নিজস্ব প্রতিবেদক :
দীর্ঘ দু’মাস কারাভোগের পর কারামুক্ত হয়েছেন কক্সবাজার সদরের খুরুশ্কুল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ জসিম উদ্দীন। মুক্তি পেয়ে বৃহস্পতিবার (১৬ আগস্ট ) খুরুশ্কুলে যান। হাজার হাজার নারী-পুরুষ তাকে জেলগেইট থেকে বরণ করে নিয়ে গাড়ি বহরে তাকে খুরুশ্কুলে নিয়ে যাওয়া হয়। শোকের মাস হওয়ায় শতাধিক গাড়ির বহরে অংশ নেয়া সবাই বুকে কালো ব্যাজ ধারণ করেন। একই কারণে চেয়ারম্যান কোনো ধরণের ফুলের মালা গ্রহণ করেননি এবং সংবর্ধণাও নেননি। ইউনিয়ন পরিষদের পৌঁছে জমায়েত হওয়া বিপুল মানুষের উদ্দেশ্যে শুধু অনানুষ্ঠানিক সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন।

বক্তব্যে চেয়ারম্যান জসিম উদ্দীন খরুশ্কুলের মানুষের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আফসার কামাল প্রকাশ কালাপুতু হত্যার সাথে আমার কোনো ধরণের সম্পৃক্ততা ছিলো না। বরং তাকে বাঁচানোর জন্য আমি আপ্রাণ চেষ্টা করেছি। মূলত খুরুশ্কুলের ৯০ হাজার মানুষের দেয়া দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আমি বিশাল একটা ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছি। বিনা দোষে আমি দুটি মাস কারাগারের অন্ধ প্রকোষ্টে পার করেছি। তারপরও আমি কাউকে দোষ দিবো না। হয়তো আল্লাহ আমাকে পরীক্ষা করেছেন। এসময় তিনি আফসার কামাল প্রকাশ কালাপুতু হত্যার সাথে জড়িত নয় বলে পবিত্র কোরআন ছুঁয়ে শপথ করেন।’

সেদিনের ঘটনা স্মরণ করে তিনি আরো বলেন, ‘ওইদিন ছিলো ঈদুল ফিতরের পরদিন। আমি বাড়িতে বসে সাধারণ মানুষের সাথে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করছিলাম। সেই সময় খবর পাই ঈভটিজিংয়ের বিষয় কেন্দ্র করে তেতৈয়ায় বড় বড় ধরণের সংঘর্ষ হয়। খবর পেয়ে আমি তাৎক্ষণিক স্থানীয় মেম্বারকে ফোন দিই। কিন্তু তিনি ফোন ধরেননি। পরে নিহতের চাচাতো ভাই দিদারকে ফোন দিই। তখন দিদার আমাকে জানান- পরিস্থিতি খারাপের দিকে। আমি না গেলে আরো বড় হতে পারে। তখন তড়িঘড়ি করে আমি লুঙ্গি পরা অবস্থায় নিজে গাড়ি চালিয়ে ঘটনাস্থলে যাই। গিয়ে দেখি দু’পক্ষ মারামারি অবস্থায় এবং আফসার কামাল প্রকাশ কালাপুতু মুমূর্ষু অবস্থায় পড়ে আছে। তখন আমি সেখানে সামনে পাওয়া নারিকেল গাছের একটা ডাল নিয়ে দু’পক্ষকে নিবৃত্ত করি এবং দিদারকে সাথে নিয়ে দ্রুত আমার গাড়িতে করে আফসার কামাল প্রকাশ কালাপুতুকে হাসপাতালে নিয়ে যাই। পথিমধ্যে আমাকে অনেকে ফোন করে বলেন, ‘চেয়ারম্যান আপনি ষড়যন্ত্রের শিকার হতে যাচ্ছেন। আপনি পালান। আমি তাদেরকে বলেছিলাম- আমার ফাঁসি হলেও তাকে ছেড়ে যাবো না। আমি আফসার কামাল প্রকাশ কালাপুতুকে মারতাম তাহলে আমি অবশ্যই ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যেতাম।’

চেয়ারম্যান জসিম আরো বলেন, ‘আমার উপর জুলুম করা হয়েছে। মিথ্যা অভিযোগে আমাকে দু’মাস কারাবন্দী রাখা হয়েছে। কারাগারে বসে আমি আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করেছি- হে আল্লাহ যারা আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছে তুমি তাদেরকে হেদায়েত দান করো। আমি তাদের জন্য অভিশাপ প্রার্থণা করিনি। আমি মনে করছি আল্লাহ আমাকে পরীক্ষা করেছে। পবিত্র কোরআন ছুঁয়ে শপথ করছি আমি নির্দোষ। তারপরও কারো প্রতি আমার প্রতিশোধের স্পৃহা নেই। আমি বিচার আল্লাহর কাছে দিয়েছি। আল্লাহ সেই সব ষড়যন্ত্রকারীদের বিচার করবেন।’

তিনি বলেন, ‘মিথ্যা মামলা, কারাগাভোগসহ হাজারো ষড়যন্ত্র করলেও আমাকে থামাতে পারবে না। আল্লাহর রহমত এবং জনগণের দোয়া নিয়ে আমি সামনের দিকে এগিয়ে যাবো। কেউ আমাকে থামাতে পারবে না। আপনারা খুরুশ্কুলের ৯০ হাজার মানুষ আমার সাথে আছেন এটাই আমার সাহস। আপনারা দল-বল নির্বিশেষে গরমের মধ্যে আমাকে বরণ করতে এসেছেন এই জন্য আমি আপনাদের কাছে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। আফসার কামাল প্রকাশ কালাপুতু আমার অত্যন্ত কাছের আপনজন ছিলো। তাকে কোনো জ্বিন এসে মারেনি। তাকে মানুষই মেরেছে। যারা মেরেছে আমিও তাদের বিচার চাই। এই জমিনে আমি তাদের বিচার দেখতে চাই।’

এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন- কক্সবাজার সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আবদুল হক জিকু, জেলা ছাত্রলীগর সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) মোরশেদ হোসাইন তানিম, চৌফলদন্ডী ইউপি চেয়ারম্যান ওয়াজ করিম বাবুল, পিএমখালী আওয়ামী লীগের সভাপতি সিরাজুল মোস্তফা আলাল, খুরুশ্কুল আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হাসান সিকদার, সাবেক জেলা ছাত্রলীগ নেতা মোনাফ সিকদার, খুরুশ্কুল আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুু শুক্কুর, সহ-সভাপতি শাকের উল্লাহ কোম্পানি, খুরুশ্কুল যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক বোরহান উদ্দীন চৌধুরী এবং ইউনিয়ন পরিষদের সকল সদস্যবৃন্দ। এছাড়াও আও্য়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ ও অঙ্গ-সংগঠনের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।