ডেস্ক নিউজ:
সূর্য মাথার উপরে এলেই উত্তাপ বাড়ে। প্রখর হয় রোদের তেজ। আলোর দিশায় মুছে যায় জরা। তিনিও ঠিক ভরদুপুরের আলোর দিশারী ছিলেন। আলোর দিশায় আলো ফলাতেন। সাংবাদিকতার গুরু তিনি। গুরুজনেরও গুরু তিনি।

এমন মহাজনের বিদায় কাকে না কাঁদায়! সাংবাদিক গোলাম সারওয়ার আর নেই! সাংবাদিকদের শিক্ষক তিনি, অভিভাবক তিনি, স্বজন তিনি। তার প্রয়াণে কাঁদছে গণমাধ্যম, কাঁদছেন সাংবাদিকরা।

গোলাম সারওয়ারের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই শোকের ছায়া নেমে আসে সাংবাদিকদের মাঝে। তার এই মৃত্যুতে গণমাধ্যমের অপূরণীয় ক্ষতি বলে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন সাংবাদিক নেতারা।

দৈনিক যুগান্তরের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সাইফুল আলম জাগো নিউজের কাছে ব্যক্ত করেন শোক প্রতিক্রিয়া। তিনি বলেন, সাংবাদিক গোলাম সারওয়ারের মৃত্যুতে গণমাধ্যম জগতের অপূরণীয় ক্ষতি হলো। এই ক্ষতি কোনোভাবেই পূরণ হবার নয়।

গোলাম সারওয়ারকে আপদমস্তক একজন সাংবাদিক উল্লেখ করে তিনি বলেন, গোলাম সারওয়ার আমাদের শিক্ষক ছিলেন, অভিভাবক ছিলেন। তার সঙ্গ আমাদেরকে স্বস্তি দিতো, সাহস যোগাতো। আমরা তার দেখানো পথেই আলো দেখতে পেতাম।

সাইফুল আলম বলেন, গোলাম সারওয়ার ছিলেন মুক্তমনা, স্বাধীনচেতা। তিনি দেশ-বিদেশের গণমাধ্যমের উত্থান-পতনের সাক্ষী। তিনি গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য নির্মোহভাবে কাজ করেছেন। বাকস্বাধীনতার জন্য তিনি আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। তার বিদায় মানে মুক্ত গণমাধ্যমের জন্য একটি বড় ধাক্কা।

বন্ধু বিচ্ছেদের যাতনায় শোকাহত সাংবাদিক, কলামিস্ট আবেদ খান। তিনি বলেন, গোলাম সারওয়ার আমার বড় ভাইয়ের মতো বটে, তবে তিনি বন্ধু বলেই আগলে রাখতেন। এমন একটি মৃত্যু সংবাদের জন্য কোনোভাবেই প্রস্তুত ছিলাম না। তবুও শুনতে হলো।

আবেদ খান বলেন, সারওয়ার ভাইয়ের সঙ্গে কাজ করেছি বহুদিন। এমন বন্ধুজন মেলাভার। তিনি অতিঘনিষ্ট বন্ধু ছিলেন আমার। তাকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে কোনোদিন আপস করতে দেখিনি। তার ভালোবাসায় প্রতিমুহূর্তে শ্রদ্ধা, সম্মান জাগ্রত করতো। তিনি আজ আমাদের মাঝে নেই, ভাবতেই পাজর জড়িয়ে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, পিতৃতুল্য একজন অভিভাবক হারালাম। সারওয়ার ভাইয়ের মৃত্যু সংবাদে স্তম্ভিত হয়েছি। সাংবাদিক জীবনেই নয়, তিনি ছিলেন আমার ব্যক্তিজীবনেও গুরুজন। আশীর্বাদ নিয়েই আমাদের পথচলা।

গোলাম সারওয়ার সংবাদ সম্পাদনায় অসাধারণ একজন শিক্ষক ছিলেন উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, তার নির্মোহ সম্পাদনা আমাদেরকে অনুপ্রাণিত করতো। তিনি একজন পেশাদার বার্তা সম্পাদক ছিলেন, যা এই সময়ে অন্যদের বেলায় মেলে না। তার তুলনা তিনিই ছিলেন।

সোমবার স্থানীয় সময় রাত ১১টা ২৫ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় রাত ৯টা ২৫ মিনিট) সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন গোলাম সারওয়ার।

এর আগে বিকেলে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) লাইফ সাপোর্টে নেয়া হয় তাকে। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

গত ৩ আগস্ট মধ্যরাতে সমকাল সম্পাদককে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সিঙ্গাপুরে নেয়া হয়। পরদিন সকালে তাকে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসার পর তার শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতিও হয়েছিল।

নিউমোনিয়া সংক্রমণ হ্রাসের পাশাপাশি ফুসফুসে জমে থাকা পানিও কমে গিয়েছিল। হার্টও স্বাভাবিকভাবে কাজ করছিল। কিন্তু গত রোববার হঠাৎ করে তার রক্তচাপ কমে যায়। কিডনিও স্বাভাবিকভাবে কাজ করছিল না।

এর আগে গত ২৯ জুলাই মধ্যরাতে দেশবরেণ্য সাংবাদিক, সম্পাদক পরিষদের সভাপতি গোলাম সারওয়ার রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে ভর্তি হন।