সৈয়দ শাকিল :
ঈদুল আজহা সামনে রেখে নাফ নদী পেরিয়ে মিয়ানমার থেকে টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে বৈধ-অবৈধ পন্থায় গবাদিপশু আমদানিতে স্থানীয় খামারিদের মধ্যে চরম হতাশা দেখা দিয়েছে। দেশি পশুর দাম কমে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।
টেকনাফের শাহপরীরদ্বীপ করিডোরে আসছে বিপুল সংখ্যক গবাদিপশু। কোন ধরনের স্বাস্থ্য পরীক্ষা ছাড়াই কক্সবাজারে প্রবেশ করছে মিয়ানমারের পশু। প্রতিদিন শত শত রোগাক্রান্ত পশু চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। এ কারণে হুমকির মুখে রয়েছে দেশের জনস্বাস্থ্য ও প্রাণিসম্পদ।
সরেজমিন দেখা গেছে, টেকনাফের করিডোর দিয়ে মিয়ানমার থেকে ট্রলারযোগে প্রতিদিন জেলায় প্রবেশ করছে মিয়ানমারের পশু। নিয়ম রয়েছে এসব পশু দেশে প্রবেশের আগেই স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার। কিন্তু, প্রবেশকালে টেকনাফ করিডোরে তা হচ্ছে না। নেই কোন পশু চিকিৎসক। যে যার মতো করে কোরবানির পশু নিয়ে চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন এলাকায়। সীমান্ত বাণিজ্যের আওতায় করিডোর দিয়ে পশু আমদানি হলেও, ঢুকছে পরীক্ষা নীরিক্ষা ছাড়াই। এটা অতন্ত দুশ্চিন্তার বিষয়।
এসব রোগাক্রান্ত পশু ছড়িয়ে যাচ্ছে জেলা সদর, রামু, টেকনাফ, উখিয়া, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, পেকুয়া, চকরিয়া সহ সকল উপজেলার বিভিন্ন গ্রামগঞ্জে।
সংশ্লিস্ট সূত্র মতে, মিয়ানমার থেকে চোরাইপথে পশু আসা রোধে ২০০৩ সালে ২৫ মে শাহপরীর দ্বীপে করিডর চালু হয়। তখন থেকে প্রতিটি গবাদিপশুর বিপরীতে সরকারি রাজস্ব আদায় হচ্ছে।
টেকনাফ স্থল বন্দর দিয়ে মিয়ানমার থেকে আমদানি হয়ে আসা ৪০ পণ্যের মধ্যে ২টি পণ্যের গুনগতমান নির্ণয়ের উদ্দেশ্যে ২টি প্রতিষ্ঠান পরীক্ষা নীরিক্ষার মাধ্যমে ছাড় দিচ্ছে। করিডোর দিয়ে আসা গবাদিপশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার কোন ধরণের ব্যবস্থা নেই।
ফলে, মিয়ানমার থেকে রোগাক্রান্ত গবাদিপশু অনায়সে আমদানি হচ্ছে। এসব আমদানিকৃত গবাদিপশুর মাংস খেয়ে অনেকেই রোগাক্রান্ত হবার আশঙ্কা রয়েছে।

টেকনাফ উপজেলা পশু আমদানিকারক সমিতির সভাপতি মো. আব্দুল্লাহ মনির বলেন, মিয়ানমার থেকে যে সকল পশু আসছে সেগুলো ডাক্তারি পরিক্ষার জন্য আমরা টেকনাফ পশু কর্মকর্তাকে ব্যবস্থা নিতে আবেদন করেছি। আশাকরি শিগগিরি ব্যবস্থা নিবেন।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘মিয়ানমার থেকে পশু আমদানি হলেও করিডোরে কোনও ব্যাংক ও কাস্টম অফিস নেই। এছাড়া নেই পশু রাখার সুব্যবস্থা। তবুও কোরবানি পশু চাহিদা পূরনে মিয়ানমার থেকে আরও লক্ষাধিক পশু আমদানির টার্গেট রয়েছে পশু আমদানিকারিদের।
চট্টগ্রামের পাইকারি গরু ব্যবসায়ীরাও ভিড় করছেন করিডরে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের গবাদিপশু ব্যবসায়ীরা টেকনাফে অবস্থান করছে।
কথা হয় চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী জালালের সঙ্গে। তিনি ৩দিন অবস্থান করে করিডর থেকে গরু কিনেছেন। এই বছর শাহপরীরদ্বীপ করিডোরে গরুর দাম চড়া। গত বছর যে গরু ৫০ হাজার টাকা ছিল এই বছর সে গরুর দাম ৮০ হাজার টাকার বেশি বলে জানান।
স্থানীয় গরু ব্যবসায়ীরা জানান, কোরবানি উপলক্ষে পশু আমদানি ক্রমাগত বাড়ছে। যেসব পশু মিয়ানমার থেকে আনা হচ্ছে সেগুলো ব্যবসায়ীরা কিনে এখন থেকে চট্টগ্রাম, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠিয়ে দিচ্ছে।
জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ডাঃ নজরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, করিডোর মিয়ানমার থেকে প্রবেশকৃত পশুর স্বাস্থ্য পরিক্ষা জন্য টেকনাফের দমদমিয়ায় একটি মিনি পশু হাসপাতাল রয়েছে। তবে, সে হাসপাতালে জনবল নিয়োগ এখনো দেয়া হয়নি বলে কার্যক্রম শুরু হয়নি।
টেকনাফ উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের নুরুল আলম বলেন, মিয়ানমার থেকে আসা পশুগুলোর ডাক্তারি পরিক্ষা-নিরিক্ষা করা হচ্ছেনা। তবে, উপজেলার বাজারে যে সকল পশু উঠছে, তা সঠিকভাবে স্বাস্থ্য পরিক্ষা করছি। তাছাড়া কোন ব্যাক্তি যে কোন পশুর ব্যপারে পরামর্শ বা সহযোগিতা চাইলে, আমার সহযোগিতা দিচ্ছি।
টেকনাফ শুল্ক স্টেশন কর্মকর্তা জানান, কোরবানির ঈদের বাকি মাত্র ৭দিন। পশু আমদানি রাজস্ব আদায়ে ব্যাপক ভূমিকা রাখে। দেশে পশুর চাহিদা পুরণে আমদানি অব্যাহত রয়েছে।
টেকনাফ মডেল থানার ওসি রণজিত কুমার বড়ুয়া বলেন, করিডোরে গরু ব্যবসায়ীদের জন্য প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা দেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি গরু আসার সময় ট্রলারে যাতে অস্ত্র ও মাদক আসতে না পারে পুলিশ সতর্ক রয়েছে।
টেকনাফ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক বলেন, পশুবোঝাই ট্রলার বঙ্গোপসাগর ও নাফ নদী অতিক্রম করে যাতে নিরাপদে করিডরে আসতে পারে সে জন্য বিজিবি সহায়তা দিচ্ছে।
স্থল বন্দর নিয়ন্ত্রনাধীন করিডোর দিয়ে আসা গবাদিপশু হুন্ডি ও ইয়াবার টাকা দিয়ে আমদানি হচ্ছে জনশ্রুতি রয়েছে। অভিযোগে উঠেছে, গবাধী পশুর আড়ালে ইয়াবা ব্যবসা চলছে নীরবে। আমদানীকৃত পশুর ডাক্তারি পরিক্ষার প্রতি গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন অভিমত সচেতন মহলের।