বিশেষ প্রতিবেদক:

কক্সবাজার শহরে ললনার হাট খ্যাত লালদীঘি পাড়স্থ আহসান বোর্ডিং ও নজরুল বোডিংয়ে ভ্রাম্যমান আদালত অভিযান চালিয়ে ৭ পতিতা ও ৫ খদ্দেরসহ ১২ জনকে আটক করেছে। এসময় উদ্ধার করা হয় ইয়াবা ট্যাবলেট, চোলাই মদ, ডাকাতি মালামাল ও ধারালো কিরিচ। তবে এ সময় হোটেল সংশ্লিষ্টরা পালিয়ে যাওয়ায় কাউকে আটক করতে পারেনি। বোডিং দুটিকে সীলগালা করে দেয়া হয়। ১৫ আগষ্ট বুধবার দুপুরে প্রায় ২ ঘন্টা ব্যাপী এ অভিযান চালানো হয়।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেনের নির্দেশে কক্সবাজার সদও ভুমি অফিসের সহকারী কমমিশনার (ভুমি) ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মো. নাজিম উদ্দিনের নেতৃত্বে এ অভিযান চলে। এসময় কক্সবাজার সদর মডেল থানার এসআই আনছার, এসআই জামাল ও এএসআই ফারুক সহ সঙ্গীয় ফোর্স অভিযানে অংশ নেন। আটককৃত পতিতা ও খদ্দরদের ভ্রাম্যমান আদালতে মাধ্যমে সর্বোচ্চ ১৫ ও সর্বন্মিন ৩ মাস করে বিনাশ্রমে কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে। কারাদন্ড প্রাপ্তদেরকে বিকালেই কক্সবাজার জেলা কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।

আটককৃত খদ্দরা হচ্ছে, চট্টগ্রামের সাতকানিয়া এলাকা মৃত আবদুল আজিমের ছেলে মো. আব্বাস উদ্দিনের ছেলে ও হোটেল আল গণির চা কারীগর মো. আব্বাস উদ্দিন (২৭), কক্সবাজার সদরের পোকখালী গোমাতলি এলাকার আবদুল কাদিরের ছেলে ও আহসান বোডিং এর ঝাড়–দার আশিকুল ইসলাম (২১), সদরের ইসলামাবাদ খোদাবাড়ি এলাকার আজিজুল হকের ছেলে মো. আবদুল্লাহ (২৭), শহরের পৌরসভা ১নং ওয়ার্ড সমিতি পাড়ার বদি আলমের ছেলে মামুন (১৮) মহেশখালী আদিনাথ মন্দির নিকুঞ্জ কুমার দের ছেলে কাজল কুমার দে (৩৭)। মাদক ও অশ্লীলতার দায়ে এদের প্রত্যেককে ১ বছর ৩ মাস করে বিনাশ্রমে কারাদন্ড দেয়া হয়।

আটক পতিতারা হলো-টেকনাফ হ্নীলা জাদিমুরা এলাকার মৃত মোস্তাফিজের মেয়ে রিয়া মনি (১৮), বরিশাল পটোয়াখালী লোহামিয়া গ্রামের হানিফ হাওলাদারের মেয়ে আসমা বেগম কাকলী (৩৭), টেকনাফ হ্নীলা জাদিমুরার মো. জলিলের মেয়ে মোছাম্মৎ জান্নাত সোনিয়া (১৫), চট্টগ্রামে পুরাতন চান্দগাঁও পাড়াইন্না গুদা এলাকার নুরুল আলমের মেয়ে সাথী আকতার (৩০), চট্টগ্রামে পুরাতন চান্দগাঁও, বহদ্দারহাট এলাকার জাফর আলমের মেয়ে রিয়া আকতার (১৯), কক্সবাজার শহরের টেকপাড়া মাষ্টার কলোনীর জামাল উদ্দিনের মেয়ে লায়লা আকতার (২৭)। এদেও প্রত্যেককে ৩ মাস করে কারাদন্ড দেয়া হয়েছে। এছাড়া মহেশখালী পৌরসভার পুটিবিলা গ্রামের ফরিদ আলমের মেয়ে শাহীনা আকতার (২৫) কে ১ বছর ৩ মাস কারাদন্ড দেওয়া হয়। তার কাছে ইয়াবা পাওয়া যায়।

আহসান বোডিং ও নজরুল বোডিংয়ে অভিযান চলাকালে উদ্ধারকৃত মালামালের মধ্যে রয়েছে, ইয়াবা ট্যাবলেট, চোলাই মদ, ধারালো কিরিচ, ১টি ল্যাপটপ, তিনটি এলইডি মনিটর, লাগেজসহ বিভিন্ন ডাকাতি মালামাল।

কক্সবাজার সদর ভুমি অফিসের সহকারী কমিশনার (ভুমি) ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট নাজিম উদ্দিনের ভ্রাম্যমান আদালতে আটককৃত দেহজীবিরা স্বীকার করেছেন, এইসব হোটেল গুলোতে নারী সাপ্লাইয়ার (দালাল) হচ্ছে রুবেল নাম এক যুবক। তার পুরো নাম জমির হোসেন রুবেল, বাড়ি সদরের চৌফলদন্ডি হলেও থাকে শহরে। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে কন্ট্রাক করেই নারীদেরকে শহরে এনে দীর্ঘদিন ধরে আবাসিক হোটেলে সরবরাহ দেয়াই তার কাজ বলে জানান আটককৃতরা।

আটককৃত নারীরা আরো জানান, শুধু খদ্দরদের খুশি করে যা বখশিস পাওয়া যায় তাহাই তাদের প্রাপ্য। প্রতিজন খদ্দর থেকে শুধু বখশিস হিসেবে পান ৫০ ও ১’শ টাকা। আর হোটেল মালিক ও দালালরা খদ্দরের কাছ থেকে ৫’শ টাকা থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত নেন। কিন্তু এই টাকার কোন ভাগ এসব নারীদের দেওয়া হয় না। দেহ বিক্রিতে জড়িত এসব নারীদের মধ্যে কেউ অভাবে তাড়নায়, কেউ স্বামী পরিত্যক্ত হয়ে আবার কেউ কেউ সখের বশে এই পেশায় এসেছে বলে জানায় তারা।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, পর্যটন শহর কক্সবাজারে কোন রকম নিয়ম-নীতি না মেনেই অবৈধ ভাবে চলছে শতাধিক আবাসিক বোডিং। বৈধতা না থকলেও এ সকল বোডিং (আবাসিক হোটেল) মালিকরা দীর্ঘদিন ধরে জমজমাট ভাবে তাদের বোডিং ব্যবসা চালিয়ে আসছে। শহরের প্রায় প্রত্যেকটি আবাসিক বোডিং বা ছোট ছোট হোটেল গুলোতে দেহ ব্যবসা রমরমা ভাবে চলছে।

দেহ ব্যবসার পাশাপাশি চলছে মাদক ব্যবসা ও সেবন এবং জমজমাট জুয়ার আসরএই এলাকায় আবাসিক বোডিং গুলোতে মালিকের পরিচালনায় দেহ ব্যবসা ও জুয়ার আসর চালাচ্ছে। সাইনবোড বিভিন্ন নামের আবাসিক হোটেলের নাম থাকলেও ভিতরে সবগুলোর একই কাজ। প্রতিটি জুয়ার আসরে প্রতিদিন লেনদেন হচ্ছে অর্ধকোটি টাকা। এর পেছনে কাজ করছে শহরের চিহ্নিত একাধিক প্রভাবশালী জুয়াড়িচক্র।

মাদক বিক্রয়ের বিষয়ে দু’পক্ষের আলোচনা, মাদক সেবন, নারী ব্যবসা, এমনটি অনেক নামদামি ব্যক্তিদের আন্ডা আর রাতভর চলে জুয়ার আসর। সব মিলিয়ে উক্ত এলাকার বোডিং গুলো এখন অপরাধীদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। এদের কাছ থেকে কমিশন নিচ্ছে অসাধু পুলিশ সদস্যরা।

বঙ্গবন্ধু রোড, এন্ডারসন রোডস্থ আবাসিক বোডিংগুলোতে প্রতিনিয়ত জুয়ার আসর, পতিতাবৃত্তি ও মাদক সেবীদের নিরাপদ আস্তানায় পরিণত হয়েছে। পতিতা, খদ্দের ও জুড়িদের উৎপাতে ব্যবসায়ীরা অতিষ্ট হয়ে পড়েছে।

এমনকি থানার অতি নিকটে কয়েকটি আবাসিক বোডিংয়ে ও শহরের প্রাণ কেন্দ্র লালদীঘির পাড়ের চিহ্নিত হোটেল, শহরতলির লাইট হাউসপাড়া, সহ আশপাশের বিভিন্ন কটেজে প্রকাশ্যে চলছে পতিতাবৃত্তি ও জমজমাট জুয়ার আসর। দীর্ঘদিন ধরে পৌর শহরের আবাসিক হোটেলে একচ্ছত্রভাবে চলে আসছে নানা অপরাধ কর্মকাণ্ড। এসব হোটেলে স্থায়ীভাবে পতিতা রেখে যৌনপল্লীর রুপ দিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।

উল্লেখিত বোডিং গুলোতে প্রকাশ্যে দিন-রাত আসা যাওয়া করছে খদ্দেরও পতিতা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে আবাসিক হোটেলে একচ্ছত্রভাবে চলে আসছে নানা অপরাধ কর্মকাণ্ড। চিহ্নিত এসব হোটেলে স্থায়ীভাবে পতিতা রেখে যৌনপল্লীতে রূপান্তর করেছে সংশ্লিষ্টরা। সিন্ডিকেট ও দালালের মাধ্যমে অসাধু হোটেল মালিকরা দেদারসে পতিতা ব্যবসা চালিয়ে এলেও থানা পুলিশ নীরবতা পালন করছে।

এ সকল আবাসিক বোডিংয়ের সামনে দেহজীবিরা নানা অঙ্গভঙ্গি করায় তরুন-তরুনী,যুবক-যুবতীসহ নারী-পুরুষ পথচারী বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে যান। শহর ও শহরতলির প্রায় দুই শতাধিক আবাসিক হোটেলে অসামাজিক কার্যকলাপ চলছে। এসব হোটেল ও কটেজগুলো যেন মিনি যৌনপল্লীতে পরিণত হয়েছে। এরকম গোপন অভিসার নিয়ে উদ্বিগ্ন অভিভাবক ও সচেতন মহল। দীর্ঘ সময় ব্যাপী ইতিহাস ঐতিহ্যের এই কক্সবাজারে দেহ ব্যবসা চালিয়ে আসলেও সংশ্লিষ্ট প্রশাসন পালন করছে রহস্যজনক নীরবতা। মাঝে মধ্যে অভিযান চললেও তা লোক দেখানো বলে মনে করেন সমাজ সচেতন ব্যক্তিরা।

কয়েকজন পতিতার দালাল জানায়, পুলিশের সাথে হোটেল মালিকদের বিভিন্ন হিসেব রয়েছে ! তাই পুলিশ তাদের বিষয়ে হস্তক্ষেপ বা অভিযান পরিচালনা করেন না। পুলিশের মাসিক হিসেবের অর্থ শহর পুলিশ ফাঁড়ির টিএসআই ও এটিএসআই এবং কথিত সিভিল ক্যাশিয়ারের মাধ্যম হয়ে পদস্থদের কাছে পৌছে দেয়।

এসব জুয়ার বোডে পাতানো ফাঁদে পড়ে সর্বশান্ত হয়ে বাড়ী ফিরছে শহরের অনেক নামি-দামি ব্যবসায়ী ও ধনাঢ্য ব্যক্তিরা। আর এ জুয়ার আসর থেকে স্বামীকে ফিরিয়ে আনতে গিয়ে অনেক স্ত্রীর কপালে জুটছে তালাক। পাশাপাশি অনেক জুয়াড়ির সুখের সংসার ভেঙ্গেছে। জুয়া ও পতিতা ব্যবসা বন্ধের জন্য এলাকার সচেতন বৈধ ব্যবসায়ীরা উর্ধবতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।