স্পোর্টস ডেস্ক:

দেশের বাইরে ২০১২ সালে আয়ারল্যান্ডের মাটিতে আইরিশদের টি-টুয়েন্টিতে হোয়াইটওয়াশ করেছিল বাংলাদেশ। তারপর থেকে টি-টুয়েন্টি সিরিজ জয় অধরাই থেকে গেল। অবশেষে আমেরিকার মাটিতে সেই জয় দ্বিতীয়বারের মতো ধরা দিল। সোমবার ফ্লোরিডার লডারহিলে সিরিজের শেষ টি-টুয়েন্টিতে বৃষ্টি আইনে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ১৯ রানে হারিয়ে ২-১ ব্যাবধানে টি-টুয়েন্টি সিরিজ জিতল টাইগাররা। এদিন প্রথমে ব্যাট করে লিটন দাস ও মাহমুদউল্লাহর ঝড়ো ব্যাটিংয়ে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৫ উইকেটে ১৮৪ রান সংগ্রহ করে টাইগাররা। জবাবে ১৭.১ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ১৩৫ রান করে ক্যারিবিয়রা। এরপর নামে বৃষ্টি। এক পর্যায়ে বৃষ্টি আইনে বাংলাদেশকে জয়ী ঘোষণা করা হয়। ম্যাচসেরা হয়েছেন লিটন দাস। আর সিরিজসেরা হয়েছেন সাকিব আল হাসান। এর আগে ওয়ানডে সিরিজটিও ২-১ ব্যাবধানে জিতেছিল বাংলাদেশ।

এদিন আন্দ্রে রাসেলের তাণ্ডবে ম্যাচটা প্রায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের নিয়ন্ত্রণে চলে যাচ্ছিল। এইসময় বাংলাদেশের ত্রাণকর্তা হিসেবে আবির্ভুত হলেন কাটার মাস্টার মোস্তাফিজুর রহমান। মোস্তাফিজের একটি ফুলটস বল তুলে মারতে গিয়ে লং অফে আরিফুল হকের তালু-বন্দি হন রাসেল। তার আগে ২১ বলে ৪৭ রানের এক দুর্ধর্ষ ইনিংস খেলেন এই অল রাউন্ডার। এর আগের ওভারের তৃতীয় বলে আবু হায়দার রনির বলে আউট হয়ে ফিরে যান ক্যারিবিয় অধিনায়ক কার্লোস ব্র্যাথহোয়াইট (৫)। এদিকে রাসেলের বিদায়ের পরপরই বৃষ্টি নামে ফ্লোরিডার লডারহিলে।

এর আগে আগে ক্যারিবিয় ওপেনার আন্দ্রে ফ্লেচারকে আউট করে বাংলাদেশকে প্রথম উইকেট এনে দেন কাটার মাস্টার মোস্তাফিজুর রহমান। নিজের করা প্রথম ওভারের (ইনিংসের চতুর্থ ওভারে) পঞ্চম বলেই ফ্লেচারকে (৬) সাজঘরে ফেরত পাঠান তিনি। পরের ওভারের পঞ্চম বলে অন্য ওপেনার চাদউইক ওয়ালটনকে (১৯) আউট করেছেন সৌম্য সরকার। আর ষষ্ঠ ওভারের শেষ বলে মারলন স্যামুয়েলসকে বোল্ড করে ক্যারিবিয়ানদের তৃতীয় উইকেট তুলে নিলেন টাইগার অধিনায়ক সাকিব আল হাসান।

দিনেশ রামদিন ও রভম্যান পাওয়েলের জুটিতে ধীরে ধীরে ম্যাচে ফিরে আসছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দুইজনের জুটিতে ৩৩ বলে ৪৫ রান সংগ্রহ করে ক্যারিবিয়রা। তবে রামদিনকে আউট করে ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা এই জুটিকে ভাঙেন রুবেল হোসেন। আর ১৪তম ওভারের প্রথম বলে পাওয়েলকে (২৩) রনির তালু-বন্দি করেন মোস্তাফিজ।

বাংলাদেশের হয়ে ৩১ রানে ৩ উইকেট নিয়েছেন মোস্তাফিজ। এছাড়া আবু হায়দার রনি, রুবেল হোসেন, সৌম্য সরকার ও সাকিব আল হাসান একটি করে উইকেট নিয়েছেন।

এর আগে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ টি-টুয়েন্টিতে টসে জিতে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ। শুরুটা ভালোও হয়েছিল টাইগারদের। মাত্র ৪.৪ ওভারে দলকে ৬১ রান এনে দেন দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও লিটন দাস। তবে তামিমের ১৩ বলে ২১ রানের ঝড়ো ইনিংসটি থামিয়ে দেন কার্লোস ব্র্যাথহোয়াইট। এদিন ৩ নম্বরে নামেন সৌম্য সরকার। কিন্তু যথারীতি ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে মাঠ ছাড়েন তিনি। কেমো পলের বলে আউট হওয়ার আগে করেন ৫ রান। এরপর লিটন দাসের সাথে এসে যোগ দেন মুশফিকুর রহীম। কিন্তু তিনিও বিদায় নেন ব্যক্তিগত ১২ রানে।

মুশির বিদায়ের পর মাঠে নামে অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। অধিনায়ককে নিয়ে দলীয় শত রানের কোঠা পার করেন লিটন। তার আগে মাত্র ২৪ বলে টি-টুয়েন্টি ক্যারিয়ারের প্রথম হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন তিনি। তবে ব্যক্তিগত ৬১ রানে থেমে যায় তার বিস্ফোরক ইনিংসটি। অ্যাসলি নার্সে বলে আউট হয়ে সাজ ঘরে ফেরেন তিনি। ৩২ বল খেলে ৩টি ছক্কা ও ৬টি চারে সাজিয়েছেন তিনি নিজের ইনিংসটি।

এরপর সাকিবের সাথে এসে যোগ দেন মাহমুদউল্লাহ। দুইজনের জুটিতে ভালোভাবেই এগুচ্ছিল বাংলাদেশ। ৩১ বলে দলকে ৪৪ রান এনে দেন তারা। কিন্তু কেমো পলের বলে সাকিব আউট হলে ভেঙে যায় জুটিটি। দলীয় রান তখন ১৪৬, দলের পঞ্চম উইকেট হিসেবে আউট হওয়ার আগে সাকিব করেন ২৪ রান।

সাকিবের বিদায়ের পর আরিফুল হককে নিয়ে দলকে বড় রানের দিকে নিয়ে যান মাহমুদউল্লাহ। ২৫ বলে দুইজনের জুটিতে আসে ৩৮ রান। ২০ বলে অপরাজিত ৩২ রান করেন মাহমুদউল্লাহ। যেখানে ছিল একটি ছক্কা ও ৪টি চারের মার। অন্যদিকে আরিফুল হক ১৬ বলে করেছেন ১৮ রান।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে ২টি করে উইকেট নিয়েছেন ব্র্যাথহোয়াইট ও কেমো পল।