ডেস্ক নিউজ:
সাংবাদিকদের ওপর ওপর হামলা–নির্যাতন বন্ধে ‘ইন্টারন্যাশনাল প্রেস ইন্সটিটিউট’ (আইপিআই) বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। বুধবার প্রধানমন্ত্রীর প্রতি লিখিত চিঠিতে সংস্থাটি প্রখ্যাত ফটোসাংবাদিক শহিদুল আলমকে গ্রেফতার করার বিষয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তার নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করে সংস্থাটি লিখেছে, সাংবাদিকদের ওপর সম্প্রতি যে হামলাগুলো হয়েছে তাতে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন দলের সমর্থক ও তার সরকারের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের জড়িত থাকার কথা জানা গেছে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের পক্ষে স্বাধীন সাংবাদিকতার ভূমিকা প্রধানমন্ত্রীকে স্মরণ করার আহ্বান জানিয়ে সাংবাদিকদের সুরক্ষা নিশ্চিতে পদক্ষেপ গ্রহণের জোর দাবি জানিয়েছে আইপিআই। বিভিন্ন দেশের সম্পাদক, সংবাদকর্মী ও সাংবাদিকদের নিয়ে গঠিত ‘ইন্টারন্যাশনাল প্রেস ইন্সটিটিউট’। তাদের সদর দফতর অস্ট্রিয়ার ভিয়েনাতে। সংস্থাটি জাতিসংঘ, ইউনেস্কো ও কাউন্সিল অফ ইউরোপের ‘স্বীকৃত পরামর্শদাতা।’

সংস্থাটির ‘হেড অব অ্যাডভোকেসি’ আর প্রসাদ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে উল্লেখ করেছেন, ‘শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের খবর সংগ্রহকালে দায়িত্বপালনরত সাংবাদিকদের ওপর নিরাপত্তা বাহিনীর হামলায় আমরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি। জানা গেছে, সাংবাদিকদের ওপর হওয়া হামলার ঘটনাগুলোর অনেকগুলোর সঙ্গে আপনার দলের সমর্থকরা জড়িত। এসব হামলাই প্রমাণ করে আপনার নেতৃত্বাধীন দল স্বাধীন সাংবাদিকতা ও সমালোচনার বিষয়ে অসহিষ্ণু হয়ে উঠেছে এবং দলীয় ক্যাডারদের বিরুদ্ধ মত দমনে কাজে লাগাচ্ছে। এটি আপনার সরকারের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ রক্ষার দাবির বিপরীত।’

চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, ফটোসাংবাদিক শহিদুল আলমের গ্রেফতারির ঘটনা বাংলাদেশ কর্তৃক স্বাক্ষরিত আন্তর্জাতিক চুক্তির স্পষ্ট লঙ্ঘন। আইপিআই চায়, দায়ের করা সব অভিযোগ প্রত্যাহার করে তাকে মুক্তি দেওয়া হোক।

সংবাদমাধ্যম আল জাজিরাকে দেওয়া সাক্ষাৎকার ও ফেসবুকে প্রকাশিত লেখার জন্য শহিদুল আলমের বিরুদ্ধে সরকারবিরোধী অপপ্রচার চালানো ও অসত্য তথ্য দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি আইনের যে ৫৭ ধারা অনুযায়ী সেটিকে বিতর্কিত আখ্যা দিয়ে আইপিআই বলেছে, এসব অভিযোগ প্রতিহিংসামূলক।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীন সংবাদমাধ্যমের ভূমিকার বিষয়টি স্মরণ করার পরামর্শ দিয়ে চিঠিতে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ সাংবাদিকরাই দখলদার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর চালানো গণহত্যার খবর প্রচার করেছিল, যার ফলে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে বিশ্ব জুড়ে জনমত গড়ে উঠেছিল। বাংলাদেশের সংবিধান প্রণেতারাও সাংবিধানিক নিশ্চয়তা দেওয়ার মাধ্যমে স্বাধীন সংবাদমাধ্যমের গুরুত্বকে স্বীকৃতি দিয়েছেন।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘ইন্টারন্যাশনাল প্রেস ইন্সটিটিউটের’ পক্ষে আর প্রসাদের লিখিত চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘আমরা আপনাকে সেই নীতির কথা মনে রাখার অনুরোধ করছি এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে সাংবিধানিক সুরক্ষা কার্যকরের আহ্বান জানাচ্ছি।’

আইসিটি আইনের বদলে ‘ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন’ জারির সরকারি পরিকল্পনার বিষয়ে আইপিআই লিখেছে, নতুন আইনটি আগেরটির মতোই নিপীড়নমূলক এবং তা সাংবাদিকদের দুর্নীতিবিরোধী প্রতিবেদন প্রকাশকে বাধাগ্রস্ত করবে। অথচ শেখ হাসিনার সরকার দুর্নীতি নির্মূলের আশ্বাস দিয়েছে। চিঠির ভাষ্য, ‘যদি ওই আইনটি বর্তমান রূপে সংসদে পাস হয়ে যায় তাহলে তা যে শুধু সাংবাদিকদের ওপর গুরুতর ও নিপীড়নমূলক প্রভাব ফেলবে তা নয়, বরং বাংলাদেশের সব নাগরিকই ওই আইনের কারণে নিপীড়নের শিকার হবে।’