ক্রীড়া ডেস্ক:
সিরিজের শেষ ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ১৮৫ রানের লক্ষ্য দিয়েছে বাংলাদেশ। টস জিতে ব্যাট করতে নেমে ৫ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশের সংগ্রহ দাঁড়ায় ১৮৪। আগেরদিনই এই মাঠে বাংলাদেশ সংগ্রহ করেছিল ১৭১ রান।

ফ্লোরিডার লডারহিলে আগেরদিন ক্যারিবীয়দের হারিয়ে সিরিজে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল বাংলাদেশ। কোনো বিরতি না দিয়ে পরেরদিনিই সিরিজের শেষ ম্যাচ। একই সঙ্গে বাংলাদেশের সামনে বিরল এক সিরিজ জয়ের দারুণ সুযোগ। এই সুযোগটা কাজে লাগাতেই যেন মরিয়া টিম বাংলাদেশ। সে লক্ষ্যে টস জিতে শেষ ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ।

টস জিতে ব্যাট করতে নেমে তামিম ইকবাল এবং লিটন কুমার দাসের ব্যাটে উড়ন্ত সূচনা পায় টিম বাংলাদেশ। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি ইতিহাসে সবচেয়ে দ্রুততম ৫০ রানের মাইলফলকে পৌঁছেছে বাংলাদেশ। ২২ বলেই (৩.৪ ওভার) ৫০ রান পূরণ করে ফেলে টাইগাররা।

নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারালেও দারুণ সংগ্রহের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল বাংলাদেশ। তবে ১৭তম ওভারের খেলা চলার সময় হঠাৎই নামে বৃষ্টি। প্রায় আধা ঘণ্টা বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ থাকার পর আবার শুরু হয়। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৫ উইকেট হারিয়ে ১৮৪ রান। সর্বোচ্চ ৬১ রান করেন লিটন কুমার দান। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ করেন ৩২ রান। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এটাই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সংগ্রহ।

উড়ন্ত সূচনা হয় মূলতঃ লিটন দাসের ব্যাট থেকে। একপ্রান্তে তামিম ইকবাল শান্ত থাকলেও অন্য প্রান্তে সৌম্যর ব্যাট গর্জে ওঠে। যে কারণে দেখা গেলো দ্রুত রান তোলেন লিটন। ১০ বলেই ২৮ রান তুলে ফেলেন তিনি। ইনিংসের চতুর্থ ওভারেই আন্দ্রে রাসেলের কাছ থেকে ১৯ রান নেন তিনি এবং তামিম। একটি ছক্কার সঙ্গে বাউন্ডারি মারেন ৩টি। ওভারের চতুর্থ বলেই বাউন্ডারি মেরে বাংলাদেশকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ৫০ রানে পৌঁছে দেন তামিম ইকবাল।

তবে উড়ন্ত সূচনার পর হঠাৎ করেই ছন্দপতন। দ্রুত আউট হয়ে গেলেন তামিম ইকবাল, সৌম্য সরকার এবং মুশফিকুর রহীম। ইনিংসের ৫ম ওভারে ব্যক্তিগত ২১ রানে ফিরে যান তামিম ইকবাল। কার্লোস ব্র্যাথওয়েটের বলে স্কুপ করে শর্ট ফাইন লেগের ফিল্ডারের মাথার ওপর দিয়ে তুলে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ব্র্যাথওয়েটের বুদ্ধিদীপ্ত বোলিংয়ের সামনে ক্যাচ তুলে দেন তিনি। কেসরিক উইলিয়ামস সেই ক্যাচ ধরেন। ১৩ বলে ১৮ রান করেন তামিম।

ওয়ানডাউনে ব্যাট করতে নামেন সৌম্য সরকার। আগের ম্যাচের চেয়ে একধাপ ওপরে ব্যাট করতে পাঠানো হয় তাকে। কিন্তু ব্যাট করতে নামার পর প্রথম বলে বাউন্ডারি মারলেও কিমো পলের দ্বিতীয় ডেলিভারিটি যে স্লোয়ার সেটা বুঝতেই পারেননি সৌম্য। আগের ম্যাচের মতই বোলারের মাথার ওপর দিয়ে ছক্কা হাঁকাতে যান তিনি। সুতরাং, রোভম্যান পাওয়েলের হাতে ক্যাচে পরিণত হয়ে ফিরে যেতে হয় ৫ রান করেই।

এর মধ্যেই হাফ সেঞ্চুরি পূরণ করে ফেলেন লিটন দাস। ২৪ বলে আসে তার ক্যারিয়ারের প্রথম হাফ সেঞ্চুরি। ৫টি বাউন্ডারি এবং ৩ ছক্কায় পৌঁছে যান তিনি হাফ সেঞ্চুরির মাইলফলকে। টি-টোয়েন্টিতে এর আগে তার সর্বোচ্চ রান ছিল ৪৩।

মুশফিকুর রহীমও অফ ফর্মের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। তা তার ব্যাটিংয়ে সংগ্রাম করা দেখলেই বোঝা যায়। মুশফিক ১৪ বল টিকে ছিলেন। তবে কার্লোস ব্র্যাথওয়েটের বলে ব্যাটের কানায় খোঁচা লাগিয়ে ক্যাচ জমা দেন উইকেটের পেছনে দিনেশ রামদিনের হাতে।

দুর্দান্ত ব্যাটিং করছিলেন লিটন দাস। তবে ১১তম ওভারের ৫ম বলে এসে ক্যাচ তুলে দেন লিটন। কেসরিক উইলিয়ামসের স্লো ডেলিভারিকে বুঝতে না পেরে কভারের ওপর দিয়ে তুলে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ব্যাটে-বলে ঠিকমত না হওয়ার কারণে লং অফে ক্যাচ উঠে যায় এবং অ্যাশলে নার্স সেটিকে তালুবন্দী করে নেন।

এরপর সাকিব আর মাহমুদউল্লাহ মিলে গড়েন ৪৪ রানের জুটি। দুর্দান্ত ব্যাটিং করছিলেন সাকিব আল হাসান। তবে ২২ বলে ২৪ রান তোলার পর কিমো পলের এক স্লোয়ারে ধরা পড়েন সাকিব। স্কোয়ার লেগের ওপর স্লগ সুইপ খেলতে চেয়েছিলেন সাকিব; কিন্তু ক্যাচ উঠে যায় অ্যাশলে নার্সের হাতে। সাকিব আউট হয়ে যান দলীয় ১৪৬ রানের মাথায়।

এরপর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ আর আরিফুল হকের ব্যাটে ১৮৪ রান পর্যন্ত চলে যায় বাংলাদেশ। ২০ বলে ৪টি বাউন্ডারি আর ১ ছক্কায় ৩২ রান করেন মাহমুদউল্লাহ এবং ১৬ বলে ১৮ রান করেন আরিফুল হক। কার্লোস ব্র্যাথওয়েট এবং কিমো পল নেন ২টি করে উইকেট। কেসরিক উইলিয়ামস নেন ১ উইকেট।

আগের ম্যাচ জয়ী দলটিকে রাখা হবে নাকি শেষ ম্যাচে কোনো পরিবর্তন আনা হবে- এ নিয়ে বিস্তার চিন্তা-ভাবনা চলছিল। তবে শেষ পর্যন্ত কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। সৌম্য সরকারকে রেখেই একাদশ গঠন করা হয়। মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতকে আর কোনো সুযোগ দেয়া হয়নি।

তিন পেসার মোস্তাফিজুর রহমান, রুবেল হোসেন এবং আবু হায়দার রনিকে নিয়েই মাঠে নামে বাংলাদেশ। স্পিনার কোটায় স্পেশালিস্ট নাজমুল ইসলাম অপুকেই রাখা হয়েছে। এছাড়া অধিনায়ক সাকিব আল হাসান তো রয়েছেনই।