বয়স পঞ্চাশ হলে- বয়স বাড়লে মানুষ বেশি করে অসুস্থতা বা রোগপ্রবণ হয়ে পড়ে। এ কারণে আপনার বয়স পঞ্চাশে পৌঁছলে আপনাকে স্বাস্থ্য নিয়ে পুনরায় ভাবতে হবে ও কার্যকর পরিকল্পনা করতে হবে। বয়স ৫০ হলে যা করা উচিত, তা নিয়ে তিন পর্বের প্রতিবেদনের আজ থাকছে প্রথম পর্ব।

* কোলনোস্কপি করুন

বেশিরভাগ মানুষের ক্ষেত্রে, তাদের ৫০তম জন্মদিন সতর্কবার্তা দেয় যে প্রথমবারের মতো কোলনোস্কপি স্ক্রিনিং করার সময় হয়েছে। এ পরীক্ষা ব্যথাহীন এবং চমৎকার উপকারিতা রয়েছে। কোলন ক্যানসার প্রাথমিক পর্যায়ে নির্ণয় করতে পারলে তা প্রতিরোধ ও নিরাময় করা যায়।

কারণ প্রাথমিক পর্যায়ের কোলন ক্যানসার হচ্ছে সর্বাধিক প্রতিরোধযোগ্য ও নিরাময়যোগ্য ক্যানসারের পর্যায়সমূহের একটি- কিন্তু এটি মারাত্মক পর্যায়ে না পৌঁছা পর্যন্ত উপসর্গ প্রকাশ পায় না বললেই চলে। কোলন ক্যানসার অ্যালায়ন্সের সিইও মাইকেল স্যাপিয়েনজা বলেন, ‘এটি এমন একটি রোগ যা প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে নিরাময়ের সম্ভাবনা ৯০ শতাংশ।’ কোলনোস্কপিতে সিডেশন ও একদিনের কর্মবিরতি প্রয়োজন হয়।

এ পদ্ধতি ছাড়াও অন্যান্য পদ্ধতি রয়েছে, কিন্তু কোলনোস্কপি হচ্ছে সর্বাধিক কমপ্লিট স্ক্রিনিং মেথড, কারণ এটি একটি সিঙ্গেল সেশনে পলিপ শনাক্ত ও অপসারণ করতে পারে এবং এটি নিয়ে আসলেই নার্ভাস হওয়ার কিছু নেই। অধিকাংশ প্রাপ্তবয়স্কদের তাদের ৫০ বছর বয়সে প্রথম কোলনোস্কপি করা উচিত, কিন্তু এ ক্যানসারের রিস্ক ফ্যাক্টরের (যেমন- কোলন ক্যানসারের পারিবারিক ইতিহাস) সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত লোকদের আরো আগে স্ক্রিনিং করা প্রয়োজন।

* চোখের চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন

আমেরিকান অ্যাকাডেমি অব অপথ্যালমোলজির ক্লিনিক্যাল মুখপাত্র রুথ ডি. উইলিয়ামস বলেন, ‘রিডিং গ্লাসের প্রয়োজন হওয়া হচ্ছে এমন একটি বিরক্তিকর লক্ষণ, যা বলে যে আপনি আসলেই বার্ধক্যের দিকে ধাবিত হচ্ছেন। এটি হচ্ছে বার্ধক্যের একটি অপরিবর্তনীয় লক্ষণ, যেখানে অন্যান্য লক্ষণ উপশম করা যায় যেমন- ওজন বেড়ে গেলে জিমে গিয়ে ওজন হ্রাস করতে পারেন।’

বয়স সম্পর্কিত চোখের সেবা শুরু হয় একটি বেসলাইন চক্ষু পরীক্ষা দিয়ে, যা সাধারণত ৪০ বছর বয়সে করা হয় এবং এ পরীক্ষা গুরুত্বপূর্ণ প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে ভূমিকা পালন করে, কারণ চোখের রোগের অনেক লক্ষণ দুর্বোধ্য। ডা. উইলিয়ামস বলেন, ‘গ্লকোমা হচ্ছে এমন একটি রোগ যা রোগী অনুধাবন করার পূর্বেই বিকশিত হতে পারে।’

বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যেসব সমস্যা দেখা দেয় তাদের মধ্যে চোখের ছানি, দৃষ্টিশক্তি হ্রাস, রাতে ড্রাইভিংয়ে সমস্যা, চোখ ব্যথা, চোখের লালতা এবং চোখে ফ্ল্যাশ ও ফ্লোটার অন্তর্ভুক্ত। এসব লক্ষণ দেখা দিলে কালবিলম্ব না করে চোখের চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত।

ডা. উইলিয়ামস বলেন, ‘হঠাৎ ফ্ল্যাশ ও ফ্লোটারের উপস্থিতি রেটিনাল ডিটাচমেন্ট বা রেটিনা বিচ্ছিন্ন হওয়ার ইঙ্গিত দিতে পারে এবং রাতে ড্রাইভিংয়ে সমস্যা ছানির প্রাথমিক নির্দেশক হতে পারে।’ চোখের সেবার ক্ষেত্রে উপদেশ হচ্ছে- শরীরের অন্যান্য অংশের সেবা করার মতোই: ধূমপান বর্জন করুন, সেকেন্ড-হ্যান্ড স্মোক পরিহার করুন এবং অতিবেগুনি রশ্মি থেকে ১০০ শতাংশ সুরক্ষা দেয় এমন সানগ্লাস পরুন। ডা. উইলিয়ামস বলেন, ‘সানগ্লাস যত বড় হবে, তত ভালো হবে।

সূর্য থেকে সুরক্ষা ম্যাকিউলার ডিজেনারেশন ও ছানি প্রতিরোধে সাহায্য করবে এবং বড় সানগ্লাস পরিধান চোখের আশেপাশের ত্বককেও সুরক্ষা দেবে ও বলিরেখা হওয়ার সম্ভাবনা হ্রাস করবে।’ চোখের স্বাস্থ্যের জন্য অবশ্যই বর্ণিল ফল ও শাকসবজি খেতে হবে। ডা. উইলিয়ামস বলেন, ‘গবেষণায় দেখা গেছে যে সবুজ শাকসবজি খাওয়া গ্লুকোমার বিকাশ ধীর করে এবং ম্যাকিউলার ডিজেনারেশনের ঝুঁকি হ্রাস করে। আমি এই তথ্য এত বেশি বিশ্বাস করি যে আমার প্রতিদিনের ডায়েটে সবুজ শাকসবজি রাখি।’

* ব্যায়াম শুরু করুন বা অব্যাহত রাখুন

নিয়মিত ব্যায়ামের অনেক প্রমাণিত উপকারিতা রয়েছে এবং এটি অনেক সর্বাধিক কমন ক্রনিক রোগ (যেমন- হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, অস্টিওপোরোসিস ও স্থূলতা) প্রতিরোধ, বিলম্ব অথবা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। এসব ক্রনিক রোগ ৫০ বছরের প্রাপ্তবয়স্ক ও তদোর্ধ্ব মানুষদের ওপর বেশি প্রভাব ফেলে।

আমেরিকান কলেজ অব মেডিসিনের ‘কমপ্লিট গাইড টু ফিটনেস অ্যান্ড হেলথ’র লেখক বারবারা বুশম্যান বলেন, এমন ফিজিক্যাল অ্যাক্টিভিটি নির্বাচন করুন যা আপনাকে আনন্দ দেয় এবং আপনি নিয়মিত করতে পারবেন।’ ডা. বুশম্যান বলেন, ‘আমাদের ৫০ বছর বয়স মানসিক চাপপূর্ণ- আমাদের সন্তানরা বেড়ে ওঠে এবং আমাদেরকে প্রায়সময় বৃদ্ধ পিতামাতার সেবা করতে হয়।’

ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব হেলথ অ্যান্ড হিউম্যান সার্ভিসেস অনুসারে, ‘আপনি যে ব্যায়ামই নির্বাচন করেন না কেন, যদি ব্যায়ামের স্বাস্থ্য উপকারিতা নিশ্চিত করতে চান, তাহলে আপনার প্রতিসপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট বা ২ ঘন্টা ৩০ মিনিট মডারেট ইন্টেনসিটি অ্যারোবিক ফিজিক্যাল অ্যাক্টিভিটির সঙ্গে জড়িত থাকা উচিত।’

* স্ট্রেংথ ট্রেনিং করুন

আমাদের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পেশীর ঘনত্ব ও শক্তি হ্রাস পায়- এ ঘটনাকে সারকোপেনিয়া বলে। এর সঙ্গে সংগ্রাম করার জন্য আপনাকে নিয়মিত কিছু ভারী জিনিস উত্তোলন করতে হবে।

টাফটস ইউনিভার্সিটির গবেষণা অনুসারে, দুর্বলতা ও ভঙ্গুরতা এবং তাদের নেতিবাচক প্রভাবের সঙ্গে ফাইট করার জন্য স্ট্রেংথ ট্রেনিং এক্সারসাইজের সামর্থ্য রয়েছে। ডা. বুশম্যান বলেন, ‘আপনি হাঁটতে পছন্দ করেন এবং তা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য ভালো, কিন্তু যদি আপনি রিটায়ারমেন্টের পর সক্রিয় থাকতে চান, তাহলে আপনার স্ট্রেংথ ট্রেনিংয়ের প্রয়োজন হবে।’

প্রতি সপ্তাহে দুই বা তিনদিন স্ট্রেংথ ট্রেনিং এক্সারসাইজ করলে পেশী শক্তিশালী হয় এবং পেশীর ঘনত্ব বাড়ে। ওজন উত্তোলনও আপনার হাড়ে চাপ ফেলে, যা হাড়ের ঘনত্ব সংরক্ষণে সাহায্য করে, যা আপনি পঞ্চাশে পৌঁছলে ১০ শতাংশ পাতলা হয়।

স্ট্রেংথ ট্রেনিং অস্টিওপোরোসিস এবং হৃদরোগ, আর্থ্রাইটিস ও টাইপ ২ ডায়াবেটিসের মতো ক্রনিক রোগের লক্ষণ ও উপসর্গের ঝুঁকিও হ্রাস করে। ওজন উত্তোলন ঘুমের উন্নয়ন এবং বিষণ্নতা হ্রাসেও সাহায্য করে। ডা. বুশম্যান বলেন যে, আপনার পঞ্চাশে স্ট্রেংথ ট্রেনিং যোগ আপনাকে শক্তিশালী ও স্বাধীন থাকতে সাহায্য করবে।

* ডায়েট সম্পর্কে সচেতন হোন

যদি আপনি পঞ্চাশে পৌঁছেন, তাহলে আপনার ডায়েট সম্পর্কে সচেতন হওয়া প্রয়োজন, কারণ আপনি বিশ ও ত্রিশ বছর বয়সে যেভাবে খেয়েছেন, এখন আর সেভাবে খেতে পারবেন না। যুক্তরাষ্ট্রের রেজিস্টার্ড ডায়েটিশিয়ান এবং অ্যাকাডেমি অব নিউট্রিশন অ্যান্ড ডায়েটেটিক্সের মুখপাত্র অ্যাঞ্জেল প্লানেলস বলেন, ‘অনেক লোক তারুণ্যে যেভাবে খেয়েছেন সেভাবে খেতে চান, কিন্তু তাদের কার্যকলাপের মাত্রা হ্রাস পেয়েছে।

তাদের ওজন বেড়ে যায়, তারা বেঁকে যায়, তাদের কোমরে টায়ার হয় অথবা তারা চিকিৎসকের কাছে যান এবং জানতে পারেন যে তাদের উচ্চ কোলেস্টেরল রয়েছে।’ শরীরকে পুষ্টি সরবরাহ নিশ্চিত করতে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে রেজিস্টার্ড ডায়েটিশিয়ানের শরণাপন্ন হওয়া প্রয়োজন।

তিনি বলেন, ‘আপনার নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন যে ফাইবারের ঘাটতি হচ্ছে না এবং পেশীকে জ্বালানি যোগাতে পর্যাপ্ত প্রোটিন খাচ্ছেন।’ ৫০ বছর বয়স্ক এবং তদোর্ধ্ব লোকদের ফাইবারের পাশাপাশি ভিটামিন ডি, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন বি-১২, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড এবং পটাশিয়ামও খেতে হবে।

ডা. প্লানেলস বলেন, ‘পটাশিয়াম রক্তচাপ হ্রাস করে এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়- আপনি কলা, আলু, কমলা ও দুগ্ধজাত খাবারে এটি পাবেন। হাইড্রেটেড আছেন এটা নিশ্চিত হওয়াও গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু চিনিযুক্ত পানীয় পরিহার করুন।’ স্ন্যাক ক্ষুধা নিবারণ করে, কিন্তু আপনার চিপস, কেক ও কুকিজের পরিবর্তে ফল, শাকসবজি ও বাদাম খাওয়া প্রয়োজন। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে রেস্টুরেন্টের খাবার এড়িয়ে চলুন।