ডেস্ক নিউজ:

কোটা সংস্কার আন্দোলন, নিরাপদ সড়কের দাবিতে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের আন্দোলন, বেকার সমস্যা- কোনো কিছুই আওয়ামী লীগের জন্য বাধা হয়ে দাঁড়াবে না। এসব সমস্যা আসছে নির্বাচনে কোনো প্রভাব ফেলবে না। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ তরুণ ও যুব সমাজের জন্য যেভাবে কাজ করছে তাতে তরুণ ভোটাররা আবারও আওয়ামী লীগকে বেছে নেবে রাষ্ট্রক্ষমতায়। এবারও তারাই নির্বাচনের বৈতরণী পার করাবে। এমন আত্মবিশ্বাস ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের শীর্ষকর্তাদের।

বর্তমানে দেশে মোট ভোটার সংখ্যা ১০ কোটি ৪১ লাখ ৪২ হাজার ৩৮১ জন। এর মধ্যে নতুন ভোটার দুই কোটি ৩০ লাখের বেশি। ক্ষমতাসীনদের প্রত্যাশা, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অধিকাংশ তরুণের ভোট পাবে আওয়ামী লীগ। দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

তারা জানান, আসছে নির্বাচনে তরুণ ভোটারদের কাছে টানতে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। আগামী নির্বাচনের জন্য যে ইশতেহার ঘোষণা হবে তাতে তরুণদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা, নিজের পায়ে দাঁড়াতে বিশেষ ব্যাংক লোনের ব্যবস্থা, বেকার ভাতাসহ নানা প্লাটফর্মে তরুণদের কাজে লাগানোর পরিকল্পনা রয়েছে।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে আলোচনা করে জানা গেছে, প্রযুক্তিনির্ভর তরুণ ভোটারদের টার্গেট করে, তাদের মন জয় করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় কাজ করছেন। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে তিনি তরুণদের নিয়ে ভাবছেন। তথ্যপ্রযুক্তির ভেতরে তাদের কীভাবে প্রবেশ করানো যায় সেই চিন্তায় অনবরত কাজ করে যাচ্ছেন তিনি।

তরুণদের নিয়ে বিভিন্ন সভা-সেমিনার ও সিম্পোজিয়াম করছেন। বিভিন্ন টেলিভিশনে তরুণদের নিয়ে মতবিনিময়, মুক্ত আলোচনাও করছেন। তরুণদের ভাবনায় আওয়ামী লীগ গঠনে মুখ্য ভূমিকা রাখছেন তিনি। নিজের ‘ক্লিন ইমেজ’ নিয়ে তরুণ ভোটারদের মন কাড়ার চেষ্টা করছেন সজীব ওয়াজেদ জয়।

আওয়ামী লীগের গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই) তরুণ ভোটারদের টার্গেট করে ‘ইয়ং বাংলা’ প্লাটফর্ম তৈরি করেছে। এর সঙ্গে হাজার হাজার তরুণ-তরুণী সম্পৃক্ত। এ প্লাটফর্মের আওতায় তরুণদের উৎসাহিত করতে ‘জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড’ দেয়া হচ্ছে। এ অ্যাওয়ার্ড কর্মসূচিতে তরুণদের আশা-আকাঙ্ক্ষা ও ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা বলেন এবং তাদের উৎসাহিত করেন সজীব ওয়াজেদ জয়।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা আরও জানান, আওয়ামী লীগের পক্ষে তরুণ ভোটারদের উদ্বুদ্ধ করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গৃহীত হচ্ছে। সরকারের ১০ বছরের উন্নয়নচিত্র তুলে ধরতে প্রতিটি মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তাদের মতে, নবম সংসদ নির্বাচনের আগে ‘আওয়ামী লীগের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়’ লুফে নিয়েছিল তরুণরা। এরই ধারাবাহিকতায় নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। সরকারের প্রথম মেয়াদে এমন পদক্ষেপ নেয়ায় ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ এখন বাস্তব।

শিক্ষাব্যবস্থায় তথ্যপ্রযুক্তির ব্যাপক সম্প্রসারণ ছাড়াও প্রশাসন, ব্যাংকিং, চিকিৎসাসেবা, ব্যবসা-বাণিজ্য ও গণযোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারে বাংলাদেশ এখন দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষে। প্রতিটি ইউনিয়নে ইন্টারনেট সংযোগ প্রদান করে ইউনিয়ন তথ্য ও সেবা কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে। বাংলাদেশে এখন প্রায় আট কোটি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন। থ্রি-জি, ফোর-জি চালু রয়েছে। ফাইভ-জি চালুর প্রক্রিয়া সম্পর্কে সম্প্রতি সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জিতলে ফাইভ-জি চালু হবে।

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান এ প্রসঙ্গে জাগো নিউজকে বলেন, ‘তরুণরা যেমন আবেগি তেমনি বুদ্ধিমান। কোন সরকার দেশের জন্য কী করেছে- সেটা তারা যেমন বিচার করতে পারে; আবার কোন সরকার ফের ক্ষমতায় এলে কী করবে- তাও তারা নির্ধারণ করতে পারে।’

তিনি বলেন, এর আগে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে আওয়ামী লীগ ভোটের মাঠে গিয়েছিল। এই তরুণরাই ব্যাপকভাবে সাড়া দেয়ায় নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। ফলে ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়ন হয়।

সাম্প্রতিক সময়ের বিভিন্ন আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে কিনা- জানতে চাইলে ফারুক খান বলেন, ‘কোটা সংস্কার আন্দোলন, কোমলমতি শিক্ষার্থীদের আন্দোলন, বেকার সমস্যা- কোনোকিছুই আওয়ামী লীগের জন্য বাধা হয়ে দাঁড়াবে না। এসব সমস্যা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কোনো প্রভাব ফেলবে না।’

দলটির অপর প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুল মতিন খসরু বলেন, ‘যুবক ও তরুণদের জন্য সরকার নানামুখী উদ্যোগ বাস্তবায়ন করছে। বেকার যুবকদে স্বাবলম্বী করতে, নিজের পায়ে দাঁড়াতে ব্যাংক লোনের ব্যবস্থা করছে। সরকার আগামীতে যে ১০০টি শিল্পাঞ্চল করছে তাতে কোটি যুবকের কর্মসংস্থান হবে।’

‘তরুণ ভোটারদের আওয়ামী লীগের প্রতি আকৃষ্ট করতে নির্বাচনী ইশতেহারেও চমক থাকবে’ উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘যুবক ও তরুণদের টার্গেট করে প্রাথমিক সদস্যপদ দিচ্ছে তৃণমূল আওয়ামী লীগ। ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন কমিটিতে অনেককে স্থান দেয়া হচ্ছে। সহযোগী সংগঠন যুবলীগ, যুব মহিলা লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, তাঁতীলীগ, শ্রমিক লীগসহ অন্যান্য সংগঠনে তরুণ ভোটারদের বিভিন্ন শাখা কমিটিতে স্থান দেয়া হচ্ছে। ফলে তরুণ সমাজের অধিকাংশ ভোট পাবে আওয়ামী লীগ।’