শাহেদ মিজান, সিবিএন:
সেই কবে ঈদুল ফিতর গেছে! সেই থেকে ছিলো পর্যটক খরা। একারণে কক্সবাজারের সব পর্যটন ব্যবসায় গেছে বিশাল মন্দা। এতে লোকসান গুণেছে সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। বর্ষা মৌসুম চলায় এই মন্দা। তবে ঈদুল আযহার ছুটিতে পর্যটক আসলে ব্যাপক লোকসানে কিছুটা সম্ভল পাওয়া যাবে। ঈদুল আযহার টানা পাঁচদিনের ছুটিতে প্রত্যাশিত পর্যটক আসবে আশায় পথ চেয়ে আছেন সব পর্যটন ব্যবসায়ীরা।

জানা গেছে, সপ্তাহিকসহ ছুটি মিলে এবারও ঈদে টানা ৫ দিনের ছুটি। সরকারি চাকুরেদের পরিবারে এ টানা ছুটি ঈদের আনন্দের মাত্রা বাড়িয়েছে। টানা এই ছুটিকে কাজে লাগাতে অনেকেই পরিবার পরিজন নিয়ে আনন্দ ভ্রমণ করবে বলে আশা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে অনেক ভ্রমণ পিপাসু নিরাপদ অবকাশ যাপনে কক্সবাজারে বেড়াতে আসতে বুকিং দিয়েছেন হোটেল-মোটেল-কটেজ কক্ষ। এতে পর্যটন ব্যবসা চাঙ্গা হওয়ার ইঙ্গিত পাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। কিছু বুকিং ২১ আগস্ট থেকে শুরু হলেও অধিকাংশই ২৩ আগস্ট থেকে ২৫ আগস্টের জন্য বুকিং দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন হোটেল কর্তৃপক্ষ। হোটেল-মোটেলের পাশপাশি অন্যান্য পর্যটন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতেও উদ্দীপনা দেখা গেছে। পর্যটক বরণে সাজানো হয়েছে সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।

কক্সবাজারের তারকা হোটেল ওশান প্যারাডাইসের বিপণন বিভাগের ইনচার্জ ইমতিয়াজ সোমেল বলেন, শহরের যান্ত্রিক জীবনে বন্দি মানুষগুলো সুযোগ পেলেই ভ্রমণে বের হন। কোরবানির ঈদেও টানা ছুটির সুযোগ আসায় অনেকে ইতোমধ্যে হোটেলের ৮০-৯০ শতাংশ রুম আগাম বুকিং দিয়ে রেখেছেন। ঈদের পরেরদিন থেকে সপ্তাহিক ছুটির শেষ দিন পর্যন্ত সৈতকপারের সকল হোটেল পূর্ণ বুকিং থাকবে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আশা করা যায় এ ছুটি দিয়েই এ বছরের পর্যটন মৌসুমের যাত্রা হবে।

হোটেল মালিকদের মতে, সৈকত শহরে সব মিলে হোটেল মোটেল রয়েছে চার শতাধিক। এসব হোটেলে দৈনিক প্রায় এক লাখ পর্যটকের রাত যাপনের ব্যবস্থা রয়েছে। কিছু কিছু হোটেল আগে ভাগে বুকিং দিলেও একটু বাড়তি সুবিধার আশায় অনেকে এখন বুকিং নিয়ে কথা বলছেন না। বাকি হোটেলগুলো বুকিং না হলেও পর্যটককে আসলেও সব হোটেল পর্যটকে ভরে উঠবে।

কক্সবাজার সৈকতের ব্যবসায়ী মাহমুদুল করিম বলেন, ঈদুল ফিতরের এক সপ্তাহ পর থেকে আর পর্যটক আসেনি। সেই থেকে ব্যবসায় অনেক মন্দা গেছে। সে কারণে দোকানভাড়া, কর্মচারীর বেতন দিতে হয়েছে বাড়ি থেকে এনে ও ধার-কর্জ করে। ঈদুল আযহায় টানা পাঁচদিন ছুটি থাকায় আশানুরূপ পর্যটক আসবে আশা করছি। আশা করছি এরপর পর্যটন মৌসুম শুরুর ক্ষণ ঘনিয়ে আসায় পর্যটক আসা অব্যাহত থাকবে।

ট্যুর অপারেটস এসোসিয়েশন অব কক্সবাজার (টুয়াক) এর সাধারণ সম্পাদক আসাফ উদ দৌলা আশেক বলেন, ঈদুল আযহার টানা পাঁচদিনের ছুটিতে বিপুল সংখ্য পর্যটক আসবে আমরা আশা করছি। সে অনুরূপ সাড়াও পাচ্ছি। অনেক পর্যটক ইতিমধ্যে হোটেল বুকিং দিয়ে রেখেছেন। এসব পর্যটকেরা জেলা সদরের বাইরেও হিমছড়ি, দরিয়ানগর, ইনানী, মহেশখালী, বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কসহ জেলার সব পর্যটন কেন্দ্রগুলোকে ঘুরবেন। সে অনুসারে এসব পর্যটন কেন্দ্রগুলো নতুনভাবে সাজানো হচ্ছে।

হোটেল ও গেস্ট হাউজ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম বলেন, আবহাওয়া যাই থাক পর্যটন ব্যবসা চাঙ্গা হবে এমনটি আমার বিশ্বাস। সে অনুসারে আমরা প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি।

ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার অঞ্চলের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. জিল্লুর রহমান জানান, আগত পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত ও অপরাধ দমনে জেলা পুলিশের সহযোগিতায় কয়েকটি ভাগে সাজানো হচ্ছে ট্যুরিস্ট পুলিশকে। পাশাাপাশি সৈকতে বিপদাপন্নদের উদ্ধারকারী লাইফগার্ডদের প্রশিক্ষণ আরও জোরদার করা হয়েছে। এছাড়াও টেকনাফ ও ইনানীসহ সব পর্যটন স্পটে ট্যুরিস্ট পুলিশ দায়িত্ব পালন করবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন জানান, পর্যটন এলাকা হিসেবে পর্যটক নিশ্চিত করতে প্রশাসন সদা প্রস্তুত। ঈদ উপলক্ষ্যে দূর-দূরান্ত ছাড়াও স্থানীয় নানা বয়সের পর্যটকের ভিড় জমবে বালিয়াড়িতে। ভ্রমণ পিপাসুদের বিচরণ নির্বিঘ্ন করতে জেলা প্রশাসনের নির্বাহি ম্যাজিস্ট্রেটদের একাধিক টিম টহলে থাকবে। টহল দিবে পুলিশ-র‌্যাবসহ সাদা পোশাকের শৃংখলাবাহিনীও।