জে.জাহেদ কর্তৃক অনলাইনে নেওয়া সময়ের জনপ্রিয় নায়িকা সানাই এর একটি এক্সক্লুসিভ সাক্ষাতকার

বিনোদন প্রতিবেদকঃ

অভিনয় গুণে খুব অল্প সময়ে দেশের মানুষের মন জয় করে নিলেন বর্তমান সময়ের ব্যস্ত অভিনেত্রী সুপ্রভা বিনতে মাহবুব সানাই। সংগীতের মিউজিক ভিডিও ও চলচ্চিত্রে অভিনয় করে ইতিমধ্যে যিনি বেশ খ্যাতি অর্জন করে দর্শকের নজর কেড়েছেন।

নবাগত এই অভিনেত্রী রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএ নিয়ে পড়াশোনা করছেন। সানাইয়ের জন্ম ঢাকার ধানমন্ডিতে হলেও তার পৈত্রিক নিবাস নীলফামারী জেলায়।

বর্তমানে সানাই অভিনয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন দেশের শোবিজ অঙ্গন। এরই মধ্যে এক্সক্লুসিভ একটি সাক্ষাতকারে মুখোমুখি হয়েছেন আমাদের বিনোদন পাতায় প্রতিবেদক জে,জাহেদ এর সাথে।

প্রাণখুলে কথা বলেছেন চলচ্চিত্র জগত ও নিজের সমসাময়িক নানা অজানা বিষয় নিয়ে—

প্রতিবেদক: কেমন আছেন?

সানাই: ইনশাআল্লাহ বেশ ভালো আছি!

প্রতিবেদক: বর্তমানে কি কি কাজ নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন একটু জানতে চাই?

সানাই: বর্তমানে পরিচালক বাবু সিদ্দিকীর “ময়নার ইতিকথা” ছবির কাজ রিসেন্টলি শেষ করেছি। ডাবিং এর কাজ চলছে, পাশাপাশি সংগীতের কিছু মিউজিক ভিডিওর কাজ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছি।

প্রতিবেদক: কখনো ভাবেননি চলচ্চিত্রের নায়িকা হবেন তাহলে এ জগতে আসার ইতিকথা একটু দশর্ককে বলুন?

সানাই: ইতিকথা বলতে আসলে একদম শুরু থেকেই আমার ডিপেন্ট কিছু করার ইচ্ছা ছিল সব সময়। তার জন্য সিনেমায় আসতে হবে বা নায়িকা হতে হবে এমন কিছু নয়। সবাই গতানুগতিক যা কিছু করতো আসলে তা আমার পছন্দ হতোনা। তাই ভিন্ন কিছু সৃজনশীল কাজ করার আগ্রহ নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি।

প্রতিবেদক: চলচ্চিত্রের নায়িকা না হলে নিজেকে কোন পর্যায়ে নিয়ে যেতেন আপনি?

সানাই: নায়িকা না হলে প্রফেশনালি একজন পুরোপুরি ব্যবসায়ি হতাম।

প্রতিবেদক: ছবিতে কোন ধরনের চরিত্রে অভিনয় করতে নিজেকে বেশ আতœবিশ্বাসী ফিল করেন গ্রামীন,রোমান্টিক,এ্যাকশন?

সানাই: মূলত এ্যাকশন ছবিতে কাজ করতে আমার ভাল লাগে।

প্রতিবেদক: বর্তমানে দশর্কের কাছ থেকে কেমন সাড়া পাচ্ছেন?

সানাই: আমি আসলে চিন্তাও করিনি নতুন হিসেবে আর্লি এত সাড়া পাবো। দ্রুত সময়ে সবার দোআয় ইনশাল্লাহ ব্যাপক সহযোগিতা ও সাড়া পাচ্ছি। সামনে এগিয়ে যেতে চাই সকলের আন্তরিকতায় এতটুকু আশা করি।

প্রতিবেদক: ভালো অভিনয় করতে গেলে কোনটার বেশি দরকার (পরিশ্রম, আতœবিশ্বাস, ভালোবাসা না প্রতিযোগিতার মানসিকতা?

সানাই: আমি বলবো আতœবিশ্বাসই বেশি দরকার যে কোন কাজে।

প্রতিবেদক: একটু অন্য প্রসঙ্গে আসি, সরকার বিএফডিসির তত্ত্বাবধানে সারা দেশে ৫০টি সিনেমা হলে এইচডি প্রজেক্টর বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটাকে কিভাবে দেখছেন?

সানাই: খুবই পজেটিভলি ভাবছি! সরকার ভাল একটি উদ্যোগ নিয়েছে। আশা করি খুব তাড়াতাড়ি তার সুফল ভোগ করবে দশর্ক। খুবই খুশি হয়েছি মন থেকে কেনোনা দীর্ঘদিন পরে হলেও সরকার ও এফডিসি একটি বেটার পদক্ষেপ নিচ্ছে।

প্রতিবেদক: ছবির অভাবে বেকার হচ্ছেন ঢালিউডের নায়ক-নায়িকারা। ২০০৬ সালের পর থেকে ছবি নির্মাণ কমতে থাকে ফলে বাধ্য হয়ে অনেকেই অন্য পেশা বেছে নিচ্ছেন এটাকে কিভাবে দেখছেন?

সানাই: এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করবনা কেননা ওটা যার যার নিজস্ব পারসোনালিটি।

প্রতিবেদক: বর্তমানে মাহি, পরী, বুবলী, জয়া, ববি, নুসরাত ফারিয়ার মতো নবাগতরা ছবিতে কাজ করছেন। সেক্ষেত্রে আপনার মূল্যায়ন কতটুকু?

সানাই: আমি কারো সাথে নিজেকে মূল্যায়ন করিনা। তাঁরা তাদের মতো আমি আমার মতো। তবে সকলের প্রতি শুভকামনা রইল।

প্রতিবেদক: কয়েক দশক ধরে চলচ্চিত্র শিল্পে ধস নেমেছে। দর্শক বাড়লেও তারা হলমুখী হচ্ছে না। ঘরে বসে তারা বিকল্প মাধ্যমে সিনেমা দেখছেন। চলচ্চিত্রের মান নেই, হলের দুরবস্থা, দর্শক-চাহিদা বুঝতে না পারা, শিল্পীদের নিষ্ঠার অভাব ,ভালো সিনেমা নির্মাণ হচ্ছেনা,পাইরেসি, ভ্যাট-ট্যাক্সের প্রভাব এসব অভিযোগ সত্য কিনা?

সানাই: আসলে দোষটা এক পক্ষের না। সকলের অসহযোগিতায় জগাখিঁচুড়ির মত অবস্থা হয়েছে। বরং সকলের কিছু না কিছু দোষ রয়েছে বলে এমনটি ঘটছে। এটা আপনারা যেমন বুঝতেছেন আমরাও। সবকিছু ঠিকঠাক করতে হলে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে সুন্দর মনমানসিকতায়। আমি এক হাত এগিয়ে আসলাম কেহ আসলোনা তাহলে রেজাল্ট তো স্বাভাবিক জিরো হবে। সো এভাবে তো পাইরেসি বন্ধ হবেনা। সকলকে আগাতে হবে সুস্থ্য মানসিকতায়।

প্রতিবেদক: অনেকেই বলেন দেশে বাইরের সিনেমা দেখানো বন্ধ করতে? বলিউড, হলিউড,কেরালা,জাপানি, চাইনিজ, ইরানি ছবি সারা পৃথিবীতে চলে তাহলে বন্ধ করার প্রশ্ন কেন?

সানাই: তাদের দেশে তো আমাদের সিনেমা দেখায় না। যেমন ইন্ডিয়াতে আমাদের কোন চ্যানেল ও সিনেমা দেখায় না। আমাদের দেশে ওদের এত গুলো চ্যানেল চলে কিন্তু আমাদের একটি চ্যানেলও তাদের দেশে চলে না। সো চিন্তা করা যায় এমন কিছু করা স্বাভাবিক।

প্রতিবেদক: চলচ্চিত্র হলো একটি জাতির সৃজনশীল বহিঃপ্রকাশ। আমাদের সিনেমা নির্মাণে সৃজনশীলতা কতটুকু দেখছেন?

সানাই: শতভাগ সৃজনশীলতা রয়েছে বলে আমি মনে করি। সময় সাপেক্ষে সবকিছুর একটা পরিবর্তন হয়। ১৯৭১ সালে মানুষ যা পছন্দ করে দেখেছে, ২০১৮ সালে এসে মানুষ তা দেখবেনা তাইনা!! সময়ের সাথে সাথে চাহিদা ও সবকিছুর চেইঞ্জ হয়েছে। সুতরাং আমরাও আশাবাদী ভালো কিছু করার।

প্রতিবেদক: গল্প এবং পরিচালক দুটোর কোনোটারই বাংলাদেশে অভাব নেই। অভাব আছে কেবল আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির আসলে কি তাই?

সানাই: হ্যা, আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করা উচিত। আমাদের সবার নিজ নিজ জায়গা থেকে।

প্রতিবেদক: বিদেশি ছবির নকল বানাতে বানাতে আমাদের বাংলা ছবির নিঃশ্বাস, বিশ্বাস ও আবেগ ভুলে গেছে বলে অনেকের দাবি, আসলেই কি আমাদের দেশে কপি হচ্ছে?

সানাই: এ ব্যাপারে আমি কিছু বলতে চাচ্ছিনা কেননা আমি একদম নতুন। সো কোন কমেন্ট করতে চাইনা।

হা—হা—হা

প্রতিবেদক: ভালো গল্প,ভালো আর্টিস্ট,ভালো টেকনিশিয়ান ,ভালো নির্মাতা থাকার পরও চলচ্চিত্রে ভাল কিছু সৃষ্টির প্রতিবন্ধকতা কোথায়?

সানাই: আসলে সবকিছুর জন্য একটা সময় দরকার। চমৎকার একটি ফলাফল দেখার জন্য যেমন ছাত্রদের কঠোর অধ্যবসায় আর পরিশ্রম করা দরকার ঠিক তেমনি এখানেও।

প্রতিবেদক: আমাদের ৮৫% মানুষ গ্রামে বসবাস করে কিন্তু আমাদের সিনেমা বানানো গুলশান-বনানীর জন্য এটা সত্য কিনা?

সানাই: না। ওটা একদম সত্য নয়।

প্রতিবেদক: পাইরেসি বন্ধে আপনার মন্তব্য কি?

সানাই: আমাদের পাশের রাষ্ট্র ভারতে পাইরেসি বন্ধে সে দেশের প্রশাসন কঠোর অবস্থানে রয়েছে। সুতরাং আমাদের দেশেও এক্ষেত্রে সরকার বড় ভূমিকা রাখতে পারে। পাশাপাশি দেশের বড় বড় গুনি শিল্পীরাও এগিয়ে আসলে পাইরেসি বন্ধ হবে অচিরেই।

প্রতিবেদক: দেশ ও জাতি গঠনে সংবাদপত্রের ভূমিকা কতটুকু একটু মন্তব্য করুন?

সানাই: সাংবাদিকতা অনেক বড় একটি পবিত্র পেশা। গণমাধ্যম সমাজের দপর্ন হিসেবে কাজ করে। সুতরাং একটা দেশের উন্নয়ন ও জাতি গঠনে সংবাদপত্র ও সাংবাদিকের ভূমিকা অপরিসীম।

প্রতিবেদক: আমাদের পত্রিকায় সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

সানাই: আপনাকে ও ধন্যবাদ।

পরিশেষ, অসম্ভব সূদর্শনা তরুণী সানাই চলচ্চিত্র জগতে পথচলা শুরু ‘প্রেমের তাজমহল’ সিনেমা খ্যাত নির্মাতা গাজী মাহবুবের ‘ভালোবাসা ২৪/৭’ শিরোনামের চলচ্চিত্রের মধ্যে দিয়ে । এরপর মোস্তাফিজার রহমান বাবুর ‘প্রতিশোধ’ ও ‘প্রতিক্ষা’ নামের দুটো ছবিতে চুক্তিবদ্ধ হন। এছাড়াও নির্মাতা দেওয়ান নাজমুলের ‘শালবনের মহুয়া’তে ও দ্যুতি ছড়িয়েছেন এবং এগিয়ে যাচ্ছেন।