বিশেষ প্রতিবেদক:

কক্সবাজার শহরে কলাতলী সৈকত পাড়ায় সরকারী পাহাড় দখল করে অবৈধ ভাবে গড়ে উঠা ‘আবাসন প্রকল্পে’ স্থাপনা নির্মাণ এখনো অব্যাহত আছে। অথচ এ পাহড়ে স্থাপনা নির্মাণ বন্ধ ও নির্মিত স্থাপনা ১৫ দিনের মধ্যে উচ্ছেদ করতে গত ৩ জুলাই নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট। সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের

বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান এর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ স্বপ্রণোধিত হয়ে এ নির্দেশনা দেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করে পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদটি আদালতের নজরে আনা আইনজীবি মিনহাজুল হক চৌধুরী বলেন‘কক্সবাজার শহরের সৈকত পাড়া পাহাড়ে নির্মিত অবৈধ স্থাপনাগুলো উচ্ছেদ করে ৯ আগষ্ট’র মধ্যে এফিডেভিটের মাধ্যমে আদালতকে জানাতে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দিয়েছেন।’

জানাযায়, কক্সবাজার শহরে সমুদ্র সৈকতের পাশে হোটেল-মোটেল জোনে অবস্থিত ৯০ একর আয়তনের বিশাল একটি পাহাড়। দুই’শ ফুট উচুঁ নয়নাভিরাম এ পাহাড়টির মালিক সরকার। কিন্তু গত কয়েক মাস ধরে এ পাহাড়টির অর্ধেক জমি দখল করে অবৈধ ভাবে তৈরী করছে আবাসন প্রকল্প। ৪০ বর্গফুট আয়তনের একেকটি প্লট দুই থেকে তিন লাখ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে ‘লাইট হাউজ পল্লী সমবায় সমিতি’র নামে। গত তিন মাসে পাহাড়ের বিভিন্ন প্লটে ৫০টির বেশি ছোট টিনের ঘর তৈরি করা হয়েছে। এসব স্থাপনা তৈরীতে নির্বিচারে কাটা হচ্ছে পাহাড়ও।

অভিযোগ উঠেছে, স্থানীয় প্রশাসনের কয়েক জন কর্মকর্তাকে ‘ম্যানেজ’ করে এই আবাসন প্রকল্প গড়ে তুলেছেন স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি।

গতকাল শনিবার সকালে সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, শহরের সুগন্ধা পয়েন্টের পূর্ব পাশে সৈকতপাড়া পাহাড়ের দক্ষিণ পাশে বিশাল অংশ কেটে সমতল করা হয়েছে। সেখানে তৈরি হয়েছে অসংখ্য টিনের ঘর। অধিকাংশ ঘরে বসতি স্থাপন করেছে অনুপ্রবেশকারী মিয়ানমারের রোহিঙ্গা পরিবার। কৌশলে বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়ে পানির সমস্যা দূর করতে লাখ টাকা খরচ করে বসানো হয়েছে গভীর নলকূপও।

এসময় কথা হয় একটি টিনের ঘরে পাহারাদার হিসাবে থাকা একজন রোহিঙ্গা (নিজেকে মো: সালাম নামে পরিচয় দিয়েছেন) বলেন, ‘চলতি র্বষার শুরুতে প্রশাসনের লোক পরিচয় দিয়ে কয়েকজন মানুষ এখানে এসেছিল, তারা বৃষ্টিতে সতর্কভাবে থাকতে নির্দেশ দিয়ে চলে গেছে তবে গতকাল (১০ আগষ্ট) পর্যন্ত কোন ঘর উচ্ছেদ করা হয়নি।’

ইয়ুথ এনভায়রণমেন্ট সোসাইটি(ইয়েস) কক্সবাজারের প্রধান নির্বাহী ইব্রাহিম খলিল মামুন বলেন,‘ উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সরকারি পাহাড় কেটে আবাসন পল্লি ও ঘরবাড়ি তৈরি করার বিষয়টি গত ৫ আগষ্ট জেলা প্রশাসককে লিখিত ভাবে জানিয়েছি,কিন্তু কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। এতে নির্বিচারে পাহাড় কাটার পাশাপাশি জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হচ্ছে। ঝুঁকির মুখে পড়ছে ওই পাহাড়ের আশপাশের কয়েক’শ মানুষ।’

তিনি বলেন, এক মাস আগেও পাহাড় ধ্বসে কক্সবাজারে একই পরিবারের তিন জনসহ পাঁচ জনের মৃত্যু হয়েছে।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো:কামাল হোসেন আদালতের নির্দেশনার বিষয়ে গতকাল বিকালে বলেন,‘ সৈকত পাড়া পাহাড়ে স্থাপনা উচ্ছেদ করা নিয়ে হাইকোর্টের আদেশের ব্যাপারে আমার জানা নেই।’