চট্টগ্রাম ব্যুরো:

দীর্ঘ ১৪ বছর পর কমিটি হওয়ার পর প্রাণ ফিরে পেয়েছিলো চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগ।

২০১৭ সালের ১৫ অক্টোম্বরে বোয়ালখালী উপজেলার বোরহান উদ্দীনকে সভাপতি ও আনোয়ারা উপজেলার আবু তাহেরকে সাধারণ সম্পাদক করে ৫১সদস্য কমিটি অনুমোদন দেয় তৎকালিন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসেন। কিন্তু কমিটি ঘোষণার ছয় মাস অতিক্রম করলেও এখনো ঘোষণা হয়নি পূর্ণাঙ্গ কমিটি।

এদিকে দীর্ঘ ১৪ বছর পর কমিটি হওয়ার পর থেকে ঝিমিয়ে থাকা চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের তৃণমুল পর্যায়ে নেতাকর্মীদের বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। সভাপতি বোরহান উদ্দীন ও সাধারণ সম্পাদক আবু তাহেরের নেতৃত্বে দক্ষিণ চট্টগ্রামের প্রায় সব উপজেলা ও ইউনিয়নে কর্মী সমাবেশ করে চাঙ্গা করছে তৃণমুলকে।

আনোয়ারা উপজেলার উপজেলার এগারো ইউনিয়নে আগামী নির্বাচনে ছাত্রলীগের করণীয় ও কর্মী সমাবেশ করেছে দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু তাহের। কর্মী সমাবেশগুলো ছাত্রলীগৈর নেতাকর্মীদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।

এছাড়া সপ্তাহ খানেক আগে নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টি করার লক্ষে মেয়াদোত্তীর্ণ জেলার আওতাধীন সকল কমিটি বিলুপ্ত করেছে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।

এছাড়াও আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে চলছে জেলার আওতাধীন উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন কমিটি করার কাজ।

দীর্ঘদিন ধরে নেতৃত্বহীনতায় ভোগা দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগ কমিটি পেয়ে বিগত ছয় মাসে অনেকটা সক্রিয়, নিয়মিত দলীয় নানা কর্মসূচিতে ছাত্রলীগ নেতাদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো।

তৃণমুল নেতাকর্মীরা মনে করছেন, অনেকদিন অন্ধকারে ছিল দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগ পরিবার, বোরহান-তাহেরের নেতৃত্বে বিগত ছয় মাসের কর্মকা-ে নতুন করে আশা দেখছে দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের তৃণমুল পর্যায়ের নেতারা।

তাদের দাবি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যদি ছাত্রলীগ ভ্যানগার্ড ও শক্তিশালী হিসাবে মাঠে কাজ করা পরিকল্পনা থাকে আওয়ামীলীগ ও ছাত্রলীগের, তাহলে নির্বাচনের আগে দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটির দ্রুত গঠনের পাশাপাশি জেলার আওতাধীন সকল ইউনিটের কমিটি করা হলে আরো শক্তিশালী হবে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগ।

জানা যায়, ১৯৯৮ সালে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়। আবদুল কাদের সুজনকে সভাপতি ও আ ম ম টিপু সুলতান চৌধুরীকে সাধারণ সম্পাদক করে গঠিত ওই কমিটি ২০০৩ সাল পর্যন্ত বহাল থাকে। ২০০৩ সালে এই কমিটি ভেঙে দিয়ে মোহাম্মদ ফারুককে আহ্বায়ক করে তিন মাসের জন্য কমিটি গঠন করা হয়।

তিন মাসের এই কমিটি বহাল থাকে ২০১১ সাল পর্যন্ত, অর্থাৎ ৮ বছর। ২০১১ সালে মোহাম্মদ ফারুকের নেতৃত্বাধীন এই কমিটি ভেঙে দিয়ে আবদুল মালেক জনিকে আহ্বায়ক করে কমিটি গঠন করা হয়।

এই কমিটি গঠনের নিজেদের কর্মীদের হাতে খুন হন কমিটির আহ্বায়ক আবদুল মালেক জনি। এরপর ২০১৪ সালের ৩০ আগস্ট ঢাকায় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় ছাত্র সমাবেশ থেকে ফেরার পথে দুই পক্ষের মারামারিরতে ট্রেন থেকে ফেলে দেয়া হয় দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগ নেতা ও লোহাগাড়ার বার আউলিয়া ডিগ্রি কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি তৌহিদুল ইসলাম তকিকে।

এ সময় তকি ঘটনাস্থলেই মারা যান। ত্বকির মৃত্যুর পর সালাহ উদ্দিন সাকিবের নেতৃত্বাধীন কমিটির কার্যক্রম ২০১৪ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে বন্ধ করে দেয়া হয় কেন্দ্র থেকে। তখন থেকে নেতৃত্বশূন্য ছিল চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগ।

যোগাযোগ করা হলে দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি বোরহান উদ্দীন বলেন, ঈদের পর পরই আমরা নির্বাচনী প্রস্তুতি হিসাবে জেলার আওতাধীন সকল ইউনিট কমিটিগুলো দেওয়া হবে। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কমিটি হওয়ার পরেই আমরা দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করতে পারব।

সাধারণ সম্পাদক আবু তাহের বলেন, আমরা আমাদের জেলার আওতাধীন ইউনিট কমিটিগুলো দিয়ে দিচ্ছি, দ্রুত সময়ের মধ্যে এ কাজ সম্পন্ন হবে, তারপর কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা হওয়ার পর চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হবে।