ডেস্ক নিউজ:
ব্যাটিংয়ে সাকিব-তামিম, বোলিংয়ে মোস্তাফিজ-অপু; এর সাথে দলের বাকিদের যোগ্য সহযোগিতায় সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১২ রানের জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। ফ্লোরিডায় সিরিজের শেষ ম্যাচে সিরিজ জয়ের লক্ষ্যে খেলতে নামবে দুই দল।

বাংলাদেশের করা ১৭১ রানের জবাবে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ১৫৯ রান করতে পেরেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বাংলাদেশের পক্ষে ব্যাট হাতে সর্বোচ্চ ৭৪ রান করেন তামিম ইকবাল। এছাড়া ৬০ রানের ইনিংস খেলেন সাকিব আল হাসান। বল হাতে তিনটি করে উইকেট নেন মোস্তাফিজুর রহমান ও নাজমুল ইসলাম অপু।

রান তাড়া করতে নেমে ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই উইন্ডিজ ওপেনার এভিন লুইসকে সাজঘরে ফেরত পাঠান মোস্তাফিজুর রহমান। রিভিউ নিয়েও নিজের উইকেট বাঁচাতে পারেননি উইন্ডিজ ওপেনার। ফিরে যান রানের খাতা খোলার আগেই।

প্রথম ম্যাচের মতোই এই ম্যাচেও তিন নম্বরে নেমে যান আক্রমণাত্মক ব্যাটসম্যান আন্দ্রে রাসেল। ব্যাটিংয়ে নেমেই শুরু করেন নিজের তাণ্ডবলীলা। তবে রাসেলের তাণ্ডব বেশিক্ষণ চলতে দেননি মোস্তাফিজ। ইনিংসের চতুর্থ ওভারে নিজের দ্বিতীয় ওভার করতে এসেই রাসেলকে সাজঘরের পথে দেখান তিনি। আউট হওয়ার আগে ১ চার ও ২ ছক্কার মারে ১০ বল থেকে ১৭ রান করেন রাসেল।

রাসেল ফিরে গেলে তার দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করেন মারলন স্যামুয়েলস। মোস্তাফিজের পরপর দুই বলে চার ও ছক্কা হাঁকান তিনি। তবে পরের ওভারেই টাইগার অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের বলে লংঅনে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান স্যামুয়েলসও। পঞ্চাশের আগেই ৩ উইকেট হারিয়ে বসে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের আশার প্রতীক হয়ে টিকে থাকেন আরেক ওপেনার আন্দ্রে ফ্লেচার।

ইনিংসের অষ্টম ওভারের প্রথম বলে আবারো ক্যারিবীয় শিবিরে আঘাত হানে বাংলাদেশ। এবার আক্রমণ হয় রুবেল হোসেনের হাত ধরে। ১১ বল খেলে মাত্র ৫ রান করে সাজঘরে ফেরেন দিনেশ রামদিন। আম্পায়ার প্রথমে নটআউট দিলেও রিভিউ নিয়ে তার উইকেট তুলে নেয় বাংলাদেশ।

পঞ্চম উইকেটে উইন্ডিজকে কক্ষে ফেরান আন্দ্রে ফ্লেচার ও মারমুখী অলরাউন্ডার রোভম্যান পাওয়েল। ৪৩ বলের জুটিতে ৫৮ রান যোগ করেন এই দুই ব্যাটসম্যান। ব্যক্তিগত ৩৫ রানের মাথায় জীবন পেয়ে ৪৩ রানের মাথায় সাজঘরে ফেরেন ফ্লেচার। তার উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের জয়ের আশা জাগিয়ে তোলেন নাজমুল ইসলাম অপু।

বেশি কিছু করতে পারেননি উইন্ডিজ অধিনায়ক কার্লোস ব্রেথওয়েট। টাইগার অধিনায়কের বোলিংয়ে লিটন দাশের দুর্দান্ত ক্যাচে পরিণত হয়ে মাত্র ১১ রানেই সাজঘরে ফিরে যান তিনি। ম্যাচ শেষ করার দায়িত্ব গিয়ে বর্তায় পাওয়েলের কাঁধে। তাকে সঙ্গ দিতে আসেন অফস্পিনিং অলরাউন্ডার অ্যাশলে।

সাকিব আল হাসান ১৭তম ওভার করতে এসে মাত্র ৩ রানের বিনিময়ে ব্রেথওয়েটের উইকেট তুলে নিলে উইন্ডিজের জয়ের জন্য বাকি থাকে ১৮ বলে ৩৯ রান। ১৭তম ওভারে মাত্র ৮ রান দেন রুবেল হোসেন। ওভারের শেষ বলে পাওয়েলের ক্যাচ ছেড়ে দেন সাকিব। দুই ওভারে প্রয়োজন থাকে ৩১ রান।

১৯তম ওভারে নিজের শেষ ওভারে করতে আসেন মোস্তাফিজ। ওভারের দ্বিতীয় বলে বাউন্ডারি মেরে সমীকরণ সহজ করেন পাওয়েল। তবে পরের বলেই উইকেটের পেছনে অসাধারণ ক্যাচ ধরে তাকে সাজঘরের পথ দেখান মুশফিকুর রহীম। ৩৪ বলে ৩ চার ও ২ ছক্কার মারে ৪৩ রান করে ফেরেন পাওয়েল। ওভারের পরের তিন বলে ১১ রান রান খরচ করে ফেলেন মোস্তাফিজ।

শেষ ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজের জয়ের জন্য প্রয়োজন থাকে ১৫ রান। বোলিংয়ে আসেন নাজমুল ইসলাম অপু। দুর্দান্ত বোলিং শেষ ওভারে মাত্র ২ রান খরচায় ২ উইকেট তুলে নিয়ে টাইগারদের ১২ রানের জয় নিশ্চিত করেন নাজমুল অপু।

এর আগে ব্যাট করতে নেমে ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই দলীয় ৭ রানের মাথায় উইকেট হারান ওপেনার লিটন দাস। ওয়ানডাউনে ব্যাট করতে নামেন মুশফিকুর রহীম। কিন্তু স্পিনার অ্যাশলে নার্সের বলে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দেন তিনি। আউট হয়ে যান ৪ রান করে।

চার নম্বরে ব্যাট করতে নামেন সৌম্য সরকার। ১৮ বল মোকাবেলা করে তিনি করেন মাত্র ১৪ রান। কিমো পলের বলে রোভম্যান পাওয়েলের হাতে ক্যাচ দিয়ে তিনি ফিরে যান।

৪৮ রানে দ্রুত ৩ উইকেট হারিয়ে যখন বিপর্যয়ের মুখে বাংলাদেশ, তখন টাইগারদের ত্রাতা হয়ে আবির্ভূত হন ড্যাশিং ওপেনার তামিম ইকবাল। অধিনায়ক সাকিব আল হাসানকে সঙ্গে নিয়ে দলের হাল টানতে থাকেন। শুধু তাই নয়, দলকে নিয়ে ক্যারিবীয়দের সামনে দারুণ এক চ্যালেঞ্জিং পর্যায়ে।

তারই ধারাবাহিকতায় ক্যারিয়ারের ৬ষ্ঠ হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন তামিম ইকবাল। ৩৫ বলে পূরণ করা তার এই হাফ সেঞ্চুরির ওপর ভর করে বাংলাদেশও এগিয়ে যেতে থাকে। তবে, ইনিংসের ১৬তম ওভারে আন্দ্রে রাসেলের ওপর চড়াও হন তামিম ইকবাল। রাসেলকে ৩টি ছক্কা এবং ১টি বাউন্ডারি মারেন তিনি। একাই নেন ২২ রান। ওভারের শেষ বলে ৪র্থ ছক্কা মারতে গিয়ে একেবারে বাউন্ডারি লাইনে কিমো পলের হাতে ধরা পড়েন তামিম।

আউট হওয়ার আগে ৪৪ বলে ৭৪ রানের জ্বলজ্বলে এক ইনিংস উপহার দিয়ে যান তিনি। যে ইনিংসটি সাজানো থাকলো ৪টি ছক্কা এবং ৬টি বাউন্ডারির সমারোহে।

তামিম আউট হয়ে যাওয়ার পর দলের ইনিংসকে টেনে নেয়ার দায়িত্ব পালন করেন সাকিব আল হাসান। ৩০ বলে হাফ সেঞ্চুরি পূরণ করেন তিনি। শেষ পর্যন্ত ইনিংসের ৩ বল বাকি থাকতে পরিবর্তিত ফিল্ডার চাডউইক ওয়ালটনের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান কিমো পলের বলে।

আউট হওয়ার আগে ৩৮ বলে ৯ বাউন্ডারি আর ১ ছক্কায় তিনি করেন ৬০ রান। ১৩ রানে মাহমুদউল্লাহ এবং আরিফুল হক অপরাজিত থাকেন ১ রানে। শেষ পর্যন্ত ৫ উইকেট হারিয়ে ১৭১ রান করে বাংলাদেশ। ক্যারিবীয় বোলার অ্যাশলে নার্স এবং কিমো পল নেন ২টি করে উইকেট। ১ উইকেট নেন আন্দ্রে রাসেল।