সিবিএন ডেস্ক:
নির্বাচন বানচাল করে অসাংবিধানিক সরকার প্রতিষ্ঠার ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সেপ্টেম্বর মাসের ১৮ তারিখ থেকে তফসিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট।

শনিবার (১ সেপ্টেম্বর) আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমণ্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ের পাশে নতুন ভবনে জোটের এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও জোটের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম।

নির্বাচন ঠেকানোর ক্ষমতা কারও নেই বলে উল্লেখ করে ১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, ‘‘যখনেই নির্বাচন আসে, ভোটের মাধ্যমে জনগণের রায় নেওয়ার সময় আসে, তখনই একটি অশুভ মুখচেনা-মহল তৎপরতা শুরু করে দেয়। এরা চক্রান্ত শুরু করেছে। আমরা বিশ্বাস করি এই ধরনের চক্রান্তকারীদের বিরুদ্ধে জনগণ ঐক্যবদ্ধ আছে, থাকবে। ১৪ দল সজাগ আছি। আমরা দেশবাসীকে অনুরোধ করবো,আগামী নির্বাচনকে ফলপ্রসূ করার জন্য আপনারা সজাগ থাকবেন। এই লক্ষ্যে সেপ্টেম্বর মাসের ১৮ তারিখ থেকে মাঠে নামবো। পর্যায়ক্রমে সারা বাংলাদেশে বিভাগীয় সমাবেশ করবো। এই সমাবেশ সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। নির্বাচনে তফসিল ঘোষণা হওয়ার পর আমরা যার যার মতো নির্বাচনি কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়বো। আমাদের সামনে একটাই কাজ-’৭১ এর ঘাতক ও ’৭৫ এর খুনিদের পরাজিত করা, মাঠে-ময়দানে এবং নির্বাচনের মাঠে তাদের পরাজিত করা। নির্বাচন ঠেকানোর ক্ষমতা কারও নেই।’

মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন ঘোষণা করেছে ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে জাতীয় নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। নির্বাচনি কর্মকাণ্ড দেশব্যাপী শুরু হয়ে গেছে। যেহেতু সংবিধান অনুযায়ী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে আগামী ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারির মধ্যে, সেই কারণেই নির্বাচন নিয়ে মানুষের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা রয়েছে, দলের প্রস্তুতিও আছে।’

গত নির্বাচনের সময় সহিংসতার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘২০১৪ সালে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তখনও এই অশুভ মহলটি জ্বালাও-পোড়াও করে দেশে একটি অসাংবিধানিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করার লক্ষ্যে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে অরাজকতা সৃষ্টি করেছিল। তখনও আমরা ১৪ দল ঐক্যবদ্ধভাবে সেই অশুভ শক্তি মোকাবিলা করে নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে কমিশনকে সহায়তা করেছিলাম।’

আওয়ামী লীগের এই নেতা আরও বলেন, ‘আজকে যখন নির্বাচন প্রায় ঘরের দুয়ারে কড়া নাড়ছে, একটি নির্বাচিত সরকারের পক্ষে রায় দিতে জনগণ যখন উন্মুখ হয়ে আছে, তখন আবার সেই মুখচেনা মহলটি মাঠে নেমে গেছে। নির্বাচন নিয়ে প্রস্তুতি গ্রহণ করলে আমরা অবশ্যই স্বাগত জানাবো। কিন্তু নির্বাচনের সময় আসলেই যেন কিছু অবান্তর, অসাংবিধানিক প্রশ্ন তারা সামনে তুলে আনেন। সারা দুনিয়ায় এখন নির্বাচিত সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আমরা মনে করি, জনগণের রায় দেওয়ার যেমন অধিকার আছে, তথ্য প্রযুক্তির যুগে নির্বাচনকে কোনোভাবেই প্রভাবিত করার সুযোগ নেই; সেই ব্যাপারে দেশবাসী যেমন সজাগ, তেমনি আমাদের সংবাদ মাধ্যমও সজাগ।’

‘সংবিধানের বাইরেও নির্বাচন করা যেতে পারে’ বলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের এমন বক্তব্যের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘এ ধরনের বক্তব্য দিয়ে যারা কথা বলে, তাদের মনের অভিসন্ধি কী তা আপনারা বুঝতে পারেন। একটি খেলা যখন হবে, খেলার কিছু বিধিবদ্ধ নিয়ম-কানুন আছে। সেই নিয়ম তো আর কথায় কথায় পরিবর্তন করা যাবে না। খেলায় জেতার জন্য যে কোনোভাবে নিয়ম পরিবর্তন করে খেলায় অংশগ্রহণ করতে হবে-এটা হতে পারে না। সুবিধা অনুযায়ী আপনি খেলার নিয়ম পরিবর্তন করতে পারবেন না।’

ওয়ান ইলেভেন সম্পর্কে জোটের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম বলেন,‘ওয়ান-ইলেভেনের আগে কিছু লোক নেমেছিল। তাদের মুখে অনেক কথা আমরা শুনেছি, বিশিষ্ট ব্যক্তিদের কথা আমরা শুনেছি। তাদের সেই অভিলাস চরিতার্থ করার জন্যে তারা ওয়ান-ইলেভেন ঘটিয়েছিল। কীভাবে সেখানে একটি অনির্বাচিত সরকার দীর্ঘদিন কাজ করেছিল সেটা আপনারা সবাই জানেন। সেই কারণেই আমরা বলতে চাই, সংবিধান বিরোধী কোনও কাজ বাংলাদেশে হবে না। সংবিধান বিরোধী কোনও কাজ আমরা ১৪ দল মেনে নেবো না। সংবিধান অনুযায়ী আগামী ডিসেম্বর মাসে নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেই নির্বাচনে ১৪ দল জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অংশগ্রহণ করবে। নির্বাচন আমরা সবাই চাই। আমরা আন্তরিকভাবে চাই সব দল অংশগ্রহণ করুক। নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে জনগণের রায় মেনে নিক।’

প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দৌজা চৌধুরী ও সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেনের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, ‘আজকে ফ্রণ্ট হচ্ছে, কোনও অসুবিধা নেই। কিন্তু আমরা তো অনেককে চিনি। অত্যন্ত ঘৃণার সঙ্গে বলতে হয়, অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে বলতে হয়, কিছুদিন আগেও এখানে জুডিশিয়াল ক্যু করার চেষ্টা হয়েছিল। এটা আজকে প্রকাশিত হয়ে গেছে। একজন বিশিষ্ট আইনজীবী, আইনজ্ঞ কীভাবে একজন সাবেক প্রধান বিচারপতিকে ব্যবহার করে জুডিশিয়াল ক্যু করে পাকিস্তানের মতো অবস্থা সৃষ্টি করতে চেয়েছিল। শেখ হাসিনার দৃঢ়তার কারণে, ১৪ দলের নেতাদের দৃঢ়তার কারণে ওই চক্রান্ত ব্যর্থ হয়ে গেছে। এখন আবার নতুন চক্রান্ত শুরু হয়েছে- কীভাবে এই নির্বাচনকে প্রতিহত করা যায়।’

সংলাপের দাবির মাধ্যমে নির্বাচনকে পিছিয়ে দেওয়ার চক্রান্ত চলছে দাবি করে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘নির্বাচনকে ঠেকানোর জন্য বলা হচ্ছে- আমাদের এই দাবি মানতে হবে। এই ধরনের অযৌক্তিক দাবি কেউ মানবে না। কোনও অর্থহীন সংলাপের পক্ষে ১৪ দল নয়। সংলাপের মানে হচ্ছে এই নির্বাচনকে পিছিয়ে দেওয়া, দীর্ঘায়িত করার একটা চক্রান্ত। এই সংলাপের অর্থই হলো দেশে একটা পরিস্থিতি সৃষ্টি করা, যে পরিস্থিতির মাধ্যমে দেশে একটা অসাংবিধানিক সরকার প্রতিষ্ঠা করা যায়। এই জন্যই সংলাপের কথা বলা হয়। এর সঙ্গে ১৪ দল একমত নয়, ১৪ দল ছাড় দেওয়ার পক্ষে নয়। নির্বাচন কমিশন নির্বাচন করবে। নির্বাচন কমিশন তার নীতি অনুযায়ী সবাইকে সমান সুযোগ দেবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। বর্তমান সরকারের অধীনেই সেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এর কোনও ব্যত্যয় ঘটার সুযোগ নেই।’

জাতীয় পার্টি (জেপি)-এর মহাসচিব শেখ শহীদুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান, জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, উপ-দফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, বাসদের আহ্বায়ক রেজাউর রশীদ খানসহ আরও অনেকে।