সিরাজুল কাদের


যান্ত্রিকতা এবং আবেগহীনতায় ভর করে উদ্ভট এক উটের পিটে সওয়ার হয়ে স্বদেশ আজ কার পানে ধেয়ে চলছে বোধগম্য নয় এবং গন্তব্য যেন মরিচীকায় দৃশ্যমান! দ্বীনি শিক্ষার প্রভাবে প্রভাবিত সামাজিকভাবে নীতি-নৈতিকতার খোলস থেকে উৎসারিত দীর্ঘ পরম্পরায় বিস্তৃত শৃংখলা, প্রথা, আদব-কায়দা, সম্মান আদান -প্রদানের পরিবেশ প্রতিবেশগুলোতে এক নেতিবাচক অবনমনের নিম্মগামী নিদের্শক ভয়ংকর রুপে ক্রমাগতভাবে আমাদের সামাজিক এবং জাতীয় জীবনের ক্ষেত্রবিশেষে বিরূপ পরিস্থিতির এক অদৃশ্য জীবন সংহারী দৈত্যে ভর করেছে। যার পরিক্রমায় আর্থ-সামাজিক অবকাঠামোতে ভূমিধ্বসের ন্যায় ক্ষেত্রে ক্ষেত্রে ব্যাপক ফাটলের সৃষ্টি হয়ে বর্ষার প্লাবনের মত করে স্বকীয় অস্তিত্বের বিলীনরুপী স্রোতধারা।সামাজিক ও নৈতিক অবক্ষয়ের অদৃশ্য প্রতিযোগিতার নব্য হাট আমাদের সচরাচর হাটের সাথে সহাবস্থান নিশ্চিত করেছে। এই নব্য হাটের দোর্দণ্ড প্রতাপে সামাজিক এবং নৈতিক স্খলনের সীমা-পরিসীমার ব্যপ্তি সর্বৈব দৃশ্যমান যা আগামী প্রজন্ম, সংস্কৃতি এবং সভ্যতার অগ্রগতিতে মারাত্মক প্রতিবন্ধকতা এবং হুমকি স্বরুপ!
হ্যাঁ! বলছিলাম বর্তমান প্রেক্ষাপটে আর্থ-সামাজিক অবস্থানের কথা।পক্ষান্তরে যখন আমি আমার শৈশব এবং সমকালীন অবস্থার স্মৃতি রোমন্থন করি তখনি মানস পটে ভেসে উঠে প্রভাত সমীরনে, শিশির সিণ্চনে, সুজলা -সুফলা, শস্য-শ্যামল এবং স্নিগ্ধতায় ভরপুর বাংলা মায়ের ধরতী, সুবেহ সাদিকের সময় জেগে উঠা সম্মানীত মূয়াজ্জিনের সু-ললিত কন্ঠে আজানের ধ্বনিতে সবদিকে উৎসারিত কর্মযজ্ঞের নিদের্শনা।অন্য দিকে বংশ পরম্পরায় সুদীর্ঘ কাল থেকে ধর্মীয় নির্যাসে বেড়ে উঠা বাঁশি বাবু, লক্ষন বাবু, মনি চাকমা, ঐক্যচিং চাকমা এবং সুলভ বডুয়া, প্রমোদ বড়ুয়া, অংতুন রাখাইন, মংসেন রাখাইন, ডেবিড এবং মিল্টন দের আধো অন্ধকারাচ্ছন্ন ভোরে উঠে স্নানপর্ব শেষে ভগবান, বুদ্ধ এবং ঈশ্বরের প্রতি যথাযথ আরাধনাতে শুরু হয় জীবন পর্বের প্রথম প্রভাত! কারো ধর্মের প্রতি অন্য কারো নেই কোন হিংসা-বিদ্বেষ; মহান গৌতম বুদ্ধের অহিংসা পরম ধর্মের অমৃত বাণীর অদৃশ্য সুর লহরীতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির চাদরে আবৃত যেন এ একটি মানচিত্র মা, মাটি, জননী জন্মভূমি সোনার বাংলা “তুমি আমাদের সবার”। সবদিকে শৃংখলা এবং নিত্যনৈমত্তিক কর্মের মধ্যে স্বচ্ছ নিয়মানুবর্তিতার সরব উপস্থিতি, একজন আরেকজনের প্রতি সর্বক্ষেত্রে সহযোগিতার চরম দৃষ্টান্তে তৎপর। এ ক্ষেত্রে স্মৃতির দর্পনে কেমন জানি নিজের কেটে আসা শৈশব কড়া নাড়ছে; প্রসংগত চলে আসছে কিছু কথা: আমি ছিলাম আমার দাদার একমাত্র এবং অত্যন্ত আদরের নাতী, আমার শিশুকালের ছয়মাস বয়স থেকে আমার পরম শ্রদ্ধাভাজন দাদা-দাদী আদরের অতিশায্যে রাত্রহলে তাঁরাই আমাকে ঘুম পাড়িয়ে দিত এবং তাদের সাথে শয্যাশায়ী ছিলাম। এভাবেই আমার বেড়ে চলা। আমার দেখা অনেকগুলো মানুষের মধ্যে দাদা ছিলেন বহুধা জ্ঞানে বিভক্ত বহুমাত্রিক একজন সচেতন ব্যক্তিত্ব। সর্বদা চ্যালেন্জীং জীবনকে এক পা বাড়িয়ে আলিঙ্গন করে নিত। একাধারে তিনি বংগোপসাগরের উত্তাল গর্জনের সাথে সংগ্রাম করে জেলেদের মাঝির ভূমিকা পালন করে গভীর সমুদ্র থেকে মাছ আহরণকারী, অন্যদিকে কৃষক, নওজোয়ান, জন প্রতিনিধি, একজন শিকারী একজন সফল উদ্যোক্তা।
ফজরের আজানের সাথে সাথে ঘুম থেকে জেগে উনার হাঁক শুরু হয়ে যেত এই অমুক এই সমুখ নামাজের জন্য তৈরী হয়ে যাও, মূলত আমরা ছিলাম আবহমান বাংলার ঐতিহ্য যৌথ পরিবারের বন্ধনে আবদ্ধ সৌহার্দ্য-সম্প্রীতি এবং শৃংখলাতে ভরপুর একটি ঘরের সদস্য। দাদার দেয়া হাঁকে সবাই বিনিদ্র রজনীর নিরবতা ভেংগে জেগে উঠে নামাজ শেষে দরাজ কন্ঠে পবিত্র কোরানের তেলাওয়াতে নিমগ্ন থাকত! পাশের ডানে-বামের দাদার ভাইদের বাড়ি সহ গ্রামের প্রায় সকল বাড়িতে পবিত্র কোরান তেলাওয়াতের মূর্চনায় যেন এক স্বর্গীয় সুধা নেমে আসত। এরপর কঁচি-কাঁচা শিশুরা মক্তবে তাদের দ্বীনি পাঠে মনোনিবেশ করত। প্রাপ্ত বয়স্করা যে যার মত নিজ কর্মযজ্ঞের মধ্যে ব্যস্ত হয়ে পড়ত। উল্লেখ্য: তখনকার সমাজব্যবস্থা কৃষি কেন্দ্রিক হওয়ার কারনে অধিকাংশ লোক কৃষি কাজে ব্যস্ত ছিল। এ যেন অলিখিত এক নিয়মাতান্ত্রিক কর্ম পরিকল্পনার মহড়া যার ভিত্তি ছিল অনেক মজবুত।
সামাজিক জীবন পদ্ধতি,জীবনাচরণ, সংস্কৃতি এবং বিনোদনের এক দৃঢ অবকাঠামোতে বেষ্টিত ছিল সামাজিক ব্যবস্থা। অগ্রজ-অনুজদের সম্মান এবং স্নেহের রসায়ণ ছিল সোনায় সোহাগা। গ্রামে সামান্য লম্বা চুল সমেত যে কোন তরুন বা যুবক মুরুব্বীদের শ্যেন দৃষ্টি এডিয়ে যেতে পারতনা শীঘ্রই তাদেরকে হরিপদ চন্দ্র বাবুর কাঁচির নিচে আত্ম সমর্পন করতে হত। স্বাদের লম্বা চুল মূহুর্তের মধ্যে ধরায় মিশে যেত, অতপর: দুর থেকে বন্ধুদের খুঁনসুটি; নায়ক গিরি তো … ইত্যাদি ইত্যাদি। এখানেই ছিল মায়ামমতায় ভরা শাসন- সোহাগের এক অনবদ্য চর্চা। মাঝেমধ্যে দৃশ্যমান হত সামাজিক নিয়ম নীতির মূল স্রোতধারার বাইরে গিয়ে কোন কোন পরিবার মনগড়াভাবে সমাজে চলার চেষ্টা করত। আর তখনতো এক মুখ, দু’মুখ করে সমাজের মূরুব্বীদের কানে চলে যেত অতপর অভিযুক্ত পরিবারকে যথাযথভাবেই শাসন সোহাগের সমন্বয়ে সমাজের নির্দিষ্ট রীতিতে চলার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করত।
সর্বক্ষেত্রে সামষ্টিক সহযোগিতা ছিল এক অনিন্দ্য সুন্দর সমাজ এবং গ্রামের প্রতিচ্ছবি।বয়স তখন আমার দশ বছর জোৎস্না রাত ছিল, রাতের খাবার-দাবার শেষে রাত্রে খেলার জন্য তরুনদের পংগপালে যোগ দেওয়ার জন্য মনস্থ করেছি ঐসময়ে আমার গ্রামের সম্মিলন স্থান ব্রিজের উপর থেকে নাম না জানা কোন একজন হাঁক মারল, আগুন! আগুন!! আগুন!!! আর কি অবস্থা, মূহুর্তের মধ্যে ঘর থেকে ধাওয়া খাওয়া ইঁদুরের মত সক্ষম সব কিশোর,তরুন,যুবক প্রৌঢ় বের হয়ে পড়ল। দেখা গেল পার্শ্ববর্তী উলুবনিয়া গ্রামের কোন এক বাড়িত আগুন লেগেছে যার দাউ দাউ করা লেলিহান শিখাতে চৌদিকে প্রজ্বলিত হয়ে উঠেছে। পার্শ্ববর্তী সব গ্রামের লোক যারপরনাই দৌড়াতে দৌড়াতে ঐখানে পৌঁছে;কারো সাথে কারো কোন কথা নাই যে যে যার মত করে নিজ জীবন বাঁচানোর তাগিদের ন্যায় আগুন নিবানোর কাজে মশগুল হয়ে পড়ল।

ফলশ্রুতিতে একটি ঘর জ্বলে গেলেও পুরো গ্রামের অধিকাংশ ঘর আগুন থেকে রক্ষা পেল। এক অলিখিত ঐক্য, সৌহার্দ্য-সম্প্রীতির জীবন আলয় ক্ষণে ক্ষনে এই আবহমান বাংলার প্রকৃতিকে সিক্ত করেছে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বর্নাঢ্য রুপে বর্ণিল সাজে; এই রুপ এবং এই সাজই ফিরে পাওয়ার অব্যক্ত এবং অনুক্ত তাড়না থেকে আমার এই দু’কলম প্রয়াস!

এক গ্রাম এবং অন্য গ্রামের সাথে খেলা-ধুলা এবং বিনোদনের অন্যান্য ক্ষেত্রে তুমুল প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হত। যথানিয়মে পড়ন্ত বিকেলের বিভিন্ন গ্রামীন খেলাধুলায় মাঠ-ঘাট স্নিগ্ধতায় ভরে উঠত। আমার কাছে আরো বেশী আকর্ষনীয় লাগত যখন জ্যোৎস্না রাতে তরুন ছেলেরা দলে দলে পাল বেঁধে হা-ডুডু, রাজা ডুডু এবং মঅল খেলা সহ অন্যান্য খেলায় মগ্ন হয়ে পড়ত। এখনও গত কালকে ঘটে যাওয়া ঘটনার মত স্মৃতিতে ভেসে আসে হা-ডুডু এবং রাজা-ডুডু তে ব্যবহার করা সু-ছন্দময় শ্লোক:” এ কূলে ন যাইয়ঁম;বাড়া মাছ ন হায়ম।বাড়া মাছ লরেচরে, ঘন্ডিত বারি পরে, ঘন্ডিত বারি পরে..”(ঐ কূলে যাবনা বাটা মাছ খাবনা, বাটা মাছ নাডাচাডা করলে ঘন্টাতে বারি পড়বে”)যতক্ষন দম শেষ না হয় ততক্ষণ পর্যন্ত ঘন্ডিত বারি পরে পুন:পুন: বলতে থাকে। আরো ছন্দময় শ্লোক: “ এ কূলে গিলাম কি দেকিলাম? মক্কা হিন্দুস্তান।
তকে তকে বোয়াই রাইক্কে আরবী কোরান”(ঐ কূলে গেলাম,কি দেখলাম?/ মক্কা-হিন্দুস্তান, তাকে তাকে বসিয়ে রেখেছে আরবী কোরআন) ইত্যাদি।
আরেক চমৎকার খেলা “মল খেলা” এটি দুটি দলে বিভক্ত একটি তুমূল প্রতিযোগিতামূলক খেলা। যা মূলত একটি প্লটের মধ্যে স্লট আকারে আয়তক্ষেত্রিক এক একটি ঘর এবং দুই স্লটকে সংযোগকারী একটি লাইনের মধ্যে প্রথম জন দাঁড়িয়ে থাকে পাহারাদারের ভূমিকায় এবং তার সামনে দ্বিতীয়জন থাকে যিনি মূলত ডানে থেকে বামে, বামে থেকে ডানে তীব্র গতিতে চলতে থাকে উল্লেখ্য এখানে সে অনেক তাৎক্ষনিক বুদ্ধি প্রয়োগ করে যাতে করে সে তার সামনের জনকে পরাস্ত করে বাউন্ডারীর মধ্যে থেকে পরের স্লটে পার হতে পারে।যদি এ পার থেকে অন্য পারে পার হওয়ার সময় প্রথম জন দ্বিতীয় জনের শরীরে হাত ছুঁয়ে দিতে পারে তাহলে ঐখানে এক দলের পরাজয় হয়ে যায়। আবার যে লাইন থেকে শুরু সে লাইনে যদি যে কোন একজন দলের সবাইকে পরাজিত করে যথাযথ ভাবে ফিরে এসে সমস্বরে “ উড়ি আইও” ( উঠে এসো) বলে ডাক দিতে পারে তাহলে এই দল জিতে যায় অর্থাৎ এই দল এক সেটে জিতল।এভাবে এক রাতে অনেক সেটের খেলা চলতে থাকে, এ খেলা যেন সতর্কতা এবং শারিরীক কসরতের এক অপূর্ব সম্মিলন এখানেএকজন মল বা দলপতি ও থাকে যে কিনা সব দিক দিয়ে পারদর্শী মূলত এই দলপতি অনেকগুলো সারিবদ্ধ লাইনের মধ্যে শেষ লাইনে দাঁড়িয়ে তার শরীরকে ডানে-বামে হেলাতে হেলাতে সমস্ত শক্তি দিয়ে বাঘের মত ক্ষিপ্র এবং শকুনের মত শ্যেণ দৃষ্টি সব দিকে নিবদ্ধ রাখে। কখনো সে জাম্প করে কখনো ক্ষিপ্র গতিতে মধ্যের লাইন দিয়ে ছুটে যাতে করে প্রতিপক্ষ দলের সদস্যকে নিয়মাতান্ত্রিকভাবে ছুঁয়ে দিতে পারে; যদি পারে তাহলে এই সেটে তারা জয়ী হয়।প্রতিটি মূহুর্ত যেন শৃংখলাতে পরিপূর্ণ এক একটি থ্রিলিং এ আনন্দ উত্তেজনার সুখময় পর্ব। সম্নানিত পাঠকবৃন্দদের অনেকে আমার চেয়ে এই ঐতিহ্যবাহী গ্রামীন ক্রীড়া সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। অথচ আজকের আমার ডিজিটাল প্রজন্মের সোনামনিদের কাছে এইগুলো সূদরপরাহত অলীক সদৃশ কোন এক বস্তু।উল্লেখ্য গ্রামীন বিভিন্ন খেলার সফল দলপতিরাই ভবিষ্যতে কেউ জন প্রতিনিধি, উদ্যাক্তা বা গন্যমান্য ব্যক্তি হিসেবে সমাজে আবির্ভূত হয়।
ধৈর্য্যর বাঁধভাংগা এই বর্ণনার পিছনে করুন আত্মার আহাজারী এখানেই, আজ আমরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমাদের নিজস্ব স্বকীয়তা ও সংস্কৃতির অভিনব পন্থায় দাফন-কাফন সম্পন্নের সন্নিকটে পৌঁছে গেছি যা আমাদের জাতিস্বত্তাতে ঘূমোট অন্ধকারচ্ছন্ন বাদলের ছায়া ভর করতে তৎপর!
এদিকে জাপানে আপনি যদি লক্ষ্য করেন, দেখবেন জাপানীরা তাদের পূর্ব প্রজন্ম থেকে সৃষ্ট বিভিন্ন সংস্কৃতি এবং বিনোদনের আধারগুলোকে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে লালন করে স্বতস্ফু্র্তভাবে উপভোগ করে আসছে এবং এতে তারা অনেক বেশী আনন্দিত ও উৎফুল্লিত হয় যেমন: “সুমো খেলা” এটি এক ধরনের ইয়া বড় দৈত্যদেহী দু’জন কুস্তিবিদদের মধ্যে সংগঠিত কুস্তি খেলা যা আমাদের বলী খেলার সাথে একটু সাদৃশ্যতা রাখে তবে এখানে অনেকগুলো নিয়মের বিষয় রয়েছে এবং সুমো কুস্তিবিদদের আলাদাভাবে থাকা-খাওয়া এবং বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে ইত্যাদি। এই সুমো ইভেন্টটি দীর্ঘ শতাব্দী ধরে এখানে চলে আসছে এই খেলাটির আনুষ্ঠানিক টূর্ণামেন্ট অনুষ্টিত হয় টমিওকা হাচিমান স্রাইনে ১৬৮৪ খ্রীস্টাব্দে যা এখনো পর্যন্ত চলমান। এছাড়াও জাপানীরা তাদের অনেক প্রাচীন বিনোদন ও উৎসবের মাধ্যমগুলোকে প্রতি বছর জাঁকজমকপূর্ণভাবে পালন করে কারন তারা মনে করে এই সংস্কৃতিগুলোতে মিশে আছে তাদের পরিচিতি এবং ঐতিহ্যের এক একটি নান্দনিক চিত্র।
আমাদের ও নিজস্ব কৃষ্টি-সংস্কৃতির অনেকগুলো সমৃদ্ধ ক্ষেত্র ছিল যার কিণ্চিৎ বর্ণনা এই লেখার অগ্রভাগে দেয়ার চেষ্টা করেছি। আজ আমরা প্রায় সবক্ষেত্র নিজস্ব সংস্কৃতিকে পদদলিত করে নীতি-নৈতিকতা বিবর্জিত বেহায়াপনাএবং অশ্লীলতায়পূর্ণ বেনিয়াদের লেলিয়ে দেয়া অপসংস্কৃতির ডামাডোলে মোহাবিষ্ট হয়ে পড়ছি। আজ অপসংস্কৃতির নাগিনীর ছোবলে অসহ্য যণ্ত্রনাময় বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত আমার জননী-জন্মভূমির ভবিষ্যত স্বপ্নবাজ তরুন সমাজ। যে বিষক্রিয়ার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াতে সামাজিক মূলস্রোত ধারাতে ছন্দপতন ঘটে মাদকতা, নৈরাজ্য, হীনমন্যতা এবং প্রতিহিংসাপরায়ণতা সহ বিভিন্ন ব্যভিচার- অনাচারের চৌহদ্দিতে ঘুরপাক খাচ্ছে আমাদের আগামী প্রজন্মের সমাজ ব্যবস্থা।যখন কোন জাতি এবং সমাজ তার আপন কৃষ্টি-সংস্কৃতি ও নিজ জাতিস্বত্তাকে জলান্জলী দিয়ে অন্য সংস্কৃতির প্রতি ঝোঁকে পড়ে তখনি কূল রাখি না শ্যাম রাখি অবস্থায় পতিত হয়ে ঐখানে উপরোক্ত সামাজিক ব্যাধিগুলো সবলে এবং সজোরে তাদের শাখা-প্রশাখাগুলোর বিস্তার ঘটায় যা একটি জাতির অগ্রগতিতে ধ্বংসাত্মক এবং বিরুপ পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। আজকে আমরা-আপনারা অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে খেয়াল করলে এ্যালার্মিং বিষয়গুলো দৃষ্টিগোচর হবে বলে মনে করি।

তাই বলে গা ভাসিয়ে দিয়ে যদি আমরা এদিকে যথাযথ দৃষ্টি নিবদ্ধ না করি তাহলে পরিস্থিতি ক্রমান্বয়ে খারাপ থেকে আরো অধিকতর খারাপে উপনীত হবে। এই ক্ষেত্রে”Strengthen the Grass root of the Society” প্রজেক্ট এর আওতায় সকল পেশার এলিটদেরকে নিয়ে ওয়ার্কশফের ভিত্তিতে একটি কম্প্রেহেনসিভ স্ট্রাটেজিক কর্ম পরিকল্পনা করে সব শ্রেনীর লোকদের এ্যাকটিভ অংশগ্রহনের ভিত্তিতে রাষ্ট্রীয় এবং সামাজিক, সামষ্টিক পৃষ্টপোষকতায় বিভিন্ন প্রনোদনা ও রেজাল্ট ওরিয়েন্টেড সচেতনতামূলক প্রোগ্রামের আয়োজন করে অগ্রসর হলে ইতিবাচক একটি ফল আসতে বাধ্য বলে মনে করি।
সুতরাং পরিশেষে একটি উক্তি দিয়ে লেখাটির ইতি টানব। “সংস্কৃতি গড়ে উঠে ধীরে ধীরে সমাজ জীবনের তীর ঘেঁষে ইতিহাসের স্রোতধারায় অভিজ্ঞতার বালুকণার মধ্যে স্বর্ণরেণুর মত”
সুতরাং আমরাও যেন সমাজ জীবনের তীর ঘেঁষে ইতিহাসের স্রোতধারায় অভিজ্ঞতার বালুকণার মধ্যে স্বর্ণরেণুর মত করে আমাদের সমৃদ্ধ সমাজের জীবনালেখ্য রচনা করতে পারি এই প্রত্যাশাতে পরিবর্তনের তরী ভাসালাম…..!


E-mail: sirajsharifa@gmail.com , Mobile number in Japan: +81-70 2663-5660