শাহেদ মিজান, সিবিএন:

আগামী সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগে প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে কক্সবাজার জেলার চার আসনের মধ্যে মহেশখালী-কুতুবদিয়া আসন এখন বেশ আলোচনায়। এতদিন কোনো কথা-বার্তা বা আকার-ইঙ্গিত না করে হঠাৎ দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী হয়ে এই আলোচনার জন্ম দিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও এই আসনের আওয়ামী লীগ মনোনিত সাবেক প্রার্থী এড. সিরাজুল মোস্তফা। মনোনয়নের মাঠে তাঁর এই আকস্মিক আগমণে মহেশখালী-কুতুবদিয়ার আওয়ামী রাজনীতি এখন বেশ চাঙ্গা! তাঁর আগমণে দলেও একটা ব্যতিক্রমী ধারা সৃষ্টি হয়েছে। নেতাকর্মীদের একটি অংশও বেশ ফুরফুরে! এড.সিরাজুল মোস্তফার এই আগমণে এই আসনের আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে নতুন হিসাব শুরু হয়েছে। সে হিসাবের রেশ ধরে একটি প্রশ্ন এখন ঘুরপাক খাচ্ছে তা হলো- এই আসনে কি আওয়ামী লীগের প্রার্থী নিয়ে চমক অপেক্ষা করছে?

জানা গেছে, বিএনপি ঘাঁটি খ্যাত মহেশখালী-কুতুবদিয়া আসনে ৯১ নির্বাচনের পর ভোটের লড়াইয়ে আওয়ামী লীগের জয় নেই। তবে ২০১৪ সালে বিএনপি বিহীন নির্বাচনে বর্তমান সাংসদ আশেক উল্লাহ রফিক বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সাংসদ নির্বাচিত হয়েছেন। তার স্থলে সাংসদ হওয়ার দৌড়ে ছিলেন ২০০৮ সালের মহাজোট মনোনিত প্রার্থী ড. আনচারুল করিমের। কিন্তু মনোনয়ন দৌড়ে ছিটকে পড়েছিলেন তিনি। আগামী নির্বাচনের জন্য দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী তিনিও। স্বাভাবিক ভাবে আছেন বর্তমান সাংসদ আশেক উল্লাহ রফিক। তাদের সাথে দীর্ঘদিন ধরে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশী ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ওসমান গণি। বিগত এক বছর ধরে সমানভাবে মাঠে রয়েছেন এই তিনজন। কিন্তু কোনো পূর্ব ইঙ্গিত ছাড়াই ঈদুল আযহাকে উপলক্ষ্যে করে মনোনয়ন মাঠে হাজির হন এড. সিরাজুল মোস্তফা। ঈদুল আযহার শুভেচ্ছা জানিয়ে মহেশখালী-কুতুবদিয়ার জায়গায় জায়গা অগণিত ব্যানার টাঙান তিনি। ফাইনাল চমকটি দেন ঈদুল আযহার তৃতীয় দিন। ওই তাঁর মহেশখালীর গ্রামের বাড়িতে বিভিন্ন পর্যায়ের বিপুল নেতা এবং গণমাধ্যম কর্মীদের ডেকে তিনি দলীয় মনোনয়ন চাওয়ার ঘোষণা দেন। ওই বৈঠকে খোদ সাংসদ আশেক উল্লাহ রফিকও উপস্থিত ছিলেন। তাঁর আকস্মিক ঘোষণায় মহেশখালী-কুতুবদিয়ার পুরো রাজনৈতিক অঙ্গনে বেশ আলোচনা সৃষ্টি হয়। এই ঘোষণার পর এড. সিরাজুল মোস্তফা মহেশখালী-কুতুবদিয়া ব্যাপক গণসংযোগও করেন। এতে অনেকে অবাক হয়েছেন।

স্থানীয় সূত্রে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এড. সিরাজুল মোস্তফার মনোনয়নের মাঠে আসার পর মহেশখালী-কুতুবদিয়ার আওয়ামী লীগের রাজনীতে ভিন্ন পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। প্রকাশ্যে না হলেও আওয়ামী লীগের মধ্যে দু’টি ধারা সৃষ্টি হয়েছে। একটি আশেক উল্লাহ রফিক কেন্দ্রিক। আরেকটি এড. সিরাজুল মোস্তফা কেন্দ্রিক। তবে ড. আনচারুল করিম এবং ওসমান গণি কেন্দ্রিক নেতাকর্মীরা স্বাভাবিক রয়েছেন। এড. সিরাজুল মোস্তফা মনোনয়ন প্রত্যাশায় খুব সিরিয়াস বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। শেষ মুহূর্তে তিনিই আওয়ামী লীগের মনোননয় পেলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না! একই সাথে চমক দেখাতে পারেন ড. আনচারুল করিমও। তালিকায় রয়েছে ওসমা গণিও।

স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বলছেন, এড. সিরাজুল মোস্তফা মনোনয়নের মাঠে নামায় একটা চমকের সৃষ্টি হয়েছে। আকস্মিক হলেও তিনি নিশ্চয়ই কেন্দ্রের কোনো ‘সবুজ সংকেত’ নিয়ে মাঠে নেমেছেন বলে করছেন নেতাকর্মীরা। তাই তার বিষয়টি উড়িয়ে দেয়ার কোনো সুযোগ নেই বলেও মনে করা হচ্ছে। তাই নেতাকর্মীরা এখন হিসাব কষছে! তাদের ঘরানার ‘ক্ষুব্ধ’ নেতাকর্মীরা তাকেই আগামীতে দলীয় প্রার্থী হিসেবে পেতে উঠেপড়ে লেগেছেন। এতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নিয়ে চমক অপেক্ষা করছে মনে করা হচ্ছে।

এদিকে বর্তমান সাংসদ আশেক উল্লাহ রফিক সমর্থক নেতাকর্মীরা দাবি করছেন, এড. সিরাজুল মোস্তফা আশেক উল্লাহ রফিকের জন্য মাঠে নেমেছেন। ড. আনচারুল করিমে প্রভাব ঠেকাতে কৌশলগত কারণে তিনি এই পদক্ষেপ নিয়েছেন। এটা আশেক উল্লাহ রফিকের জন্য ঢালও বলে দাবি করছেন কিছু নেতারা। শেষ মুহূর্তে তিনি আশেক উল্লাহ রফিককেই সমর্থন জানাবেন-এমনটি দাবি আশেক উল্লাহ রফিক সমর্থকদের।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, এড. সিরাজুল মোস্তফা এবং আশেক রফিককে নিয়ে বেশ বেকায়দায় পড়েছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ। জেলা ও স্থানীয় রাজনীতি তারা দু’জনই একই ঘরাণার হওয়ায় নেতাকর্মীরা দু’টানায় পড়েছেন। তাই বিষয়টি নিয়ে দলের মধ্যে বেশ আলোচনা হচ্ছে। দলের একটি অংশ এড. সিরাজুল মোস্তফাকে ‘বুঝিয়ে’ বশ করে আশেক উল্লাহ রফিককেই প্রার্থী করতে চাইছেন। এই নিয়ে বেশ কথা চালাচালিও হচ্ছে! তবে শেষ মুহূর্তে কি হবে এখন পর্যন্ত বলতে পারছে না দলের কেউ।

অন্যদিকে আপাতত এড. সিরাজুল মোস্তফা এবং আশেক উল্লাহ রফিকের মধ্যে মনোনয়ন নিয়ে স্নায়ুযুদ্ধ যেমনই হোক শেষ মুহূর্তে ড.আনচারুল করিম এবং ওসমান গণিসহ অন্য কেউ মনোনয়ন নিয়ে আসলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না বলে সাধারণ নেতাকর্মীরা মনে করছেন।

এই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এড. সিরাজুল মোস্তফা বলেন, ‘আমি পুরানো রাজনীতিবিদ। আমি আগেও নির্বাচন করেছি। আমি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতিও। আমার মনোনয়ন চাওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। এটা নিয়ে কেউ আতঙ্কিত হওয়ার মতো কিছু না। এতদিন হালকাভাবে ছিলাম; বলিনি। কারণ আমি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। এখন সময় কাছে আসায় মনোনয়ন চাওয়ার ঘোষণা দিয়েছি। এটাতে আশ্চর্য্য হওয়ার কিছু নেই।’

তিনি আরো বলেন, মনোনয়নের বিষয়ে বিভিন্ন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হিসাব-নিকাশ আছে। বিভিন্ন রিপোটেশন আছে। তিনি বুঝে-চিন্তে যাকে মনোনয়ন দিবেন তাকে মেনে নেবেন সবাই। আমিও মেনে মেনো। আর আমি পেলে সবাইকে সাথে নিয়ে যেভাবে নৌকা বিজয় আনতে আপ্রাণ কাজ করবো।

তিনি বলেন, ‘মনোনয়ন অনেকে চাইতে পারে। তবে জেলা সভাপতি হিসেবে আমার নির্দেশনা হচ্ছে মনোনয়ন চাইতে গিয়ে কেউ কারো সাথে দলাদলি, দলে কোন্দল সৃষ্টি করবেন না; সম্পর্ক খারাপ করবেন না। সবাই একই মঞ্চে বসেও মনোনয়ন চাইতে পারেন। পরে যে মনোনয়ন পাবেন তার পক্ষে সবাই মিলেমিশে কাজ করবেন।’

আশেক উল্লাহ রফিককে সমর্থন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এটা প্রশ্নই আসে না। আমি দীর্ঘদিনের ত্যাগী রাজনীতিবিদ ও সবার মুরুব্বী। আমি কাউকে সমর্থন করবো। এটা বলে থাকলে তারা আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। কথা হচ্ছে- আমাকে দিলে সবাই মেনে নিতে পারবে এবং মনোনয়ন পাওয়ার অধিকার আমারই বেশি। সে জন্য আমি মনোনয়ন চেয়েছি; কাউকে সমর্থন করার জন্য নয়। আমি আমার নৈতিকতাকে কারো কাছে বিক্রি করবো না। আমি সবার উপরের প্রার্থী।’

সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক বলেন, আমি যেহেতু এখন সংসদ সদস্যের দায়িত্বটা পালন করতেছি। স্বাভাবিকভাবেই আমি মনোনয়ন পাবো। নির্বাচন একটা কঠিন কাজ। এ ব্যাপারে হান্ড্রেট পা¯েœট কনফার্ম যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে দিয়ে কঠিন কাজটা আমাকে দিয়ে করাবেন। আমাদের দলে আরো অনেকে মনোনয়ন চাইতে পারে। আমাদের মোস্তফা ভাইও তেমনি একজন। ওনি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। তিনি ১৯৯৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন করেছেন। তারও চাওয়ার অধিকার আছে। এটা কোনো কথা নয়। চূড়ান্ত মনোনয়নের মালিক হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি যাকে মনোনয়ন দেবেন আমরা তার পক্ষে ঐক্যব্ধ হয়ে কাজ করে নৌকাকে বিজয়ী করে আনবো। তবে আমাকে না দিলেও যাকে দিবে আমি তার পক্ষে নিবেদিত হয়ে কাজ করবো।’

ড. আনচারুল করিম বলেন, ‘মহেশখালী স্বপ্নের সিঙ্গাপুর হিসেবে গড়ে তুলতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কয়লাববিদ্যুৎসহ বড় বড় প্রকল্প করছেন। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য যোগ্য নেতৃত্ব দরকার। এসব বিবেচনায় আমি দলের মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী।’

ওসমান গণি বলেন, ‘জননেত্রী শেখ হাসিনা খুব সিরিয়াস প্রক্রিয়ায় প্রার্থী মনোনয়ন প্রক্রিয়া চালাচ্ছেন। তিনি একজন মনোনয়ন প্রত্যাশীর সব বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছেন। সে প্রক্রিয়ায় মনোনয়ন দিলে আমি মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী।’