সিবিএনঃ
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের বালিকা মাদ্রাসা পয়েন্টে ঝাউবন কেটে স্থাপনা করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ইতোমধ্যে ওখানে প্রায় এক একর ঝাউবন ঘিরে ফেলা হয়েছে। তৈরি করা হয়েছে ৩টি ঘর।জেলা প্রশাসনের নাম দিয়ে সৈকতের প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকায় (ইসিএ) এ স্থাপনা নির্মাণের কারণে একদিকে যেমন পর্যটকের স্বাভাবিক চলাচলে প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে অন্যদিকে মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয়ের আশংকা করছেন পরিবেশবাদীরা।
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত রক্ষা ও সংরক্ষণে ২০১১ সালে হাইকোর্টের একটি নির্দেশনা রয়েছে। উচ্চ আদালতের এ নির্দেশ ও পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অমান্য করে এ স্থাপনাটি নির্মাণ করা হচ্ছে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের মাদ্রাসা পয়েন্টে কবিতা চত্বর এর উত্তর পাশে প্রায় এক একর ঝাউবন দখল করে তিনটি কাঠের ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। অনেকটা জেটির আদলে নির্মাণ করা হচ্ছে কাঠের একটি উচু ফ্লাইওভার। এসব নির্মাণে ব্যবহার করা হচ্ছে ঝাউগাছ। নির্মাণ শ্রমিকেরা বলেছে, এখানে রেস্টুরেন্ট করা হচ্ছে ।

পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সাইফুল আশরাফ বলেন, শুনেছি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সৈকতে এ স্থাপনাটি নির্মাণ করা হচ্ছে, কিন্তু এ স্থাপনা নির্মাণে পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে কোন অনুমতি নেয়া হয়নি।
পরিবেশ সংগঠন ইয়েস কক্সবাজারের প্রধান নির্বাহী ইব্রাহিম খলিল মামুন বলেন, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ও সৈকত এলাকা সংরক্ষণের জন্য আমরা দীর্ঘদিন ধরে নানা ভাবে আন্দোলন করে আসছি। তারই ধারাবাহিকতায় আমাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে হিউম্যান রাইটস অ্যাড পিস ফর বাংলাদেশ এর পক্ষ থেকে সৈকত রক্ষায় একটি রিট মামলা দায়ের করা হয়।
ওই মামলার প্রেক্ষিতে ২০১১ সালের ৭ জুন কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত এলাকায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে সৈকত রক্ষা এবং সংরক্ষণ করার নির্দেশনা দেয় হাইকোর্ট।
তিনি বলেন, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত দখল করে একাধিক স্থাপনা নির্মাণ করা হলেও উচ্চ আদালতের নির্দেশনার বাস্তবায়ন আমরা দেখছিনা।
কক্সবাজার পিপল্স ফোরামের মুখপাত্র এইচ এম নজরুল ইসলাম বলেন- কলাতলী সাগরতীরে প্রকৃতি উপাদানে তৈরি তিনটি পরিবেশ সম্মত রেস্টুরেন্ট ছিল। যেখানে পর্যটকের বিচরণ ছিলও বেশ। বিভিন্ন দাবী ও সাগরতীরে হওয়ায় ২০১১ সালের দিকে ওই তিনটি রেস্টুরেন্ট উচ্ছেদ করা হয়েছিল। এছাড়া সাগরতীরে কোনো ধরণের স্থাপনা নির্মানের অনুমতিও নেই। সেখানে কিভাবে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে রেস্টুরেন্টে আদলে স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে। তাও আবার পর্যটক চলাচলের রাস্তা ও সাগরতীরে হাঁটার জায়গার উপর। পর্যটকদের জন্য এটি বড় ধরণের প্রতিবন্ধকতা বলে তিনি মনে করছেন।
কক্সবাজার সম্পদ আন্দোলন রক্ষা কমিটির অন্যতম নেতা নাজিম উদ্দিন বলেন- বিএনপি সরকারের আমলে সৈকতের ডায়াবেটিস পয়েন্টে একটি কাঠের সেতু নির্মাণের চেষ্টা করা হয়েছিল। সেতুটি ঝাউবনের ভিতর দিয়ে প্রায় সাগরের কয়েকশ’ ফুট পর্যন্ত নির্মাণের পরিকল্পনা ছিল। ওই সময়ে কক্সবাজারবাসীর আন্দোলনে বিএনপি সরকার তা করতে ব্যর্থ হয়েছিল। কিন্তু এখন ওই সেতুটির মতো সাগরতীর ও সাগরে চলাচলের রাস্তার উপর স্থাপনা নির্মাণ করছে প্রশাসন। এবিষয়েও আমরা আন্দোলনে যাবো।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো: কামাল হোসেন এ প্রসঙ্গে বলেন, সৈকতের মাদ্রাসা পয়েন্টে একটি চৌকি নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা প্রশাসন। রেস্টুরেন্ট কিংবা অন্য কোন স্থাপনা নয়।