শাহিদ মোস্তফা শাহিদ, কক্সবাজার সদর:

ঈদগাঁও সাংগঠনিক উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্তের প্রায় এক মাস পর কমিটি ঘোষনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম কিংবা শেষ সপ্তাহের দিকে সাংগঠনিক উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষনা করা হবে বলে বিভিন্ন সূত্র বলছে। নেতৃত্বে পেতে মাঠ পর্যায়ে নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগের পাশাপাশি উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ শীর্ষ নেতাদের কাছেও নিজেদের অবস্থান তুলে ধরতে সচেষ্ট পদপ্রাপ্তি নেতারা। শোকের মাসে কমিটি ঘোষণা না হলেও প্রার্থীরা ছিল প্রচারণায় ব্যস্ত। তবে সাবেক কমিটি পুর্ণাঙ্গ করতে না পারায় হতাশ হয়ে পড়েছিলেন পদ-প্রত্যাশী তৃণমূল পর্যায়ে নেতাকর্মীরা। এ নিয়ে দলের ভিতর ও বাহিরে চলছিল নানা আলোচনা-সমালোচনা। অবশেষে সেপ্টেম্বর মাসের দিকে সাংগঠনিক উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষনা হবে এমন খবরে দলীয় নেতাকর্মীর মধ্যে প্রাণচাঞ্চ্যলতা ফিরে এসেছে। তবে ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষনা হলে কারা আসছে নেতৃত্বে? এনিয়ে চলছে বৃহত্তর ঈদগাঁওয়ের প্রত্যন্ত ইউনিয়নের ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক আলাপ-আলোচনা। সাংগঠনিক উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটির সভাপতি পদে দেলোয়ার কামাল, ইমরানুল হক জিকন, ইরফানুল করিম আলোচনায় রয়েছেন। তাদের নিয়ে স্থানীয় সংগঠনের ভিতরে চলছে স্নায়ুযুদ্ধ। কমিটির সভাপতি হতে তাদের সাধ্যমতে সিনিয়র নেতাদের কাছে তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন। রাত-দিন রাজপথে কর্মীদের নিয়ে চালিয়ে যাচ্ছেন কার্যক্রম। কিন্তু তারপরেও এই তিন নেতার মধ্যে দলের জন্য কে কতটা সক্রিয় ও নিষ্কীয় রয়েছেন এ নিয়ে চলছে নানা হিসাব-নিকাশ। তবে কারা আসছেন ছাত্রলীগের দায়িত্বে এনিয়ে নেতাকর্মীর মধ্যে কানাঘোষা প্রতিনিয়ত চলছে।দলীয় সূত্রে জানা যায়,সাংগঠনিক উপজেলা ছাত্রলীগের ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি আংশিক কমিটি গঠন করা হয় ২০১৫ সালের। সেফায়েত সাগরকে সভাপতি ও আবু হেনা বিশাদকে সাধারন সম্পাদক করে কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটির মেয়াদ ছিল ১ বছর। এ সময়ের মধ্যেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করার দায়িত্ব ছিল এ আংশিক কমিটির। কিন্তু সেফায়েত সাগর সরকারি চাকরিতে যোগদান করলে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয় রাশেদ উদ্দিন রাশেলকে।তারাও পুর্ণাঙ্গ কমিটি করতে ব্যর্থ হওয়া জুলাই মাসের ৩১ তারিখ কমিটি বিলুপ্ত করে দেয় জেলা কমিটি। তবে খুবই শিগগিরই ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন হচ্ছে এমন আভাস দলীয় নেতাকর্মীর কাছে পৌঁছলে, তারা দলীয় পদ-পদবি পেতে লবিং শুরু করেছেন বলে একাধিক ছাত্রলীগ নেতা জানান। জানা গেছে, সাংগঠনিক উপজেলা কমিটিতে পদপ্রত্যাশীরা বিভিন্ন কৌশলে কমিটিতে থাকার চেষ্টা করছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ছাত্রলীগের সাবেক এক নেতা জানান, সাংগঠনিক উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি গঠন হলে শেষ পর্যন্ত সমঝোতার কমিটি হবে। তিনি সম্মেলন কাউন্সিলরের মাধ্যমে নেতৃত্ব বাচাই করারও তাগিদ দেন। তৃণমূল ছাত্রলীগ কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে আলোচনায় বেশ এগিয়ে আছেন কয়েকজন। এর মধ্যে সভাপতি পদে আলোচনায় আছেন দেলোয়ার কামাল, ইমরানুল হক জিকন, আনোয়ারুল আজম খোকন, রাশেদ উদ্দীন রাশেল, তামজিদ ওয়াহিদ লোটাস, বোরহান উদ্দীন মাহমুদ, আবু হেনা বিশাদ। সাধারণ সম্পাদক পদে রয়েছে ইরফানুল করিম, রাহুল পাল, কাজী আবদুল্লাহ, আশফাক উদ্দীন আরফাত। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ছাত্রলীগ নেতা জানান, সাংগঠনিক উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি গঠনে ইতিমধ্যে সিনিয়র নেতারা পছন্দের প্রার্থীদের পদ পাইয়ে দিতে সবাই কমবেশি ব্যস্ত হয়ে পড়ছে। তবে যাদের ছাত্রত্ব নেই কিংবা ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নয় এমন কমিটি গঠন না করার জন্য জেলা ছাত্রলীগ নেতাদের প্রতি তারা আহ্বান জানান এবং বর্তমান যে প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত সে প্রতিষ্ঠান প্রধানের প্রত্যয়ন পত্র নেওয়ারও আহবান জানান। সভাপতি পদপ্রার্থী দাবি করে ছাত্রলীগ নেতা দেলোয়ার কামাল বলেন, কমিটি না হওয়ায় নেতাকর্মীরা ঝিমিয়ে পড়েছেন। কমিটি হলে ছাত্রলীগ প্রাণ ফিরে পাবে। তবে খুব শিগগিরই কমিটি গঠন হবে বলে শোনা যাচ্ছে। আশাকরি জেলা ছাত্রলীগ যোগ্যতা-মেধাবী ছাত্রলীগ নেতাদের দিয়ে কমিটি ঘোষনা করবেন। অপর সভাপতি পদপ্রার্থী ইমরানুল হক জিকন বলেন, দীর্ঘ বছর ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত থেকে দলের জন্য কাজ করতে গিয়ে দুই বার জামায়াত শিবিরের হামলা শিকার হয়েছি। আশা করি ত্যাগ ও শ্রমের মূল্য জেলা কমিটি দিবে। রাশেদ উদ্দীন রাশেদ বলেন, অতীতের চেয়ে বর্তমানে ঈদগাঁও ছাত্রলীগ অনেক শক্তিশালী। ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষনার জন্য জেলা ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দের প্রতি তিনি আহবান জানান।আনোয়ারুল আজম খোকন বলেন,স্কুল জীবন থেকে ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলাম। আশা করি তৃণমূল থেকে উঠে আসা কর্মীদের মূল্যায়ন করবে। বোরহান উদ্দীন মাহমুদ বলেন, দলের দুঃসময়ে ছাত্রলীগের হাল ধরেছিলাম। প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে অগ্রভাগে ছিলাম। আশা করি এবার মূল্যায়িত হব।তানজিদ ওয়াহিদ লোটাস বলেন, আমাদের এলাকাটি ২য় টুঙ্গি পাড়া হিসাবে দীর্ঘ বছর ছাত্রলীগের হয়ে নৌকার পক্ষে কাজ করেছি। আল্লাহ সহায় থাকলে আমি মূল্যায়িত হব।আবু হেনা বিশাদ বলেন,ছাত্রলীগের দুঃসময়ে হাল ধরেছিলাম।গেল কমিটির সাধারণ সম্পাদক হিসাবে প্রতিটি এলাকায় ছাত্রলীগের কর্মী সৃষ্টির মাধ্যমে গনজোয়ার হয়েছে নৌকার। তবে সবশেষে দেলোয়ার কামাল অথবা ইমরানুল হক জিকন সভাপতি, ইরফানুল করিম সাধারণ সম্পাদক হওয়ার সম্ভবনা বেশি বলে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা জানায়। ভিতরে ভিতরে দলীয় গ্রুপিংয়ের বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে একজন ছাত্র নেতা বলেন ছাত্রলীগ একটি বড় সংগঠন। দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে কিছুটা মত পার্থক্য থাকতে পারে। নতুন নেতৃত্ব আসলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত আরও শক্তিশালী হবে বলে তিনি মনে করেন। কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মোর্শেদ হোসাইন তানিম বলেন, সেপ্টেম্বর মাসের শেষের দিকে ঈদগাঁও সাংগঠনিক উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষনা করা হবে।