নুরুল হক বুলবুল
আমাদের দাম্পত্যের সবে আটমাস পরে
সযত্নে আমায় পৌঁছে দিয়ে বাপের ঘরে
রাত শেষে সকালে তোমার যাবার বেলায়
পবিত্র নয়নে বিদায় দিয়েছি বকুল তলায় ।।
সেদিন রাত খুব শান্ত, কোমল ও স্নিগ্ধ ছিলো
বাইরে হালকা শীতল হাওয়া ও চাঁদের ক্ষীণ আলো
আমি রঙিন নকশীকাঁথা জড়িয়ে রঙিন স্বপ্ন বুনছি
সন্তান-সন্ততি, সুখের সংসার কতো কী ভাবছি
আকস্মাৎ পার্শ্ব গ্রামে ডজন ডজন বুলেটের শব্দে
নিমিষেই আমার বুনমান স্বপ্নে রঙিন স্বপ্নে বিঁধে
ঘরের চালে ছুটন্ত দু’টি টিকটিকি পড়ে যায় ভয়ে
বুঝিনি সে রাতেই আমরণ বাঁধা আসবে প্রণয়ে ।।
পরদিন সশস্ত্র হায়েনারা গ্রামে আসে দলে দলে
রুদ্ধশ্বাসে প্রাণে বাঁচার তাগিদে ভিটে ছেড়েছি সকলে
হায়েনার দল আগুন লাগালো গ্রামের ঘরে ঘরে
হত্যার নিষিদ্ধ উৎসবে মেতে উঠে যুবা-বৃদ্ধা ধরে
দুর্গম পথ পাড়ি ও হায়েনার চোখ ফাঁকি দিয়ে
শতশত লোক পৌঁছলুম নিরাপদ এক আলয়ে ।।
রাক্ষসের আধিপত্য হতে মুক্তির যুদ্ধ যাচ্ছে এগিয়ে
ততোদিনে তোমার পুত্র এলো আমার কোল রাঙিয়ে
আমি একাত্তরে বাহাত্তর চিঠি দিয়েছি ডাকে
সংবাদ পাও নি; দেখনি আপনার পুত্রকে চোখে
কতো ভয়ার্ত ও নিস্পৃহ কেটেছে এক একটি রজনী
বেদনা ভরা হৃদয় নিয়ে ফেলেছি চোখের পানি
স্বাধীন হলে ডিসেম্বরে গ্রামে ফিরে দেখি
ধ্বংসস্তূপে ছেয়ে আছে নেই কিছু বাকি ।।
আজ কতোটা বছর গত হলো স্বাধীন বাংলায়
তবুও তোমার প্রত্যাবর্তনের প্রহর গুণি সকাল-সন্ধ্যায়
যুদ্ধের বিষাক্ত ছোবলে শেষ আমাদের প্রণয়ের
ছেলের মাঝে তোমায় দেখে স্বাদ নিচ্ছি বিজয়ের ।।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।