনকে এই তথ্য নিশ্চিত করেন।

জানা গেছে, সৌদিআরবের সৌদির শ্রম ও সামাজিক উন্নয়ন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সৌদি নাগরিকদের মধ্যে বেকারত্ব কমিয়ে আনতে ১৪৪০ হিজরিতে তিন ভাগে সৌদি আরবের আরও ১২ ধরনের প্রাইভেট খাতকে সৌদিকরণ করা হচ্ছে। এই ১২টি খাতে সৌদি নারী-পুরুষ ছাড়া অন্য কোনও দেশের নাগরিক কাজ করতে পারবেন না। হিজরি ১৪৪০ সালের প্রথম মাসের ১ তারিখ (১২ সেপ্টেম্বর ২০১৮) থেকে মোটরযান/ মোটরসাইকেল কিংবা এর যন্ত্রাংশ খুচরা বা পাইকারি বিক্রয় কেন্দ্র, পাইকারি ও খুচরা পোশাক/ কাপড়/ জুতা/ প্রসাধনী বিক্রয় কেন্দ্র, গৃহস্থালি/ অফিসিয়াল ফার্নিচার বিক্রয় কেন্দ্র, গৃহস্থালি তৈজসপত্র, হাঁড়ি-পাতিল জাতীয় দ্রব্য বিক্রয় কেন্দ্র সৌদিকরণ করা হবে।

দ্বিতীয় ধাপে ১৪৪০ হিজরির তৃতীয় মাসের ১ তারিখ (১০ নভেম্বর) থেকে পাইকারি ও খুচরা ইলেক্ট্রনিক ও ইলেক্ট্রিক জিনিসপত্র বিক্রয় কেন্দ্র, ঘড়ি বিক্রয় কেন্দ্র, চশমা বিক্রয় কেন্দ্র সৌদিকরণ করা হবে।

তৃতীয় ধাপে হিজরি ১৪৪০ সালের পঞ্চম মাসে (৮ জানুয়ারি , ২০১৯) থেকে ফার্মেসি, হেল্থ ও হাসপাতাল সংক্রান্ত যন্ত্রপাতি, নির্মাণসামগ্রী বিক্রয় কেন্দ্র, গাড়ির যন্ত্রাংশ বিক্রয় কেন্দ্র, কার্পেট বিক্রয় কেন্দ্র, চকলেট ও মিষ্টান্ন বিক্রয় কেন্দ্র সৌদিকরণ করা হবে।

সৌদির শ্রম ও সামাজিক উন্নয়নমন্ত্রী আলী আল ঘাফিস জানিয়েছেন, বিদেশি শ্রমিকের স্থলে সৌদি নাগরিকদের নিয়োগের এই সিদ্ধান্ত মানা না হলে শ্রম আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই সেক্টরে কীভাবে সৌদি নাগরিকরা বিদেশি শ্রমিকদের স্থলাভিষিক্ত হবেন, সেই সংক্রান্ত একটি গাইডলাইনও মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়েছে।

জেদ্দা চেম্বার অ্যান্ড কমার্স ইন্ডাস্ট্রির ফুড কমিটির ডেপুটি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আল জোহানি সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম সৌদি গেজেটকে জানান, সৌদি সরকারের এই সিদ্ধান্ত বেসরকারি খাতের বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা এবং চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে ভারসাম্য তৈরির জন্য নেওয়া। এই সিদ্ধান্তের ফলে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা উচ্চমজুরির বিদেশি শ্রমিকদের জায়গায় স্থানীয় সৌদি নাগরিকদের কর্মসংস্থান দিতে বাধ্য হবে। তিনি আরও বলেন, কিং আবদুল্লাহ ফরেন স্কলারশিপ প্রোগ্রামের আওতায় প্রায় ১ লাখ সৌদি নাগরিক গ্র্যাজুয়েশন করেছেন। এই হাই কোয়ালিফাইড নাগরিকদের এই উচ্চমজুরির বিদেশি শ্রমিকদের পরিবর্তে নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে।

সৌদির শুরা কাউন্সিল সদস্য সাঈদ বিন কাশেম আল খালিদি আল মালিকি রাষ্ট্রীয় এই গণমাধ্যমকে বলেন, আমাদের সারাজীবন বিদেশি শ্রমিকদের ওপর নির্ভর করা উচিত নয়, যেখানে আমাদের নাগরিক যোগ্য প্রার্থী হিসেবে বসে আছে। সব সেক্টরেই কাজ করার মতো যোগ্য নাগরিক আমাদের আছে।

সৌদি আরব থেকে একটি সূত্র জানিয়েছে, ইতোমধ্যে অনেক দোকান বন্ধ হয়ে গেছে। যেসব দোকান বন্ধ হয়ে গেছে, সেসব প্রতিষ্ঠান প্রবাসী শ্রমিকরা চালাতেন। দীর্ঘ সময় ধরে তারা অনেকটা লুকিয়ে এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

জানা গেছে, সৌদি আরবের পরিসংখ্যান বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, এই ১২টি সেক্টরে ৬০ হাজার কর্মক্ষেত্রে বিদেশি শ্রমিকরা সংযুক্ত। সৌদিকরণ প্রক্রিয়ার ফলে এই শ্রমিকদের সেদেশ ছেড়ে চলে আসতে হবে। ইতোমধ্যে অনেকে নিজ দেশে ফেরতও গেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। গৃহস্থালি সামগ্রি, প্রসাধনী, গার্মেন্টসসহ কয়েকটি ব্যবসার সঙ্গে কয়েক হাজার বাংলাদেশি যুক্ত রয়েছেন। সৌদি আরবের এই সিদ্ধান্তে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

সৌদিতে অবস্থিত বাংলাদেশি দূতাবাস সূত্রে জানা গেছে, এই কয়েকটি সেক্টরে প্রবাসী শ্রমিকরা কাজ করতে পারবেন কিন্তু ব্যবসা করতে পারবেন না। মন্ত্রণালয়ে থেকে যেই গাইডলাইন দেওয়া হয়েছে, সেখানে বলা হয়েছে একটি প্রতিষ্ঠানে ৫ জন কর্মচারী থাকলে তার মধ্যে একজন বিদেশি শ্রমিক এবং বাকিদের সৌদি নাগরিক হতে হবে। এছাড়া পরিচয়পত্র ও কর্মক্ষেত্রে সংলিষ্ট পোশাক পরার বাধ্যবাধকতা ওই গাইডলাইনে রয়েছে। যে ১২টি সেক্টরে নিষেধাজ্ঞা আছে, তার মধ্যে গৃহস্থালি, অফিশিয়াল ফার্নিচার, পাইকারি ও খুচরা পোশাক বিক্রি ও গৃহস্থালি তৈজসপত্রের ব্যবসায় যুক্ত রয়েছেন বাংলাদেশিরা। তাই সৌদি আরবে থাকতে আগ্রহীরা কোনও ব্যবসার উপায় খুঁজছেন। আবার দীর্ঘদিন ধরে যারা ব্যবসা করছেন, তারা নতুন করে আর ঝামেলায় না জড়িয়ে দেশে ফেরার চিন্তা করছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সৌদিতে নিযুক্ত বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূত গোলাম মসি বলেন, ‘সৌদি সরকার একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখনও বাস্তবায়ন করেনি। তবে ধীরে ধীরে করবে। আমাদের লোকজন কিছুটা হলেও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তবে আমরা চেষ্টা করছি, নতুন নতুন সেক্টরে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে। সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি।’